তা দুপুর একটা তো বটেই, জেমস পিয়ার্সন বলতে লাগল, এরপর আমি থ্রি ক্রাউনস নামে একটা সরাইয়ে উঠলাম, সেখানে লাঞ্চ খেয়ে মামার কাছে যাব বলে রওনা হলাম।
কটা নাগাদ। মনে আছে?
দুঃখিত, তা ঠিক মনে করতে পারছি না।
তিনটে? চারটে? সাড়ে চারটে?
ওই ওইরকমই হবে, আমতা আমতা করে জেমস জবাব দিল, তবে তার পরে নয়।
সরাইয়ের মালিক মিসেস বেলিং জানিয়েছেন, আপনি সাড়ে চারটে নাগাদ রওনা হয়েছিলেন। যাক, তারপর কি হল?
তুষার ঢাকা পথ মাড়িয়ে একসময় মামা হ্যাজেলমুর নামে যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন সেখানে পৌঁছোলাম, ওঁর সঙ্গে কথাবার্তা সেরে আবার সরাইয়ে ফিরে এলাম।
বেশ, এবার বলুন তো মিঃ পিয়ার্সন, মামার বাড়িতে পৌঁছোনোর পরে আপনি ভেতরে ঢুকলেন কিভাবে?
কেন? আমি নিচে কলিংবেল বাজালাম, তার কিছুক্ষণ পরে মামা নিজেই সদর দরজা খুলে দিলেন।
আপনাকে ওই সময়ে দেখে তিনি নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়েছিলেন, তাই না?
ঠিক ধরেছেন, মামা আমায় দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন।
তা ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে অর্থাৎ আপনার মামার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে গিয়ে কতটা সময় সেখানে কাটিয়েছিলেন মিঃ পিয়ার্সন?
তা পনেরো কুড়ি মিনিট তো বটেই, জেমস আবার আমতা আমতা করে বলল, কিন্তু বিশ্বাস করুন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আমি চলে আসার সময় মামা দিব্যি সুস্থ্য শরীরে জীবিত ছিলেন, এ আমি শপথ করে বলছি।
আপনি যখন ওঁর কাছ থেকে বিদায় নিলেন তখন কটা বেজেছিল।
দুঃখিত, দুচোখ নামিয়ে জেমস জবাব দিল, তা আমার ঠিক মনে নেই।
সত্য গোপন করা যে গুরুতর অপরাধ তা নিশ্চয়ই জানেন মিঃ পিয়ার্সন? পুলিশী ধাঁচে কড়া গলায় ধমকের সুরে বলে উঠলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, কটা নাগাদ আপনি আপনার মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তা আপনার ঠিকই মনে আছে। ভাল চান তো সময়টা বলে ফেলুন।
তখন বিকেল সওয়া পাঁচটা বেজেছিল,ভীত গলায় জবাব দিল জেমস।
আবার মিথ্যে বললেন, একইরকম কড়া গলায় বললেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আপনি বিকেল পৌনে ছটা নাগাদ থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ে ফিরে এসেছিলেন। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়ি থেকে হাঁটা পথে ওখানে পৌঁছোতে যে কোন সুস্থদেহী মানুষের সাত, বড়জোর আট মিনিটের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তার মানে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে মামার কাছ থেকে আপনি যখন বিদায় নিয়েছিলেন তখন ঘড়িতে পাঁচটা সাঁইত্রিশ কি আটত্রিশ বেজেছিল।
সোজাপথে তো সরাইয়ে ফিরে যাই নি, জেমস বলল, আমি একটু ঘুরপথে বেড়াতে বেড়াতে ফিরে এসেছিলাম, শহরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে।
ওই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর তুষারপাতের মধ্যে হেঁটে বেড়ানোর সাধ আপনার হল কি করে? যাক, মামার সঙ্গে কথাবার্তা কি হয়েছিল তাই বলুন।
তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয় নিয়ে ওঁর সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়নি। জেমস বলল, মামা কেমন আছেন, ওঁর দিন কেমন কাটছে এইসব খোঁজখবর নিলাম, উনিও জানতে চাইলেন আমরা কে কেমন আছি, এইসব।
তোমার মতো পাকা মিথ্যেবাদী গোয়েন্দার জীবনে আমি খুব কমই দেখেছি, মনে মনে তার উদ্দেশ্যে বললেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, মুখে বললেন, তা জেমস, এবার আমার একটা সিধে সরল প্রশ্নের জবাব দিন। মামা খুন হয়েছেন জেনেও থানায় গিয়ে খোঁজখবর না নিয়ে আপনি গতকাল এক্সহ্যাম্পটন ছেড়ে লন্ডনে ফিরে এলেন কেন? কতবড় অন্যায় আপনি করেছেন তা বুঝতে পারছেন?
হয়তো অন্যায় করেছি। মুখ তুলে জেমস অকপটে জানাল, কিন্তু বিশ্বাস করুন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আমি আসলে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। জানতে পেরেছিলাম আমি দেখা করে চলে আসার কিছুক্ষণ বাদেই মামা খুন হন। এবার আপনিই বলুন, আমার পক্ষে ভয় পেয়ে এইভাবে চলে আসাটা কি খুব অস্বাভাবিক ছিল? খবর পেয়েই আমি জিনিসপত্র সব গুছিয়ে নিই। তারপর স্টেশনে পৌঁছে পরের ট্রেন ধরে ফিরে আসি লন্ডনে। আমি যা করেছি তা পুরোপুরি বোকামি কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমার পক্ষে আর কিই বা করণীয় ছিল বলতে পারেন?
এইটুকুই আপনার বক্তব্য হিসাবে ধরে নিতে পারি তাহলে?
হাঁ, অবশ্যই।
তাহলে, মিঃ পিয়ার্সন, আপনাকে এখনই একবার আমার সঙ্গে স্থানীয় থানায় আসতে হবে, যেখানে আপনার এই বক্তব্য স্বীকারোক্তি আকারে আমি লিখে নেব, তারপর তাতে আপনাকে দিয়ে সই করিয়ে নেব।
ব্যাস, শুধু ওইটুকু?
না, আরও আছে, গম্ভীর গলায় ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, তারপরেই আপনি ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারবেন তা ভাবনে না। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে থানার হাজতে আটকে রাখব।
হা ঈশ্বর! জেমস পিয়ার্সন বিলাপ করে উঠল, আমায় এই বিপদ থেকে রক্ষা করার মতো কেউ কি এখানে নেই?
ঠিক সেইমুহূর্তে ড্রইংরুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল এক যুবতী। শুধু অপরূপ সুন্দরী বললে সেই যুবতীর রূপ বর্ণনা করা যায় না। তার চোখেমুখে জড়িয়ে রয়েছে এমনই এক অপার করুণার উৎস যা বহু চেষ্টা করা সত্ত্বেও ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। প্রথম দর্শনে যে কেউ তাকে এক মহীয়সী পরিত্রাতা বলে মনে করতে পারে।
কি ব্যাপার জিম? যুবতী জেমসকে প্রশ্ন করল, তোমায় এতো নার্ভাস দেখাচ্ছে কেন, কি হয়েছে?
সব শেষ হয়ে গেছে, এমিলি, জেমস ভাঙ্গা গলায় জানাল, ইনি গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, উনি সন্দেহ করছেন যে মামাকে আমিই খুন করেছি, তাই এখন আমায় গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যেতে চাইছেন, বলছেন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত থানার হাজতে আমায় আটকে রাখবেন।