-বাঃ চমৎকার! ভায়োলেট মন্তব্য করল, বইগুলো কি ধরনের?
তা ঠিক জানি না, বারনাবি বললেন, এখনও পাতা উল্টে দেখিনি, তবে মনে হচ্ছে ভীষণ বাজে আর বদখত বিষয় নিয়ে লেখা হবে।
–মেজর, ভায়োলেট আবার আপনার বন্ধুকে দেখতে এক্সহ্যাম্পটনে কিভাবে যান? আপনার তো গাড়ি নেই?
–কেন হেঁটে! মেজর বললেন।
হেঁটে! ভায়োলেট বিস্ময়সূচক শব্দ উচ্চারণ করল, হেঁটে ছয় ছয় মোট বারো মাইল পথ আসা-যাওয়া করেন আপনি?
–তাতে কি হয়েছে? বারনাবি বললেন, হাঁটার মতো সোজা ব্যায়াম খুব কমই আছে, যত বেশি হাঁটা যায় শরীর তত সুস্থ থাকে।
-ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মুখ থেকে শুনেছি যে আপনারা দুজনেই খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলেন।
কথাটা ভুল বলেননি উনি, মেজর বারনাবি বললেন, আমরা গরমের সময় দুজনে আল্পস পাহাড়ের চূড়ায় উঠতাম, শীতে স্কি করতাম। কিন্তু এখন দুজনেই বুড়ো হয়েছি তাই হাঁটা ছাড়া আর কোনো ব্যায়াম বা খেলাধূলা করা সম্ভব নয়।
কথা শেষ করে মেজর বারনাবি জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললেন, আজকেও প্রচুর তুষারপাত হবে বলে মনে হচ্ছে।
কি মজা; আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলেন ভায়োলেট, আসলে আমি তো দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এতদিন থেকেছি, তাই তুষারপাত আমার কাছে খুব রোমান্টিক ব্যাপার!
বোকার মতো কথা বলো না ভায়োলেট, মিসেস উইলেট ধমকের সুরে বললেন, ঠাণ্ডায় পাইপের ভেতরের জল জমে যখন বরফ হয়ে যাবে তখন আর ব্যাপারটা রোমান্টিক থাকবে না।
পরমুহূর্তেই দরজা ঠেলে পরিচারিকা ভেতরে ঢুকে মিসেস উইলেটের কাছে এসে বলল, ম্যাডাম, মিঃ রাইক্রফট আর মিঃ গারফিল্ড দুজনেই এসেছেন। পরিচারিকার কথা শেষ হতে না হতেই দুজনেই ড্রইংরুমে এসে ঢুকলেন একজন মাঝবয়সি অন্যজন যুবক। ড্রইংরুমে ঢুকেই দুজনে সোজা ফায়ারপ্লেসের গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন নিজেদের শরীর চাঙ্গা করে নিতে।
যুবক মিঃ গারফিল্ড বললেন, পথে আসার সময় মিঃ রাইক্রফটকে দেখলাম পথের মাঝখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন। দেখেই ভয়ে আঁতকে উঠলাম, ভাবলাম প্রচণ্ড তুষারপাতে পথে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে তুষার চাপা পড়ে মারা যাবেন নির্ঘাত, তাই সঙ্গে করে নিয়ে এলাম।’ কথাটা বলতে বলতেই তিনি এগিয়ে এসে ভায়োলেটের সঙ্গে করমর্দন করলেন।
যুবক মিঃ গারফিল্ডকে ভায়োলেটের সমবয়সি বলা চলে, তাকে দেখে একটু বেশি পুলকিতই হয়ে উঠল ভায়োলেট।
-আচ্ছা, আমরা কি কোথাও তুষারের ওপর একটু স্কেটিং করতে পারি না? গারিফল্ড জানতে চাইল।
স্কেটিং দিয়ে কী হবে? ভায়োলেট উত্তর দিল, তার চাইতে বরং চলুন রাস্তার জমে থাকা তুষার সাফ করি, তাতে অনেক মজা আছে।
সে তো আজ সকাল থেকেই করছি। গারফিল্ড বলল, এই দেখোনা আমার দুহাতে ফোস্কা পড়ে গেছে। বলেই নিজের দুহাত ভায়ালোটের দিকে বাড়িয়ে দিল।
মিঃ ডিউক এসেছেন। ড্রইংরুমের দরজা খুলে পরিচারিকা ভেতরে ঢুকে ঘোষণা করল।
স্টিফোর্ড হাউসের ছটা বাংলোর মধ্যে সবশেষ যেটা খালি পড়েছিল গত সেপ্টেম্বর মাসে সেটা কিনেছেন মিঃ ডিউক। দশাসই চেহারার মানুষ মিঃ ডিউক খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ দিনরাত শুধু নিজের বাগান নিয়ে পড়ে থাকেন তিনি। পরিচারিকা ঘর থেকে যেতে না যেতেই মিঃ ডিউক ভেতরে ঢুকে মেজর বারনাবির উদ্দেশ্যে বলেলন
মেজর, আজকের এই বিশ্রী আবহাওয়ায় আপনি কি পায়ে হেঁটে এক্সহ্যাম্পটনে বন্ধুর বাড়িতে যাবেন?
-না, মেজর জবাব দিলেন।
–বন্ধু ট্রেভিলিয়ান আমার জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করবেন।
–সত্যিই ভারি বিশ্রী আবহাওয়া, তাই না মিঃ ডিউক।
মিসেস উইলেট বলে উঠলেন, প্রত্যেক বছর তুষারপাতের সময় ঘরে বন্দি হয়ে থাকা যে কি জঘন্য ব্যাপার, বলে বোঝানো যাবে না।
মিঃ ডিউক আর মেজর দুজনেই আড়চোখে তাকালেন তার দিকে কিন্তু মুখে কেউই কোনো মন্তব্য করলেন না।
খানিক পরে পরিচারিকা ট্রেতে চায়ের সরঞ্জাম সাজিয়ে ড্রইংরুমে এসে হাজির হল।
.
০২.
চা-এর পর্ব শেষ হলে মিসেস উইলেট ব্রিজ খেলার প্রস্তাব দিলেন কিন্তু ছোকরা গারফিল্ড তাকে বাধা দিয়ে বলে উঠল, তার চাইতে আসুন একটু প্রেতচর্চা করা যাক।
-প্রেতচর্চা! মিসেস উইলেটের মেয়ে ভায়োলেট চমকে উঠে বলল, সে আবার কি?
হ্যাঁ, গারিফ বলল, আজকের এই আবহাওয়া প্রেতলোকের বাসিন্দাদের আবাহন করার পক্ষে সবদিক থেকে উপযুক্ত। এখানে আসবার আগে মিঃ রাইক্রফটের সঙ্গে এই বিষয়েই আলোচনা করেছিলাম আমি।
ও ঠিকই বলেছে। গারফিল্ডের কথায় সায় দিয়ে মিঃ রাইক্রফট বললেন, আমি নিজে অতিলৌকিক গবেষণা পর্ষদের সদস্য। আমারও মনে হয় প্রেতচর্চা করার পক্ষে আজকের সন্ধ্যেটা আদর্শ। তবে আমরা যা করতে চাইছি তা কিন্তু নিছক আমোদ বা সময় কাটাবার জন্য তা আপনারা সবাই মনে রাখবেন।
তাহলে এবার ঘরের আলো নিভিয়ে দিচ্ছি, ভায়োলেট বলে উঠল একটা জুৎসই টেবিলও তো দরকার। না স্যার ওটা নয়, ওটা বড্ড ভারী।
ভায়োলেট নিজেই পাশের ঘর থেকে একটা ছোট গোল টেবিল নিয়ে এল। ফায়ারপ্লেসের সামনে সেই টেবিলের চারপাশে গোল হয়ে বসল সবাই। এরপরে ঘরের আলো নিভিয়ে দিল ভায়োলেট। মিসেস উইলেট আর ভায়োলেটের মাঝখানে বসলেন মেজর বারনাবি, ভায়োলেটের মুখোমুখি বসল গারফিল্ড। নিজের মনে একবার হাসলেন। বারবি, যৌবনে এই ধরনের প্রেতচর্চা করে তিনিও একসময় অবসর কাটিয়েছেন। এক সুন্দরী সুকেশী বান্ধবীর কথা তার মনে পড়ল, আজ যে আর বেঁচে নেই। প্রেতচর্চার সময় সবার চোখ এড়িয়ে টেবিলের নীচে তারা দুজনে পরস্পরের হাত ধরতেন। একমনে সেই পরলোকগত বান্ধবীর আত্মাকে ডাকতে লাগলেন মেজর বারনাবি।