আপনাকে কোনওভাবে সাহায্য করতে পারলে আমি সত্যিই খুশি হতাম, কিন্তু মুশকিল হল জোসেফ মামার সঙ্গে আমার খুব মেলামেশা কোনদিনই ছিল না। আসলে উনি লোক খুব সুবিধার ছিলেন না, অন্যের নিন্দা আর সমালোচনা সবসময়েই ওঁর মুখে লেগেই থাকতো। এছাড়া সত্যিই, শিল্প, সঙ্গীত, চারুকলা, এইসব সূক্ষ্ম বিষয়ের ধারে কাছে উনি কখনও হাঁটেননি জীবনে। টাকা ছাড়া জীবনে মামা আর কিছুই চিনতেন না, কিন্তু টাকাই জীবনে তো সব নয়।
খবরটা আপনি খুব তাড়াতাড়িই পেয়েছেন দেখছি, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন।
হ্যাঁ সিলভিয়া ঘাড় নেড়ে বলল।
মামার সঙ্গে আপনার বহুদিন দেখা হয়নি, তাই না, মিসেস ডেরিং? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
ঠিক ধরেছেন, সিলভিয়া জবাব দিলেন। বিয়ের পরে এ পর্যন্ত মামার সঙ্গে মাত্র দুবার আমার দেখা হয়েছে। শেষ যেবার গিয়েছিলাম ওঁর কাছে সেবার মার্টিন অর্থাৎ আমার স্বামীর সঙ্গে মামা খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। আমার স্বামীর সঙ্গে মামা সেবার যে ব্যবহার করেছিলেন এককথায় অসভ্যতা ছাড়া তাকে আর কিছু বলা চলে না।
অর্থাৎ তোমার স্বামী তোমার মামার কাছে যেবার কিছু টাকা ধার চেয়েছিলেন আর তিনি যে ধার দেননি তাই তোমার এতো রাগ, মনে মনে সিলভিয়ার উদ্দেশ্যে মন্তব্যটা করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
এবার নিয়মমাফিক একটা প্রশ্ন আপনাকে করছি, মিসেস ডেরিং, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, গতকাল বিকেলে আপনি কোথায় ছিলেন, কিভাবে সময় কাটিয়েছেন এসব জানা একান্ত দরকার।
আমার গতিবিধির সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে চান, এই তো? হেসে সিলভিয়া জবাব দিল গতকাল প্রায় পুরো বিকেলটাই আমি ব্রীজ খেলে সময় কাটিয়েছি। পরে আমার এক বান্ধবী এসেছিল। তার সঙ্গেই গল্প করে সন্ধ্যেটুকু কাটিয়েছি, আমার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না।
আপনার পরের ভাই ব্রায়ান তো অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন, তাই না মিসেস ডেরিং?
হ্যাঁ,
ওর ঠিকানাটা আমায় যদি দেন–
দেখুন, পুরো ঠিকানাটা এই মুহূর্তে আমার কাছে নেই, তবে ও যে জায়গায় থাকে তার নাম নিউ সাউথ ওয়েলস, শুধু এইটুকু মনে আছে।
ধন্যবাদ, মিসেস ডেরিং তদন্তের কাজে সহযোগিতা করার জন্য পুলিশের তরফ থেকে আপনাকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাচ্ছি, গুডনাইট।
উইম্বলডন থেকে আবার যখন ক্রমওয়েল স্ট্রীটে এসে হাজির হলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট তখন সন্ধ্যে সাতটা, সিলভিয়ার বড় ভাই জেমস তার অল্প কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে ফিরেছে। জেমস পিয়ার্সন একাধারে সুদর্শন ও সুস্থাস্থ্যের অধিকারী, শুধু দোষের মধ্যে তার একটি চোখ ট্যারা। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট লক্ষ্য করলেন তার দুচোখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। দুচোখের নীচে কালি পড়েছে তাও তার নজর এড়াল না।
আমি ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আপনার খুনের তদন্তের দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আপনার কি কিছু বক্তব্য আছে?
ইন্সপেক্টর ন্যরাকটের কথা শুনে সোফা থেকে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল জেমস, ভীত কণ্ঠে প্রশ্ন করল, আপনি কি আমাকে গ্রেফতার করতে এসেছেন?
ভুল করছেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট হেসে বললেন, আমি শুধু জানতে চাই গতকাল বিকেলে আপনি কোথায় ছিলেন, কি করছিলেন। আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া না দেওয়া আপনার ইচ্ছে।
উত্তর না দিলে তো সেটা আমার পক্ষে যাবে না, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, জেমস পিয়ার্সন বলল, বুঝতে পেরেছি, আমি যে গতকাল ওখানে গিয়েছিলাম সেটা আপনি খুঁজে বের করেছেন।
আপনি নিজেই হোটেলের রেজিস্ট্রারে আপনার নাম মোটা মোটা হরফে সই করেছেন, মিঃ পিয়ার্সন।
নিশ্চয়ই, এটা অস্বীকার করার মতো ব্যাপার নয়, জেমস বলল, হ্যাঁ, আমি ওখানে গিয়েছিলাম, আর যাবই না কেন?
সে তো বটেই, কিন্তু কেন গিয়েছিলেন জানতে পারি?
আমি আমার মামাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
আপনি যে ওঁকে দেখতে যাচ্ছেন তা আগে থেকে ঠিক ছিল?
তার মানে? জেমস চাপা উত্তেজিত সুরে প্রশ্ন করল, আপনি কি বলতে চাইছেন?
আপনি যে ওখানে যাচ্ছেন তা কি আপনার মামা ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান আগে থেকে জানতে পেরেছিলেন?
না, জানতেন না, হঠাৎ মামাকে দেখার ইচ্ছে হল তাই চলে গেলাম।
বাঃ চমৎকার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মুচকি হেসে বললেন, তা ওখানে পৌঁছোনোর পরে কি হল, মামার সঙ্গে আপনার আদৌ দেখা হয়েছিল কি?
হ্যাঁ, কয়েক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে জেমস পিয়ার্সন জবাব দিল, হ্যাঁ, মামার সঙ্গে গতকাল আমার ঠিকই দেখা হয়েছিল। শুনুন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, ট্রেন থেকে স্টেশনে নেমে আমি জানতে চেয়েছিলাম। কিভাবে কোন পথে গেলে তাড়াতাড়ি সিটাফোর্ডে পৌঁছোতে পারব। স্টেশনের কর্মচারীরা বলল যে প্রচণ্ড তুষারপাত হবার দরুন পথঘাট সব বন্ধ তাই গাড়িঘোড়াও চলছে না, অতএব সিটাফোর্ডে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। অথচ মামার সঙ্গে দেখা করাটা ছিল খুবই জরুরী।
জরুরী? হঠাৎ প্রশ্ন করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
হ্যাঁ, মামার নাম শোনার পরে স্টেশনের এক পোর্টার জানাল যে সে তাকে ভালভাবেই চেনে এবং তিনি যেখানে থাকেন সে জায়গাটার আসল নাম হল এক্সহ্যাম্পটন। ওই পোর্টারই আমায় বলে দিল হাঁটাপথে কিভাবে এগোলে আমি অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে পৌঁছোতে পারব।
তখন কটা বেজেছিল মনে আছে?