আচ্ছা, বিয়াত্রিস, জেরা করার ভঙ্গিতে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন, মিঃ বাকউড তোমার মনিব মিসেস গার্ডনারকে যে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন তাতে কি ওঁর ভাইয়ের খুন হবার উল্লেখ ছিল?
কি বললেন আপনি? দুচোখ বড় বড় করে বিয়াত্রিস তার দিকে তাকাল, ভীতি মেশানো গলায় পাল্টা প্রশ্ন করল, ওঁর ভাই তাহলে খুন হয়েছেন?
হ্যাঁ, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট ঘাড় নেড়ে বললেন, তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে পাছে তোমার মনিব আঘাত পান সেই ভয়ে মিঃ বার্কউড গোড়াতেই ব্যাপারটা ইচ্ছে করে জানাননি তাকে। কিন্তু এভাবে কি আর এতবড় খবর চেপে রাখা যায়? আজ বিকেলের সব কটা সান্ধ্য দৈনিকেই দেখবে এই খুনের খবর ঠিক ছেপে বেরোবে।
ওঁর ভাই যে খুন হয়েছেন তা আমি এই প্রথম আপনার মুখ থেকে শুনলাম। খুন সে তো এক বীভৎস ব্যাপার, তাই না? তা আততায়ী কি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মাথায় আঘাত করেছিল, না কি ওঁকে গুলি ছুঁড়ে খুন করেছিল?
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান কি ভাবে খুন হয়েছেন তা সংক্ষেপে বিয়াত্রিসকে বলে তার কৌতূহল চরিতার্থ করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট। তারপর বললেন, আমি শুনলাম গতকাল বিকেলে তোমার মনিবের এক্সহ্যাম্পটনে যাবার কথা ছিল, কিন্তু হয়তো আবহাওয়া খারাপ থাকার জন্য শেষ পর্যন্ত ওঁর সেখানে যাওয়া হয়নি।
দুঃখিত, বিয়াত্রিস বলল, তেমন কিছু তো শুনিনি, আমার মনে হচ্ছে আপনি ভুল খবর শুনেছেন। আমার মনিব মিসেস গার্ডনার কিছু কেনাকাটা করতে বিকেলে একবার বেরিয়েছিলেন ঠিকই, তারপর উনি সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন।
উনি কটা নাগাদ বাড়ি ফিরেছিলেন?
তা তখন সন্ধ্যে ছটা হবে।
আচ্ছা, মিসেস গার্ডনার কি বিধবা?
আজ্ঞে না,বিয়াত্রিস চাপা হেসে বলল, ওঁর স্বামী জীবিত।
তিনি কি কোনো কাজকর্ম করেন?
আজ্ঞে না, তিনি পঙ্গু, সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকেন। বেচারা হাঁটাচলা করতে পারেন না তাই একজন নার্স দিনরাত ওঁর সেবা করে।
খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আচ্ছা বিয়াত্রিস, এবার তাহলে তুমি ভেতরে গিয়ে তোমার মনিব মিসেস গার্ডনারকে একবার এখানে পাঠিয়ে দাও। ওঁকে বলল যে মিঃ বার্কউডের তরফ থেকে আমি এসেছি।
বিয়াত্রিস ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আর তার মিনিটখানেক বাদেই এক মাঝবয়সি মহিলা ড্রইংরুমে ঢুকলেন। মিসেস গার্ডনার দেখতে লম্বা, মুখের গড়নটাও তার কিছুটা অস্বাভাবিক –কপালের দুই ভুরু বরাবর মুখখানা চওড়া আকার নিয়েছে, কানের পাশে রগে বেশ কিছুটা চুলে রূপোলি আভা ধরেছে।
আপনি মিঃ বার্কউডের তরফ থেকে এসেছেন?
মিঃ বার্কউডের কাছ থেকে আপনার নামটুকু শুধু জানতে পেরেছি তবে আমি তার পেশার সঙ্গে যুক্ত নই,ইন্সপেক্টর ন্যারাকট কৌচ ছেড়ে শিষ্টাচার দেখাতে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বললেন, আমি ডিভিশন্যাল ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, গতকাল বিকেলে আপনার ভাই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন তা নিশ্চয়ই জানেন, ওই খুনের তদন্তের দায়িত্ব এখন আমিই পেয়েছি।
তীক্ষ্ণ দুটি চোখের চাউনিতে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটকে কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখলেন মিসেস গার্ডমার, তারপর মন্তব্য করলেন, আপনি তাহলে পুলিশ অফিসার? বলছেন আমার ভাই খুন হয়েছে? কি আশ্চর্য। জো ছিল এক শান্ত নির্বিরোধী মানুষ, ওকে খুন করে কে লাভবান হল?
সেটা খুঁজে বের করাই তো আমার কর্তব্য, মিসেস গার্ডনার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আর এই তদন্তের ব্যাপারে কিছু খোঁজখবর নেবার জন্যই আপনার কাছে ছুটে এসেছি।
বেশ, মিসেস গার্ডনার বললেন, আমি যতদূর সম্ভব আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব কিন্তু তাতে কতটা কাজ হবে তা এখনই বলতে পারছি না। গত দশ বছর আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাৎ খুব কমই হয়েছিল। এই সময়ের ভেতরে ওর সঙ্গে যদি কারো বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তবে সেসব আমার কিছুই জানা নেই।
মাফ করবেন মিসেস গার্ডনার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন আপনার সঙ্গে কি আপনার এই ভাইয়ের কোনো ঝগড়াঝাটি হয়েছিল?
ঝগড়াঝাটি বলতে যা বোঝায় জোর সঙ্গে আমার তা হয়নি, মিসেস গার্ডনার এতক্ষণ পরে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের মুখোমুখি একটি কোচে বসে বলতে লাগলেন, তবে অনেক সময় ও আমাকে ঠিক বুঝতে চাইতো না। এসব পারিবারিক খুঁটিনাটি ব্যাপার অনেক জটিল, সব আপনাকে বলত পারব না, শুধু এটুকু বলছি যে আমার ভাই জো আমার বিয়েতে বাধা দিয়েছিল। আমাদের এক নিঃসন্তান পিসিমা মারা যাবার আগে তার যাবতীয় বিষয় সম্পত্তি দিয়ে গিয়েছিল আমার ভাই জোকে, অল্প বয়সে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছিল সে। আমার আর আমার ছোট বোনের স্বামী দুজনেই গরিব ঘরের ছেলে। আমার স্বামী গত বিশ্বযুদ্ধে অনেকের মতোই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, বিদেশে লড়াই করতে গিয়ে কামানের গোলার আঘাতে তিনি আহত হন। দেশে ফেরার পরে উপযুক্ত চিকিৎসা করালে উনি আবার আগের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করার ক্ষমতা ফিরে পেতেন কিন্তু সেই চিকিৎসা ছিল খরচ সাপেক্ষ। আমি এই চিকিৎসার খরচের টাকাটা জোয়ের কাছে ধার হিসাবে চেয়েছিলাম কিন্তু ও কিছুতেই টাকাটা আমায় দিতে চাইল না। তারপর থেকেই আমাদের দুজনের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ কমে গিয়েছিল। চিঠিপত্র লেখাও একরকম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।