আচ্ছা, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন, আপনার পেশেন্ট ক্যাপ্টেন গার্ডনারের অসুখটা কি খুব জটিল
হ্যাঁ, তা বলতে পারেন, নার্স গম্ভীর গলায় বললেন, বাইরে থেকে দেখে কিছু বোঝ যায় না বটে কিন্তু গোলার আঘাতে ওঁর মস্তিষ্কের স্নায়ুকেন্দ্র এমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যে উনি দেহের কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর নাড়াতে পারেন না, উপযুক্ত চিকিৎসা হয়নি তাই ভবিষ্যতে সুস্থ হয়ে উঠবেন সে সম্ভাবনাও নেই।
আচ্ছা, গতকাল বিকেলে ক্যাপ্টেন গার্ডনার কি কোনও মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন অথবা উত্তেজিত হয়েছিলেন?
কই, নার্স অবাক সুরে বলল, তেমন কিছু ঘটেছে বলে তো শুনিনি।
গতকাল পুরো বিকেলটাই কি আপনি ওঁর কাছে ছিলেন?
না, নার্স একটু ভেবে নিয়ে বলল, ক্যাপ্টেন গার্ডনারের দুটো বই পাল্টে আনার জন্য একবার লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। এ কাজটা সাধারণতঃ ওঁর স্ত্রী নিজেই করেন কিন্তু গতকাল ওঁর স্ত্রী আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাই ক্যাপ্টেন আমাকেই লাইব্রেরীতে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। ফেরার সময় ওঁর অনুরোধমতো মিসেস গার্ডনারের জন্য কয়েকটা ছোট উপহারও কিনেছিলাম। কাপ্টেন বলে দিয়েছিলেন ফেরার পথে আমি যেন রেস্তোরাঁয় বিকেলের চা, জলখাবার খেয়ে নিই আর সেই খরচও উনি বেরোবার সময় আমায় দিয়েছিলেন। আমি গতকাল বিকেলে যখন বেরোই তখন চারটে বেজে গেছে, সন্ধ্যে ছটার পর বাড়ি ফিরেছিলাম। ফিরে এসে শুনলাম আমি যতক্ষণ বাইরে ছিলাম সেই সময়টা ক্যাপ্টেন গার্ডনার দিব্যি ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন।
বাড়ি ফিরে এসে মিসেস গার্ডনারকে দেখতে পেয়েছিলেন? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন।
হ্যাঁ, উনি আমার আসার আগেই ফিরে এসেছিলেন, নার্স বলল, শুনলাম মাথা ধরেছে বলে উনি শুয়ে আছেন।
মিসেস গার্ডনার ওঁর স্বামী ক্যাপ্টেন গার্ডনারকে খুব ভালবাসেন। তাই না?
স্বামী স্ত্রীর পরস্পরকে ভালবাসা এমন কিছু নতুন নয়। নার্স বলল, তেমন ভালবাসা অনেক দেখেছি। কিন্তু মিসেস গার্ডনারের বাপার পুরো আলাদা। উনি ওঁর স্বামীকে এককথায় পুজো করেন, ওঁর জন্য এমন কোনও কাজ নেই যা উনি করতে পারেন না। স্বামীকে এমনভাবে ভালবাসতে আমি আগে কখনও কোনও স্ত্রীকে দেখিনি। এই ভালবাসার তুলনা হয় না। এই তো গতমাসে
মাপ করবেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, এবার আমায় রওনা দিতে হবে নয়তো ট্রেন ধরতে পারব না।
১০. ট্রেন পাছে ফস্কে যায়
১০.
ট্রেন পাছে ফস্কে যায় এই ভেবে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট একরকম দৌড়েই বেরিয়ে এলেন মিসেস গার্ডনারের বাড়ি থেকে, যাবার আগে ভদ্রতার খাতিরে তাঁর কাছ থেকে বিদায় নেবার সময়টুকু পর্যন্ত পেলেন না তিনি। ঈশ্বর সহায় ছিলেন তাই সময়মতো স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনটা পেয়ে গেলেন তিনি।
নির্দিষ্ট স্টেশনে নেমে প্রথমেই গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে এসে হাজির হলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, যেখানে ওপরওয়ালা পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে দেখা করে প্রাথমিক তদন্তের ফলাফল জানালেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশও নিলেন তার কাছ থেকে। কিছুক্ষণ বাদে ওপরওয়ালার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার স্টেশনে এসে হাজির হলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, দুপুর পৌনে দুটোর ট্রেন ধরে সোজা এসে পৌঁছোলন লন্ডনে।
লন্ডন স্টেশন থেকে ক্রমওয়েল স্ট্রীট খুব বেশিদুরে নয়, যেখানে পৌঁছে একুশ নম্বর বাড়িটি খুঁজে বের করতে বেগ পেতে হল না তাকে। মিসেস গার্ডনারের বড় বোনপো জেমস পিয়ার্সনের খোঁজ নিলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, বাড়ির পরিচারিকা উত্তরে জানাল যে জেমস সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ অফিস থেকে ফিরবে।
জেমসের অফিসে না গিয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এবার চলে এলেন উইম্বলডনে তার বোন সিলভিয়ার বাড়িতে। সিলভিয়ার বাড়িটা নতুন, বেশ ছিমছাম আর সাজানো গোছানো। কলিংবেল টিপতেই অল্পবয়সী এক পরিচারিকা দরজা খুলে এসে দাঁড়াল, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, তার হাতে ভিজিটিং কার্ড তুলে দিয়ে বললেন যে গৃহকর্ত্রী মিসেস সিলভিয়া ডেরিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান।
পরিচারিকাটি ইন্সপেক্টর ন্যারাকটকে নিয়ে গিয়ে একতলার ড্রইংরুমে বসাল, আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সিলভিয়া ডেরিং ওপর পর থেকে নেমে এল, মুখোমুখি একটা সোফায় বসে নিজে থেকেই বলে উঠল।
আপনি নিশ্চয়ই জোসেফ মামার খুনের ব্যাপারে তদন্ত করতে এসেছেন। সত্যিই এ অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বললে বিশ্বাস করবেন না, মামা খুন হবার পর আমি নিজেও সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি, কখন কি হয় ভেবে। দিনকাল যা পড়েছে, কখন জানালা ভেঙ্গে চোর ডাকাত বাড়িতে ঢুকবে তা কে বলতে পারে। এই তো দেখুন না গত হপ্তায় বাড়ির সবকটা জানালা আর দরজায় মজবুত কবজা আর ছিটকিনি লাগিয়েছি, অনেকগুলো টাকা তাতে খরচ হয়েছে।
সিলভিয়া ডেরিংয়ের বয়স পঁচিশ ছাব্বিশের বেশি নয়, কিন্তু তার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট, যে কারণে প্রথমে দেখলে যে কেউ ধরে নেবে তার বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে বহু আগেই। সিলভিয়ার গড়ন বেঁটেখাটো, দেহের চামড়ায় রক্তাল্পতার ছাপ ফুটে উঠেছে। গলার সুরে কথা বলার ঢংয়ে সবসময় প্যানপ্যানে নাকি কান্নার ভাব। এই ধাঁচের মেয়েরা সবসময় নিজের কথা বলে, অন্যের অভাব অভিযোগ শোনার কোনো আগ্রহই এদের মধ্যে দেখা যায় না। ইন্সপেক্টর ন্যারাকটকে কথা বলার কোনও সুযোগ না দিয়ে সিলভিয়া আপনমনে বলে চলে।