৬। আমার অপর ভগিনী মেরী পিয়ার্সন কিছুদিন আগে মারা গেছেন, তাঁর তিনটি সন্তানের প্রত্যেকেই আমার যাবতীয় সম্পত্তির মোট চারভাগের একভাগ সমানভাবে পাবে। উইলের নীচে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের স্বাক্ষর আর দুজন সাক্ষীর স্বাক্ষর, দুজন কর্মচারী এই উইলের সাক্ষী ছিলেন। এ দুটো স্বাক্ষর ওঁদেরই।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বোন মেরী পিয়ার্সন মারা গেছেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জানতে চাইলেন, ওঁর সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন, মিঃ বার্কউড?
তেমন বিশেষ কিছুই, নয়, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, মিঃ বার্কউড জবাব দিলেন, মেরি খুব বেশিদিন হয়নি মারা গেছে। ওর স্বামী ছিলেন শেয়ারের দালাল, তিনি আগেই মারা গেছেন। আমি যতদূর জানি, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান সিটাফোর্ড সম্পত্তি কেনার পর মেরী একবারও তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।
আচ্ছা, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মোট পরিমান কত হবে বলতে পারেন? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
তা আশি নব্বই হাজার পাউন্ড তো বটেই, মিঃ বাকউড জবাব দিলেন, তার বেশি ছাড়া কম হবে না।
আগেই বলেছিলাম আপনাকে যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ছিলেন ধনী লোক। বারনাবি এতক্ষণ বাদে মন্তব্য করলেন, প্রচুর টাকার মালিক ছিলেন উনি।
আচ্ছা, মিঃ বার্কউড, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট চেয়ার ছেড়ে উঠতে বললেন, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বোনেদের ঠিকানা আপনার কাছে আছে?
মেরী পিয়ার্সনের ঠিকানা আমার জানা নেই, মিঃ বার্কউড জবাব দিলেন, তবে জেনিফারের ঠিকানা দিতে পারি আপনাকে। লিখে নিন–মিসেস জেনিফার গার্ডনার, দ্য লরেন্স, ওয়াল্ডক রোড, এক্সেটার।
আরেকটা প্রশ্ন, ঠিকানা লিখতে লিখতে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, মিসেস পিয়ার্সনের মোট কটি সন্তান?
যতদূর শুনেছিলাম তিনজন, মিঃ বার্কউড জবাব দিলেন, দুই মেয়ে আর এক ছেলে অথবা দুই ছেলে আর এক মেয়ে ঠিক মনে পড়ছে না।
আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ মিঃ বার্কউড বলে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট তার কামরা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। মেজর বারনাবিও এলেন তার পিছন পিছন। বাইরে বেরিয়ে আসার পরে কেউ কারো সঙ্গে একটি কথাও বললেন না, রাস্তা পেরিয়ে মোড়ের কাছে আসতেই ইন্সপেক্টর ন্যারাকট হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন। মেজর বারনাবিকে প্রশ্ন করলেন, এবার আপনাকে একটা প্রশ্ন করছি। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ঠিক বিকেল পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিটে মারা যান বলে আপনি একটা ভবিষ্যবাণী না এই ধরনের কিছু যেন বলেছিলেন শুনেছিলাম। ব্যাপারটা আসলে কি ঘটেছিল বলুন তো?
ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের প্রশ্ন শুনে মেজর বারনাবির মুখ অপমানে লাল হয়ে উঠল, সেকথা তো আগেই আপনাকে বলেছি।
খোলাখুলিভাবে কিছুই বলেননি, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মন্তব্য করলেন, আপনি যা বলেছেন আইনের পরিভাষায় তাকে বলে সত্যগোপন করা যা অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। আপনি যে খুনের নির্দিষ্ট সময়টি ডঃ ওয়ারেনকে সঠিকভাবে জানিয়েছিলেন নিশ্চয়ই তার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য ছিল। আমার মনে হয় সেই উদ্দেশ্যটা আমার জানতে আর বাকি নেই।
যদি জানেনই তাহলে আবার আমাকে প্রশ্ন করছেন কেন? বিরক্ত সুরে পাল্টা প্রশ্ন করলেন মেজর বারনাবি।
আমার মনে হয় ওইদিন বিকেল পাঁচটা পঁচিশ মিনিটে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে কারো দেখা করার কথা ছিল, তাই না মেজর বারনাবি?
আজ্ঞে না, একইরকম বিরক্তিভরা গলায় মেজর বারনাবি জবাব দিলেন, তেমন কিছুই ঘটেনি।
আপনাকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি মেজর বারনাবি, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট গম্ভীর গলায় বললেন, যা জবাব দেবেন ভেবেচিন্তে দেবেন। আচ্ছা, জেমস পিয়ার্সনের খোঁজখবর আপনি রাখেন?
জেমস পিয়ার্সন? অবাক হয়ে মেজর বারনাবি প্রশ্ন করনেল, কে সে? আপনি যার কথা বলছেন সে কি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের ভাগ্নেদের একজন?
আমার তো তাই মনে হচ্ছে, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জবাব দিলেন, তাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল জেমস, তাই না?
এ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই, মেজর বারনাবি রাগত গলায় বললেন, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর কটি ভাগ্নে ছিল তা জানি, কিন্তু তাদের কার কি নাম সে আমার জানা নেই।
আমি যার কথা বলছি সেই জেমস পিয়ার্সন গতকাল রাতে থ্রি ক্রাউন্স সরাইখানায় ছিল। আশা করি আপনি সেখানে তাকে ঠিক চিনতে পেরেছিলেন?
ভুল করছেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, একইরকম বিরক্তি আর রাগতসুরে মেজর বারনাবি জবাব দিলেন, আমি কাউকে চিনতে পারিনি, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের ভাগ্নেদের কাউকে জীবনে দেখিনি।
কিন্তু এইটুকু নিশ্চয়ই জানেন যে, গতকাল বিকেল পাঁচটা পঁচিশ মিনিটে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে ওঁর কোনো এক ভাগ্নের দেখা করার কথা ছিল?
না, আমি এই সবের কিছুই জানি না। গর্জে উঠলেন ফের বারনাবি।
তাহলে এই বিকেল পাঁচটা পঁচিশ মিনিটের ব্যপারটা কি তাই খুলে বলুন।
বেশ, তাই বলছি, মেজর বারনাবি জবাব দিলেন, গোটা ব্যাপারটা এক ধরনের ছেলেমানুষি ছাড়া কিছুই নয়। অনেকেই এসব বিশ্বাস করেন না। শুনুন ইন্সপেক্টর, সামাজিকতা রক্ষা করতে এক একসময় মহিলাদের মন যে রক্ষা করতে হয় তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়, আর সেইভাবেই টেবিলটার্নিং নামে প্রেতচর্চার এক অনুষ্ঠানে আমি ওই দিন জড়িয়ে পড়েছিলাম। বলে মেজর বারনাবি সেদিন বিকেলে মিসেস উইলেটের বাড়িতে যা ঘটেছিল সংক্ষেপে তার বর্ণনা দিলেন।