এন্ডারবি পুলকিত হয়ে বলল, নিশ্চয়ই করব, কিন্তু ব্যাপারটা কি বলুন তো?
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহক্রমে পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে সেই জেমস পিয়ার্সন আমার প্রণয়ী, ওর সঙ্গে আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।
ওঃ, চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এন্ডারবি বলল, তাহলে এই ব্যাপার
আজ্ঞে হ্যাঁ, এমিলি বলল, কিন্তু জিম যে এই খুন করেনি সে বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, আর তা প্রমাণ করব বলেই আমি এখানে ছুটে এসেছি, কিন্তু পুরুষ মানুষ পাশে না থাকলে কি এভোবড় কঠিন কাজ সফল করা সম্ভব? পুরুষ মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি সবই ভাল, মেয়েদের দিয়ে অতো ভালভাবে হয় না।
হ্যাঁ আমতা আমতা করে এন্ডারবি সাহস দিয়ে বলল, এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
জানেন, আজ সকাল থেকে আরও কত বড় বড় রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বললাম, সাহয্য চাইলাম কিন্তু দেখলাম তাদের কারোর ঘটেই সেই বস্তুটি নেই যার নাম উপস্থিত বুদ্ধি, সবাই কেমন যেন বোকা বোকা মুখ করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন আমার মুখের দিকে আর মাঝে মাঝে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এঁদের মধ্যে শুধু আপনাকেই বুদ্ধিমান বলে মনে হল, তাই
ভুল করছেন ম্যাডাম, আপনি আমার সম্পর্কে খামোকা বাড়িয়ে বলছেন, আমি নিজেকে অতোটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি না।
আমার একটা প্রস্তাব আছে, এমিলি বলল, আপনি আর আমি দুজনে মিলে একসঙ্গে যদি অংশীদারের মতো এই খুনের তদন্তটা বেসরকারী পর্যায়ে করতে পারি তাহলে আপনি আর আমি দুজনেরই লাভবান হবার সম্ভাবনা।
কিভাবে, এন্ডারবি প্রশ্ন করল। আমি যাকে পুলিশের খপ্পর থেকে বাঁচাতে চাইছি সেই জেমস পিয়ার্সন নির্দোষ প্রতিপন্ন হয়ে বেকসুর খালাস পাবে আর এই রহস্যের তদন্ত করতে গিয়ে যে গোপন খবর আমাদের হাতে আসবে সে সবই আপনি স্কুপ হিসাবে যোগান দিতে পারবেন আপনার কাগজে। বুঝতে পারছেন না, আমি এ ব্যাপারে পুরোপুরি আপনার ওপরেই নির্ভর করতে চাইছি।
মুখে একসঙ্গে কাজ করার লোভ দেখালেও আসলে এমিলি চাইছিল এন্ডারবি তার অধীনে থেকে এক ধরনের বেসরকারী গোয়েন্দার কাজ করুক। এন্ডারবি যে তার রূপে মজেছে এটা বুঝতে তার বেগ পেতে হয়নি তাই এমিলি প্রস্তাব দেবার সঙ্গে সঙ্গে তার তোষামোদও করছিল। এমিলির ভাগ্য ভাল। এন্ডারবি সহজেই তার টোপটা গিলে ফেলল।
সত্যিই আপনার জবাব নেই। দেঁতো হাসি হেসে এন্ডারবি বলল, যেদিক থেকেই দেখা যাক না কেন আপনার তুলনা হয় না। বেশ, এমিলি তোমার প্রস্তাবে আমি রাজী, এখন থেকে সর্বান্তকরণে আমি তোমার সঙ্গে সহযোগিতা করব।
এবার তাহলে বাজে কথা বাদ দিয়ে বলো তো কোন দিক থেকে এগোবো? এমিলি জানতে চাইল।
আমি আজ বিকেলে সিটাফোর্ড যাচ্ছি, এন্ডারবি জানাল, তুমিও আমার সঙ্গে চলো না।
সেখানে কি আছে শুনি।
আছেন একজন,এন্ডারবি বলল, তার নাম মেজর বারনাবি, ক্যাপটেন ট্রেভিলিয়নের বহুদিনের পুরোনো বন্ধু। উনি ভীষণ সেকেলে রুচির লোক, খবরের কাগজের রিপোর্টার দেখলেই চটে যান। অথচ এই লোকই হালে আমাদের কাগজের একটা ফুটবলের খাবার সঠিক উত্তর পাঠিয়ে নগদ পাঁচ হাজার পাউন্ড পুরষ্কার পেয়েছেন।
তাহলে আমি যাচ্ছি, এমিলি বলল, আমি কোথাও গেলে কখনও খালি হাতে ফিরে আসি না, কিছু না কিছু একটা ঠিকই জোগাড় করি।
থ্রি ক্রাউনস সরাইখানা থেকে বেরিয়ে পথ দেখিয়ে এমিলিকে পুরোনো দুর্গের কাছে নিয়ে এল এন্ডারবি, কিন্তু এমিলি দুর্গের ভেতরে ঢোকার কোনও আগ্রহ না দেখিয়ে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর খুনের তদন্ত সম্পর্কে আলোচনায় মেতে উঠল তার সঙ্গে।
আসুন, খাঁটি গোয়েন্দার চোখ দিয়ে আমরা গোটা পরিস্থিতিটা বিচার করে দেখি, বলেই পকেট থেকে নোটবই আর পেনসিল বের করল এমিলি। তার পাতায় পাতায় লেখা নামগুলোয় চোখ বুলিয়ে সে বলতে লাগল :
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃত্যু হলে যারা লাভবান হবে তাদের মধ্যে আছেন–(১) আমার ভদ্রলোক, (২) ওর বোন সিলভিয়া আর ওদের মাসী জেনিফার গার্ডনার যাঁর স্বামী যুদ্ধ থেকে পঙ্গু হয়ে ফিরেছেন। সিলভিয়াকে নির্দোষ হিসাবে ধরে নেওয়া যায়, জীবনে একটা মাছিও মারে নি সে। কিন্তু তার লেখক স্বামীটি খুব সুবিধার লোক নন, মদ আর মেয়েমানুষ সংক্রান্ত যতরকম নোংরামি আছে তার কোনটিতেই তার অরুচি নেই। টাকার পিছনে ও দিনরাত পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছে। সিলভিয়া ওর মামার টাকাটা পেলে মার্টিন ঠিক সেটা হাতিয়ে নেবে, তারপর ওকে কিছু না জানিয়ে সরে যাবে ওর জীবন থেকে।
ভদ্রলোক তো খুবই রূপবান, এন্ডারবি বলল, মেয়েরা তো ওকে পুজো করে শুনেছি।
ভুল শুনেছেন, এমিলি বলল, যাদের স্বামী থেকেও নেই, সেইসব সোসাইটি লেডীরা মার্টিনের পেছন পেছন কুকুরের মত ঘুরে বেড়ান, তার সঙ্গে দুরাত কাটাতে পেলে ধন্য হয়ে যান। কিন্তু যাঁরা খাঁটি মানুষ তারা ওকে অন্তর থেকে ঘৃণা করে।
হ্যাঁ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি হিসাবে মার্টিনের নামও লেখা যায়, এন্ডারবি নোট নিতে নিতে বলল, লেখকের ছদ্মবেশে এক শয়তান হলেও হতে পারে। আচ্ছা, তুমি কি মনে করো ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর আসল খুনী এই অপরাধের যাবতীয় দায় জেমসের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে?
তুমি আর আমি দুজনে মিলে যদি আসল খুনীকে খুঁজে বের করতে পারি তাহলে চারিদিকে দারুণ হৈ-চৈ পড়ে যাবে,এন্ডারবি বলল, আমি তখন হয়ে যাব ডেইলি অয়্যার কাগজের অপরাধ বিশেষজ্ঞ। কিন্তু এমিলি এসব ব্যাপার তো শুধু গল্প উপন্যাসেই ঘটে বলে জানি।