সত্যিই, এমন নৃশংস কাজ কে করতে পারে? পরোক্ষে এন্ডারবির দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল ইভানসের যুবতী স্ত্রী।
আঃ রেবেকা,ইভানস চাপা ধমকের সুরে বলে ওঠে, সব ব্যাপারে কথা বলা তোমার সাজে না, এ সবের মাঝে তুমি মাথা গলাবে না। বউকে শাসন করেই গলা নামিয়ে এন্ডারবিকে প্রশ্ন করল ইভানস, স্যার আপনি সত্যিই পুলিশের গোয়েন্দা নন তো? বিশ্বাস করুন স্যার, আমি নেহাৎ ছাপোষা লোক, শুধু পেটের দায়েই এতদিন ক্যাপ্টেন-এর কাছে চাকরি করেছি। ওঁর খুনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
তুমি মিছেই ভয় পাচ্ছ ইভানস, আশ্বাসের সুরে এন্ডারবি জানাল, আমি সত্যিই একজন রিপোর্টার, এই দেখো আমার পরিচয়পত্র, বলে পকেট থেকে আইডেন্টি কার্ড বের করে ইভানসের চোখের সামনে সে মেলে ধরল।
তোমার মনিবের খুনের ব্যাপারে খবর নেওয়া ছাড়া আরও একটা কারণে আমায় আসতে হয়েছে। মেজর বারনাবি আমাদের খবরের কাগজে একটা ফুটবল খেলার ধাঁধায় সঠিক উত্তর পাঠিয়ে পাঁচ হাজার পাউন্ড জিতেছেন, আমি ওই টাকার চেক তাকে দিতে এসেছিলাম।
কি বললেন আপনি, ইভানসের গলায় চাপা উত্তেজনা ফুটে বেরোল, এসব ধাঁধা তাহলে জোচ্চুরি নয়, সঠিক উত্তর পাঠালে লোকেরা তাহলে সত্যিই টাকা পায়?
পায় যে তা তো দেখতেই পাচ্ছ? এন্ডারবি বলল, মেজর বারনাবিকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবে আমার কথা সত্যি কিনা।
কিন্তু আমার মনিব ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান যে বলতেন এসব পুরোপুরি জোচ্চুরি, পুরস্কারের টাকা সবসময় ওরা আগে থেকে নিজেরাই হজম করে ফেলে, নয়তো এমন কাউকে কখনো পুরস্কার দেয় যে ওদের পেটোয়া লোক।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান, যে একবার ক্রসওয়ার্ড ধাঁধার সঠিক উত্তর পাঠিয়ে তিনটে উপন্যাস পুরস্কার পেয়েছিলেন আর খুন হবার আগের দিন পর্যন্ত সে উপন্যাস তিনটের একটিও তিনি যে খুলে দেখেননি সেকথাও এই প্রসঙ্গে জানাল ইভানস।
ইভানসকে মোচড় দিয়ে অনেক কিছু জেনে নিল এন্ডারবি, এই বিশ্বস্ত পুরোনো ভৃত্যকে নিয়ে একটি সরেস ফিচার লেখার পরিকল্পনা অনেকক্ষণ থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে তার মাথায়। ইভানসের রূপসী যুবতী বউ রেবেকার চোখেমুখে সবসময় এক অজানা ভীতি থেকে থেকে উঁকি দিচ্ছে কেন তাও এন্ডারবির চোখ এড়াল না। কিন্তু এ নিয়ে মাথা ঘামাল না সে।
নিজের সাধ্যমতো আতিথেয়তার ত্রুটি করল না ইভানস, তার বউ-এর দেওয়া পানীয়ের গেলাসে শেষে চুমুক দিয়ে একসময় উঠে পড়ল এন্ডারবি, ব্যস্ত গলায় বলল, এবার তাহলে আমায় রওনা হতে হবে, সহযোগিতার জন্য তোমাদের দুজনকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে তোমার মনিব যখন আমাদের কাগজের ক্রসওয়ার্ড ধাঁধায় জিতেছিলেন বলছ, তখন এটা জেনে রেখো যে তার খুনীকে ধরতে আমি ব্যক্তিগতভাবে সবরকম চেষ্টা করব।
দয়া করে তাই করুন স্যার,ইভানস হাত কচলে বলল, আপনারা খবরের কাগজের রিপোর্টাররা অনেক অসাধ্য সমাধান করতে পারেন।
ইভানসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিক এন্ডারবি ফিরে এল থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ে।
মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে ট্রেনে চেপে এক্সহ্যাম্পটন থেকে এক্সেটারে পৌঁছে গেলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট। ট্রেন থেকে নেমে লরেনস নামে বাড়িটির কলিংবেলের ঘন্টা যখন তিনি বাজাচ্ছেন তখন দুপুর বারোটা বাজতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি।
লরেনস বাড়িটা শুধু যে পুরোনো তাই নয়, এখন সবদিক থেকেই তার জীর্ণদশা চলছে। বাড়ির বাইরের দেওয়ালের রং আর পলেস্তারা কবে উঠে গিয়ে ভেতরের ইট বেরিয়ে পড়েছে, বাড়ির চারপাশের বাগানের জায়গায় জায়গায় জমেছে আগাছা আর শ্যাওলা।
এদের আর্থিক অবস্থা যে ভাল নয় তা তো এই বাড়ির হাল দেখেই বোঝা যাচ্ছে, নিজের মনে মন্তব্য করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
.
০৯.
দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মুখ তুলে তাকালেন, দেখলেন এক যুবতী খোলা দরজার পাল্লা দুহাতে ধরে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। যুবতী যে এই বাড়ির পরিচারিকা তার চেহারা আর পোষাক দেখেই সে সম্পর্কে নিশ্চিত হলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
গুড আফটারনুন,ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আমি ইন্সপেক্টর ন্যারাকট। কিছুদিন আগে এক্সহ্যাম্পটনে মিসেস গার্ডনারের ভাই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন নিশ্চয়ই শুনেছেন, সেই খুনের তদন্তের ব্যাপারে ওঁকে কিছু প্রশ্ন করব, বলে এসেছি। মিসেস গার্ডনার ওঁর ভাইয়ের খুনের খবর শুনেছেন কি?
আজ্ঞে হ্যাঁ, মহিলা ঘাড় নেড়ে চাপা গলায় জবাব দিলেন, ওঁর উকিল মিঃ বাকউড টেলিগ্রাম করে খবরটা জানিয়েছেন।
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট কোনো মন্তব্য করলেন না। সেই মহিলা অর্থাৎ মিসেস গার্ডনারের পরিচারিকা এবার তাকে নিয়ে এলেন ড্রইংরুমে। ড্রইংরুমে দেয়ালের চেহারাও বাড়ির বাইরের মতোই জীর্ণ ও করুণ। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট একটা কৌচে গা এলিয়ে বসলেন।
তোমার মনিব অর্থাৎ মিসেস গার্ডনার নিশ্চয়ই এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি, পরিচারিকার দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
যতটা ভাবছেন ততটা নয়, পরিচারিকা জবাব দিল, কারণ উনি ওঁর ভাইকে খুব বেশি দেখেননি, তেমন ঘনিষ্ঠতাও ওঁদের মধ্যে কখনো চোখে পড়েনি।
তোমার নাম কি? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
আজ্ঞে আমার নাম বিয়াত্রিস স্যার।