আপনি বলতে চান মেজর বারনাবি, যে ওই প্রেতচর্চার অনুষ্ঠানে টেবিলের পায়ার ওঠানামার ঠক ঠক শব্দ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃত্যুর খবর আমাদের জানিয়েছিল?
আমি নিজে পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও ব্যাপারটা ঠিক তেমনই ঘটেছিল।কপালের ঘাম রুমালে মুছে মেজর বারনাবি জবাব দিলেন, ওই ঘটনার পরেই আমি অস্থির হয়ে পড়ি আর তাই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান কেমন আছেন তা দেখার জন্য সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তখনই বেরিয়ে পড়ি।
মেজর বারনাবি মুখে অবিশ্বাসের কথা বললেও সেদিনের ওই ঘটনা যে তাকে খুব প্রভাবিত করেছিল সে সম্পর্কে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের মনে কোনো সন্দেহই রইল না। কিন্তু ভূতপ্রেত নিয়ে এই খেলার সঙ্গত কোনও ব্যাখ্যাই তিনি সেই মুহূর্তে খুঁজে পেলেন না।
নিশ্চয়ই এই প্রেতচর্চার পেছনে অন্য কোনো গভীর রহস্য আছে। এই রহস্যঘন খুনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব আগে কখনো তাঁর হাতে আসেনি।
মেজর বারনাবি প্রেতের দ্বারা প্রভাবিত হোন বা নাই হোন তাতে তার কিছুই যায় আসে না। তাঁর কাজ হল ট্রেভিলিয়ানের হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা যার সঙ্গে ভূতপ্রেতের কোনো সম্পর্ক নেই।
.
০৮.
মেজর বারনাবির সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ হাতঘড়ির দিকে তাকলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, দেখলেন এক্ষুনি তাড়াহুড়ো করে স্টেশনে পৌঁছতে পারলে এক্সেটারে যাবার ট্রেনটা ধরতে পারবেন তিনি। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বোনকে জেরা করার এই সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করতে চাইলেন না তিনি। মেজর বারনাবির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুতপায়ে স্টেশনের দিকে এগোলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট। অন্যদিকে মেজর বারনাবি নিজে এগোলেন থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ের দিকে। সরাইয়ে সবে ঢুকেছেন মেজর বারনাবি এমন সময় সুন্দর সুপুরুষ চেহারার এক অচেনা তরুণ তার সামনে এসে দাঁড়াল।
আপনি তো মেজর বারনাবি? অচেনা তরুণটি জানতে চাইল।
হ্যাঁ।
এক নম্বর সিটাফোর্ড কটেজ তো আপনারই ঠিকানা?
হ্যাঁ, কিন্তু আপনার
আমি ডেইলি অয়্যার খবরের কাগজের রিপোর্টার, আমি
তার কথা শেষ হবার আগেই রাগে বোমার মতো ফেটে পড়লেন মেজর বারনাবি।
আর একটি কথাও নয়, আপনি কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন তা জানতে আমার বাকি নেই। তবে এটাও জেনে রাখবেন, যতই প্রশ্ন করুন না কেন, আমার পেট থেকে একটি কথাও বের করতে পারবেন না। যদি কিছু জানবার থাকে তো সোজা পুলিশের কাছে চলে যান, আমায় খামোক বিরক্ত করতে এসেছেন কেন শুনি? যিনি খুন হয়েছেন আপনার এহেন আচরণে তার আত্মা অবশ্যই শান্তি পাচ্ছেন না!
ভুল করছেন, অল্পবয়সি রিপোর্টারটি এতটুকু দমে না গিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলল, কোনো খুনের ব্যাপারে খবর যোগাড় করতে নয়, এই খামটা আপনার হাতে তুলে দেবার জন্যই আমি এতদূরে ছুটে এসেছি। কথা শেষ করে সে কোটের ভেতরের পকেট থেকে একটা মুখ বন্ধ খাম বের করে তুলে দিলেন মেজর বারনাবির হাতে।
এই খামের ভেতরে কি আছে? মেজর বারনাবি প্রশ্ন করলেন।
আমাদের ফুটবল প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত একটি ধাঁধার সঠিক উত্তর আপনি পাঠিয়েছিলেন, রিপোর্টার ছোকরাটি জবাব দিল, সেই বাবদ আপনি পাঁচ হাজার পাউন্ড জিতেছেন, খামের ভেতরে সেই অঙ্কের চেক আছে। পুরস্কার পাবার জন্য আমি আপনাকে আমার নিজের তরফ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ব্যাপারটা যে এরকম দাঁড়াবে তা মেজর বারনাবি স্বপ্নেও ভাবেননি। পাঁচ হাজার পাউন্ড তার কাছে অনেক টাকা, এত টাকা এক থোক হাতে পাবার কথা কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। আর একটি কথাও জোগাল না তার মুখে, ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেলেন।
পুরস্কার পাবার খবর জানিয়ে আমরা গতকাল সকালেই তো আপনাকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম, রিপোর্টারটি বলল, পাননি চিঠি?
কি করে পাব বলুন? মেজর বারনাবি বললেন, সিটাফোর্ড এলাকাটার যে পুরো দশ ফিট তুষারের নীচে চাপা পড়ে আছে সে খোঁজ তো আপনাদের জানা নেই। কদিন ধরে তাই চিঠিপত্রও ঠিকমতো বিলি হচ্ছে না।
কিন্তু আজ সকালের কাগজে তো আপনার নাম ছাপা হয়েছে, সেটাও কি আপনার চোখে পড়েনি?
এই দেখুন, এখনও পর্যন্ত নিজের পরিচয়টাই আপনাকে দেওয়া হয়নি, রিপোর্টারটি বিনীতসুরে বলল, আমার নাম চার্লস এন্ডারবি, গতকাল রাতেই এখানে এসে পৌঁছেছি, তারপর আজ রওনা হয়েছিলাম সিটাফোর্ডের দিকে। আমরা আমাদের প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের প্রাপ্য চেক সবসময় নিজেরা গিয়ে হাতে হাতে দিয়ে আসি, এটাই আমাদের কাগজের রেওয়াজ, সেইসঙ্গে বিজয়ীর একটি সাক্ষাঙ্কারও প্রকাশ করি। হয়তো আপনার খোঁজ পেতাম না কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে এই থ্রি ক্রাউনসের মালিক, ওয়েটার, রাঁধুনি থেকে শুরু করে নিয়মিত খদ্দের সবাই দেখলাম আপনাকে চেনে।
কিছু মনে করবেন না। চেকসমেত খামটা সাবধানে পকেটে পুরে মেজর বারনাবি নরম সুরে বললেন, গোড়ায় আপনাকে অনেক কুকথা অকথা শুনিয়েছি। আমরা হলাম গিয়ে পুরোনো জমানার মিলিটারি অফিসার। যখন তখন মাথা গরম হয়ে ওঠে। যাকগে, আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন আপনি, শুধু মুখে আপনাকে ছাড়ছি না। কি খাবেন বলুন।
শুধু একটা বিয়ার, এন্ডারবি মুচকি হেসে বলল।
দুটো বিয়ার অর্ডার দিয়ে সাংবাদিক ছোরার মুখোমুখি বসলেন মেজর বারনাবি, হঠাৎ বিষণ্ণ সুরে বললেন, তাছাড়া যিনি খুন হয়েছেন তিনি ছিলেন আমার বহুদিনের পুরানো বন্ধু, তাঁর বিয়োগ ব্যথা আমি বহু চেষ্টা করেও ভুলতে পারছি না।