হ্যাঁ, এন্ডারবি সায় দিয়ে বলল, পথে আসতে যাকে দেখলাম, তারই মুখে শুনলাম এই খুনের প্রসঙ্গ। সবারই মুখে এককথা। সবদিক থেকেই এই খুনকে রীতিমতো রহস্যজনক বলা চলে। আচ্ছা ওঁর কি কোনো শত্রু ছিল?
না, মেজর বারনাবি জবাব দিলেন।
ডাকাতি করতে এসে কেউ ওঁকে খুন করেছেন পুলিশ তা জানাতে নারাজ, এন্ডারবি বলল।
একথা আপনি জানলেন কি করে?
এন্ডারবি এ প্রশ্নের উত্তর দিল না, খবরের সূত্র ফাঁস করতে চায় না সে।
আপনি যে টাকাটা পেয়েছেন তার একটা রসিদ আমায় দিন, এন্ডারবি বলল।
এক্ষুনি দিচ্ছি, বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন মেজর বারনাবি, পকেট থেকে খামটা বের করে খুলে দেখলেন ভেতরে সত্যিই পাঁচ হাজার পাউন্ডের চেক আছে কিনা। সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এক চিলতে কাগজে সই করে দিলেন তিনি।
ধন্যবাদ, রসিদটা পকেটে রেখে এন্ডারবি বলল, এবার আর কয়েকটা কাজ আমার করার আছে। এক, আপনার বাড়ির একটি ফটো তুলতে হবে, আপনি নিজে হাতে আপনার পোষা শুয়োরের বাচ্চা, বেড়াল নয়তো কুকুরকে খাওয়াচ্ছেন, বাগানে ফুল গাছের গোড়ায় সার দিচ্ছেন এমন কিছু ফটোও তুলব। দুই, আপনার একটি ছোট সাক্ষাৎকার আমায় নিতে হবে। তেমন কিছু নয়, পাঁচহাজার পাউন্ড কিভাবে আপনি খরচ করতে চান এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আপনাকে। বেশ মুখরোচক ভাবে সাক্ষাৎকার লিখতে হবে আমায়।
বুঝেছি, ব্যাজার মুখে মেজর বারনাবি জানালেন, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই বিশ্রী আবহাওয়ায় সিটাফোর্ডে যাওয়া তো একরকম অসম্ভব ব্যাপার, গত তিনদিন ধরে একটি গাড়িও পথে বেরোয়নি, তুষারপাত বন্ধ হলেও পথঘাট সাফ হতে হতে আরও দিন তিনেক লেগে যাবে।
কি আর করব, আজ তাহলে উঠি,বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল এন্ডারবি, করমর্দন শেষে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সে দরজার দিকে।
বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্থানীয় পোস্ট অফিসে এসে হাজির হল এন্ডারবি, সেখান থেকে অফিসে টেলিগ্রাম করল। তাতে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের রহস্যময় খুনের ঘটনা উল্লেখ করল সবিস্তারে আর এও জানাল যে এই খুন সংক্রান্ত বিশদ রিপোটিং সে এখান থেকে পাঠতে পারবে।
অফিসে টেলিগ্রাম করেই কাজের পরবর্তী ধারা সম্পর্কে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল এন্ডারবি। নিহত ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের রাঁধুনি ও আংশিক সময়ের পরিচারক ইভানসের ঠিকানা ইতিমধ্যেই যোগাড় করেছিল এন্ডারবি। পোস্ট অফিসে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সোজা ইভানস-এর পাড়ায় এসে সে হাজির হল।
ইভানস তার নগণ্য পেশার কারণে এতদিন পাড়ার লোকের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি বটে কিন্তু মনিব খুন হবার ফলে রাতারাতি সে বিখ্যাত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। ফোর স্ট্রীটের এক বাসিন্দাকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করতেই সে এন্ডারবিকে এনে হাজির করল ইভানসের বাড়ির দোরগোড়ায়।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে খবরের কাগজের এক রিপোর্টার নিজে এসে হাজির হয়েছে তার কাছে এটা ইভানসের কাছে স্বপ্নেরও অতীত, এন্ডারবি মেজর বারনাবির নাম করতে সে তাকে খাতির করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসল। তার নববিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিল। ইভানসের বউ-এর বয়স খুবই কম, আর চেহারায় চটক আছে। তার মেদহীন সরু কোমর, একমাথা কালো কোঁকড়ানো চুল আর রক্তাভ দুটি গালের দিকে তাকিয়ে এন্ডারবি মুগ্ধ না হয়ে পারল না, মনে মনে পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে ইভানসের রুচির তারিফ করল সে।
বুঝতেই পারছ, কেন তোমার কাছে এসেছি, এন্ডারবি হেসে বলল, তোমার মনিবের খুনের ব্যাপারে কিছু খবর আমার চাই। আশাকরি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে তোমার আপত্তি নেই?
আজ্ঞে না, ইভানস বিস্ময়ে বিগলিত হয়ে বলল, বলুন কি জানতে চান, আমি সাধ্যমতো উত্তর দেব।
তোমার মনিব ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে কে খুন করেছে বলে তোমার মনে হয়?
স্যার,ইভানস গলা নামিয়ে বলল, আমার ধারণা এটা নির্ঘাৎ কোনো গুন্ডা বদমাসের কাজ। নিশ্চয়ই ব্যাটা আকণ্ঠ মদ খেয়ে কোন গতিকে বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়েছিল, ক্যাপ্টেন তাকে দেখতে পেয়ে ঘাড় ধরে বের করে দিতে চান, সেই, ফাঁকে ব্যাটা তাকে খুন করে।
ভুল করছ ইভানস, এন্ডারবি একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, তোমার এই ধারণার সঙ্গে পুলিশ একমত নয়।
আজ্ঞে? পুলিশের মতে খুনটা পূর্বপরিকল্পিত, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করবে বলেই সেদিন আততায়ী তার বাড়িতে ঢুকেছিল। আর আততায়ী নিছক মাতাল গুন্ডা বদমাইস নয় বলেই পুলিশের ধারণা।
এসব কথা আপনাকে কে বলল, স্যার? ভীতু গলায় ইভানস প্রশ্ন করল।
উত্তর না দিয়ে এন্ডারবি নিজেকে সামলে নিল। এসব খবর কিছুক্ষণ আগে থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ে বসে মদ খেতে খেতে সেখানকার এক ওয়েটারের মুখে শুনেছে সে, যার বোনের জামাই খোদ কনস্টেবল গ্রেভস নিজে যাকে সঙ্গে নিয়ে মেজর বারনাবি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুন হবার পরে তাঁর বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
খবর পেয়েছি, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে, ভারিক্কি চালে বলল এন্ডারবি, যাতে পুলিশ সন্দেহ করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যে আততায়ী জানালা দিয়ে বাড়িতে ঢুকেছিল যা দেখে সবাই ধরে নেবে চুরি বা ডাকাতি করার মতলবে এক বা একাধিক লোক হ্যাজেলমুরে হানা দিয়েছিল, তাদের বাধা দিতে গিয়েই খুন হয়েছেন তোমার মনিব ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান। আততায়ী এইভাবেই সাজাতে চেয়েছে ব্যাপারটাকে।