অদ্ভুত শক্ত চরিত্রের মহিলা, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট নিজের মনে বলে উঠলেন, তার চেয়েও আশ্চর্যকর তার ভাই। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান কিভাবে খুন হয়েছেন সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন একবারের জন্যও তিনি করলেন না, কোনো কৌতূহলও প্রকাশ করলেন না।
এক্সহ্যাম্পটনের ঘটনাটা কি ঘটেছিল তা কি আপনি জানতে চান না? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট ইচ্ছে করেই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন মিসেস গার্ডনারের দিকে।
জানার সত্যিই তেমন প্রয়োজন আছে কি? ভুরু কুঁচকে মিসেস গার্ডনার উত্তর দিলেন, আমার ভাই খুন হয়েছে সে খবর তো আপনিই নিজের মুখেই দিলেন, আশাকরি তাকে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি।
তা হয়নি ঠিকই।
তাহলে আর এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত কিছু জানার আগ্রহ আমার নেই।
অস্বাভাবিক চরিত্র, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট আবার নিজের মনে বলে উঠলেন, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।
ইয়ে আমি আপনার আত্মীয়দের সম্পর্কে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন।
করুন।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃত্যুর পরে এখন আপনার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে আর কে কে বেঁচে আছেন?
আমার ছোট বোন মেরী পিয়ার্সনের দুই ছেলে জেমস, ব্রায়ান আর মেয়ে সিলভিয়া।
এদের সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আমি কিছু জানতে চাই, আপনি পর পর বলে যান। বেশ, বলছি। মেরীর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে জেমস সবার বড়, ওর বয়স আঠাশ, একটা বীমা কোম্পানিতে ভাল চাকরি করছে।
জেমস কি বিবাহিত?
না, তবে একটি মেয়েকে ও বহুদিন ধরে ভালবাসে। মেয়েটি সুন্দরী, শিক্ষিতা ও বুদ্ধিমতী শুনেছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি।
জেমসের বর্তমান ঠিকানা কি?
২১, ক্রসওয়েল স্ট্রীট, লন্ডন, এস ডব্লিউ-৩।
তারপর? বলে যান, মিসেস গার্ডনারের বক্তব্য লিখে নিতে নিতে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, জেমসের বোন সিলভিয়া আসছে তারপর, ওর সম্পর্কে যা জানেন, বলুন।
সিলভিয়ার বিয়ে হয়েছে মার্টিন ডেরিংয়ের সঙ্গে। মার্টিনের নাম আশা করি শুনেছেন, ও লেখক, ওর লেখা কতগুলো বই বাজারে প্রচুর কাটছে।
ঠিকানা?
দ্য লুক, সারে রোড ইমুলডন।
তারপর?
সবার ছোট হল ব্রায়ান, সে কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় গেছে। কাজেই তার ঠিকানা এই মুহূর্তে আপনাকে দিতে পারছি না। ওটা ওর ভাই বা বোনের কাছ থেকে পেয়ে যাবেন।
ধন্যবাদ, মিসেস গার্ডনার। এবার নিয়মমাফিক একটি মামুলি প্রশ্ন আপনাকে করছি। গতকাল বিকেলটা আপনি কিভাবে কাটিয়েছিলেন?
গতকাল বিকেলে আমি কিছু কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলাম, কেনাকাটা সেরে একটা সিনেমায় গিয়েছিলাম। ছবিটা দেখতে দেখতে মাথা ভীষণ ধরেছিল যে কারণে বাড়ি ফেরার পরে ডিনারের কিছু আগে পর্যন্ত চুপ করে শুয়েছিলাম।
আপনাকে যথেষ্ট ধন্যবাদ, মিসেস গার্ডনার।
আর কিছু জানতে চান?
না, আপনাকে আর কোনো প্রশ্ন করার নেই, আমি এবার আপনার ছোট বোনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। ভাল কথা, মিঃ বার্কউডের কাছ থেকে জানতে পারবেন যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হবার আগে যে উইল করেছিলেন তাতে তার সম্পত্তির কিছু অংশ আপনাকে আর আপনার বোন মেরীর ছেলেমেয়েদের দিয়ে গেছেন।
বাঃ, মন্তব্য করলেন মিসেস গার্ডনার, এ তো রীতিমতো সুসংবাদ। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট লক্ষ্য করলেন সম্পত্তির অংশ পাবার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে মিসেস গার্ডনারের বিপদমলিন কঠিন মুখখানা হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দুটি গালে ফুটে উঠল রক্তিমাভা।
ঠিক তখনই ওপরের একটি ঘর থেকে ভেসে এল পুরুষের কাতরকণ্ঠ।
জেনিফার! জেনিফার! তুমি কোথায় চলে গেলে? এখানে একটিবার এসো না!
মাপ করবেন। মিসেস গার্ডনার কৌচ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার স্বামীর হয়তো কোনো কিছুর দরকার হয়েছে, তাই আমায় ডাকছেন।
মিসেস গার্ডনার ড্রইংরুম ছেড়ে বেরোতে যাবেন কিন্তু তার আগেই আবার ওপর থেকে সেই গলা ভেসে এলঃ
কি হল জেনিফার! কোথায় গেলে তুমি?
আসছি বাপু! বলতে বলতে মিসেস গার্ডনার ড্রইংরুমের দরজা খুলে এগোলেন, একটু ধৈৰ্য্য ধরুন আসছি।
মিসেস গার্ডনারের পেছন পেছন ইন্সপেক্টর ন্যারাকটও বেরিয়ে এলেন ড্রইংরুম থেকে। সামনে বিশাল হলঘর, তারপর দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে এক স্বাস্থ্যবতী যুবতী নেমে আসতেই মিসেস গার্ডনার তার পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলেন। যিনি নেমে এলেন তার পরনে নার্সের ধোপদুরস্ত ইউনিফর্ম, তাকে দেখেই ইন্সপেক্টর ন্যরাকট ইচ্ছে করে তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে পড়লেন, হেসে বললেন, মাপ করবেন, আমি একজন পুলিশ অফিসার, মিসেস গার্ডনারের ভাইয়ের খুনের তদন্তে এসেছি, আপনাকে দু একটা প্রশ্ন করতে পারি?
নার্স যুবতীটি বেশ ছটফটে, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট পথ আটকে দেওয়া সত্ত্বেও তিনি অদ্ভুত ভঙ্গিতে তার পাশ কাটিয়ে দ্রুতপায়ে এসে ঢুকলেন ড্রইংরুমে, ইন্সপেক্টর ন্যারাকটও এলেন তার পেছন পেছন।
খুনের খবর শুনে আমার পেশেন্ট অর্থাৎ ক্যাপ্টেন গার্ডনার আচমকা খুব নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। নার্স বললেন, আসলে এই গোলমাল পাকিয়েছে ওই হতচ্ছাড়ী বিয়াত্রিস। কিছুক্ষণ আগে ওই ওপরে গিয়ে চেঁচিয়ে ক্যাপ্টেন গার্ডনারকে বলছিল যে ওঁর শ্যালক ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করা হয়েছে। বিয়াত্রিসের ঘটে এতটুকু বুদ্ধি নেই।