হাতে পায়েই শুধু বড় হয়েছে। শাসন করার সুরে এমিলি বলতে লাগল, অথচ ঘটে একছিটে বুদ্ধি যদি তোমার থাকতো জিম। উকিল সঙ্গে না থাকলে যে পুলিশ অফিসারদের প্রশ্নের জবাব দিতে নেই এই কথাটা আর কবে তুমি শিখবে, বলতে পারো? নিশ্চয়ই বোকার মতো এমন কিছু বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে যার জন্য উনি তোমায় থানায় নিয়ে যেতে চাইছেন। তুমি একটি আস্ত গদর্ভ। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আপনি ওকে গ্রেপ্তার করছেন কেন জানতে পারি?
সংক্ষেপে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বুঝিয়ে দিলেন যে মামার সঙ্গে দেখা করে সরাইয়ে ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরে জেমস খবর পায় যে তিনি খুন হয়েছেন, তারপর পুলিশের সঙ্গে দেখা না করে ফিরে আসে লন্ডনে। জেমস বলছে যে ঘাবড়ে গিয়েই সে পালিয়ে এসেছে, কিন্তু আইনের চোখে তার এই আচরণ সন্দেহজনক, তাই তাকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া আর কোনও পথ এই মুহূর্তে তার সামনে খোলা নেই।
বিশ্বাস করো এমিলি, আর্তনাদ করে উঠল জেমস পিয়ার্সন। এই জঘন্য আর নৃশংস কাজ আমি করিনি, বিশ্বাস করো।
নিশ্চয়ই ডার্লিং, এমিলি সায় দিয়ে বলল, আমি বিশ্বাস করছি যে এ খুন তুমি করোনি। আসলে মামাকে খুন করার হিম্মতই তোমার নেই।
হা ঈশ্বর। দুনিয়ায় বন্ধু বলতে আর কেউ আমার রইল না, যে আমার পাশে এসে দাঁড়াতে পারে! জেমস আবার বিলাপ করতে লাগল।
কে বলল নেই? এমিলি দুহাতে জেমসের গলা জড়িয়ে ধরে ফেলল, এই তো আমি আছি। ঘাবড়াও মাৎ, জেমস। আমার বাঁ হাতের এই অনামিকার দিকে একবার তাকাও
এই যে হীরের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে তা তোমারই দেওয়া উপহার জিম। আমি তোমার বিশ্বস্ত প্রণয়নী। এতটুকু না ঘাবড়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের সঙ্গে যাও, উনি যা বলেন তাই করো। বাকি সব কিছু আমার ওপর ছেড়ে দাও, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এও জেনে রেখো, তুমি যে একাধারে আস্ত গর্ধভ ও ভীতুর ডিম তা জানতে ওঁর বাকি নেই।
আপনার নামটা কি? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এমিলিকে প্রশ্ন করলেন।
এমিলি ট্রেফুসিস, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
গুড ইভিনিং, মিস ট্রেফুসিস। বলেই ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জেমসকে নিয়ে দরজার দিকে এগোলেন।
অ রিবোয়ার ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, নিখুঁত ফরাসীতে পাল্টা বিদায় জানাল এমিলি। জেমসের মুখে আর কথা যোগালো না, পাশ থেকে টুপিটা তুলে মাথায় চাপিয়ে সে এমন ভয়ে ভয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের পেছন পেছন যেতে লাগল যেন তাকে ফাঁসী দেবার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। থানায় যাবার আগে প্রেমিকার কাছ থেকে বিদায় নেবার কথাও ভয়ের চোটে ভুলে গেল জেমস পিয়ার্সন।
.
১১.
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহক্রমে পুলিশ তার এক ভাগ্নেকে গ্রেপ্তার করেছে এই খবর সোমবারের মধ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল গোটা এক্সহ্যাম্পটনে। গোড়ায় স্থানীয় খবরের কাগজগুলোয় যে ঘটনাটি পেছনের পাতায় মাত্র তিন চার লাইনে ছেপে প্রকাশ করেছিল, জেমস পিয়ার্সন গ্রেপ্তার হবার পরে তারাই নেমে পড়ল সত্য উদ্ঘাটনে, প্রথম পাতায় তারাই এই খবরকে যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে ছাপতে শুরু করল। কে কত জোরালো সত্য কাহিনী লিখতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হল ওইসব কাগজের স্থানীয় রিপোর্টারদের মধ্যে। তবে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের রহস্য উদঘাটনের গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো যেহেতু চার্লস এন্ডারবিই সবার আগে যোগাড় করেছিল তাই অন্য কোনও খবরের কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার তার চাইতে ভাল কভারেজ দিতে পারছিল না।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের নাড়ীনক্ষত্র সবকিছুরই হদিশ যে মেজর বারনাবি রাখেন এটা সে জানতে পেরেছে আর বারনাবির ফটো ভোলা আর সাক্ষাৎকার নেবার ছুতোয় সে জোঁকের মতো সেঁটে আছে সবসময় তার সঙ্গে সঙ্গে।
দুপুরবেলা নিজের পয়সা খরচ করে মেজর বারনাবিকে লাঞ্চ খাওয়াল এন্ডারবি আর কিছুক্ষণ বাদেই ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা। মেজর বারনাবি লাঞ্চ খেয়ে বিদায় নেবার পরে থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ে ঢোকবার সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়েছিল এন্ডারবি, আশে পাশে জমে থাকা তুষার গলতে শুরু করেছে তার ওপর ঠিকরে এসে পড়েছে সূর্যের উজ্জ্বল কিরণ, দুচোখ মেলে সেই দৃশ্য উপভোগ করছিল সে, এমন সময় এক অচেনা নারীকণ্ঠ তার কানে এল, মাপ করবেন–বলতে পারেন এই এক্সহ্যাম্পটনে দেখার মতো কি কি আছে?
মুখ ফিরিয়ে তাকাতেই এন্ডারবির চক্ষুস্থির। আঁটো ট্রাউজার্স আর জ্যাকেট চাপানো কাঁধে ঝোলাব্যাগ এমন এক রূপসী-যুবতীর সঙ্গে তার দৃষ্টি বিনিময় হল যার রূপের বর্ণনা তার মতো ঝানু রিপোর্টারের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়। মনে মনে আক্ষেপ করল এন্ডারবি, এই সুন্দরী যদি আমার প্রেমিকা হতো। মুখে বলল, একটা পুরোনো আমলের দূর্গ আছে, এন্ডারবি বলল, যদিও তাকে তেমন কোনও দ্রষ্টব্য কোনমতেই বলা যায় না। আপনি চাইলে আমি আপনাকে পথ দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যেতে পারি।
আপনাকে গাইড হিসাবে পেলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব, যুবতী বলল, আপনিই তো সাংবাদিক মিঃ এন্ডারবি, তাই না?
হ্যাঁ, অবাক হয়ে এন্ডারবি প্রশ্ন করল, কিন্তু আমার পরিচয় আপনি জানলেন কি করে?
এই সরাইয়ের মালিক মিসেস বেলিং বলেছেন, যুবতী বলল, আমার নাম এমিলি ট্রেফুসিস। মিঃ এন্ডারবি আপনার সাহায্য আমার খুব দরকার।