কি ভয়ানক নৃশংস কান্ড। অল্পবয়সি কর্মচারীটি নিজের থেকেই হঠাৎ মন্তব্য করল, এই খুনের কথা বলছিলাম। এমন কান্ড এর আগে কখনো এক্সহ্যাম্পটনে ঘটেছে বলে শুনিনি।
বেশি কথা বা বাজে কথা একদম বলবেন না। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট তার পেশাদারী কড়া মেজাজে চাপা ধমক দিলেন, যে প্রশ্ন করব ঠিক তার জবাবটুকু বাস, তার বেশি কিছু নয়। এই সিটাফোর্ড হাউস তাহলে আপনাদের মাধ্যমেই ভাড়া দেওয়া হয়েছিল তাই না?
আজ্ঞে হ্যাঁ, পুরোনো একটা খাতা খুলে তাতে চোখ বুলিয়ে কর্মচারীটি জবাব দিল, লন্ডনে বালটিন হোটেল থেকে উনি আমাদের বাড়ি ভাড়া চেয়ে একটা চিঠি লিখেছিলেন।
চিঠিতে কি উনি সিটাফোর্ড হাউসের নাম উল্লেখ করেছিলেন?
না, তা করেননি, শুধু লিখেছিলেন যে শীতের সময়টা কাটানোর জন্য ওঁর একটা বাড়ি খুব দরকার, আর সে বাড়িটা ডার্টমুর অঞ্চলে হলেই ভালো হয়। উনি এও উল্লেখ করেছিলেন যে ওঁর কম করে আটটা ঘর দরকার।
সিটাফোর্ড হাউসের নাম কি আপনাদের খাতায় ছিল?
আজ্ঞে না। তা ছিল না, তবে ভদ্রমহিলা ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন এই বাড়িতে সেসব তেমনটিই ছিল। উনি মোটা টাকা ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেলেন।
মিসেস উইলেট কি বাড়িটা নিজে দেখতে এসেছিলেন?
আজ্ঞে না স্যার, খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে বাড়িটা নিজে চোখে একবারও না দেখেই মিসেস উইলেট তা ভাড়া নিতে রাজি হয়েছিলেন। চুক্তিনামায় সই করার বেশ কিছুদিন বাদে উনি গাড়ি চালিয়ে এসে হাজির হলেন সিটাফোর্ডে। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর সঙ্গে আলাপ পরিচয় করলেন, তারপর সেদিনই বাড়িতে ঢুকলেন। পরে আমাদের জানিয়েছিলেন যে বাড়িটা ওঁর খুব পছন্দ হয়েছে।
নিজে চোখে না দেখে শুধু দালালের মুখ থেকে শুনেই ভদ্রমহিলা বাড়িটা নিতে রাজি হলেন, বাড়িতে ঢোকার পরে জানালেন এটা তার খুব পছন্দসই হয়েছে, এসব দেখে আপনার মনে কি ধারণা হয়েছিল খুলে বলবেন?
দেখুন, আমি যে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি, কর্মচারীটি মুচকি হেসে জবাব দিল, সেখানে এই শিক্ষাই পেয়েছি যে কোনো কিছু দেখেই অবাক হতে নেই।
আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, সহযোগিতা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মেজর বারনাবিকে সঙ্গে নিয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এবার পাশের কামরায় এসে ঢুকলেন। ওয়াল্টার্স অ্যান্ড বার্কউড সলিসিটার্স প্রতিষ্ঠানের অফিসটি এখানে। কার্ড পাঠাতেই মিঃ বার্কউড তাদের নিজের কামরায় ডেকে পাঠালেন।
মিঃ বাকউড বয়সে প্রবীন, সুন্দর সুপুরুষ এই পোঢ় এক্সহ্যাম্পটনের পুরানো বাসিন্দা, তার আগে তার বাবা আর ঠাকুরদাও এই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ছিলেন। মেজর বারনাবি পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের সঙ্গে করমর্দন করলেন।
আপনার কাছ থেকে কিছু তথ্য পাব আশা করেই এতদূর এসেছি,ইন্সপেক্টর ন্যারাকট উল্টোদিকের চেয়ারে বসে বললেন।
আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব সহায়তা করব, মিঃ বার্কউড গম্ভীর গলায় বললেন, বলুন কি জানতে চান।
আমি যতদূর শুনেছি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান তার শেষ উইল আপনাকে দিয়েই করিয়েছিলেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, সেটা একবার দেখাতে পারেন?
আপনি ঠিকই শুনেছেন, ইন্সপেক্টর, মিঃ বার্কউড বললেন, আমি এক্ষুনি উইলটা নিয়ে আনার ব্যবস্থা করছি। কথা শেষ করে মিঃ বার্কউড টেলিফোনে তাঁর জনৈক সহযোগীকে নিহত ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের উইলটা নিয়ে আমার নির্দেশ দিলেন। মিনিট পাঁচেক বাদে একজন ছোকরা কামরা থেকে একটি মুখ বন্ধ খাম এনে রাখল তার সামনে। কেরানীটি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পরে মিঃ বাকউড খামের মুখ খুলে ফেললেন, ভেতর থেকে টাইপ করা একটি দলিল বের করে পড়তে শুরু করলেন তিনি।
১। ……আমি জোসেফ অর্থার ট্রেভিলিয়ান, ঠিকানা সিটাফোর্ড হাউস, থানা সিটাফোর্ড, জেলা ডিভনসায়ার, আজ ঊনিশশো ছাব্বিশ সালের তেরোই অগাস্ট তারিখে আমার শেষ উইল লিখছি। সিটাফোর্ড হাউসের এক নম্বর বাংলোর বাসিন্দা মেজর জন এডওয়ার্ড বারনাবি এবং এক্সহ্যাম্পটনের সলিসিটর মিঃ বার্কউডকে আমি এই উইলের এক্সিকিউটার আর ট্রাস্টি হিসাবে নিয়োগ করছি।
২। আমার বহুদিনের পুরোনো ও বিশ্বস্ত পরিচারক রবার্ট হেনরি ইভানসকে আমি একশো পাউন্ড দিয়ে গেলাম যা সবরকম করের আওতা থেকে মুক্ত। তবে আমার মৃত্যু পর্যন্ত যদি ইভানস আমার অধীনে কাজে বহাল থাকে এবং অন্যকোথাও যাবার আগাম নোটিশ না দেয় শুধু সেক্ষেত্রেই ওই টাকা তার প্রাপ্য হবে।
৩। জীবিত অবস্থায় খেলাধুলায় জয়ী হয়ে যেসব পুরস্কার আমি অর্জন করেছি সেসবই বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসাবে আমি দিয়ে গেলাম আমার বন্ধু মেজর এডওয়ার্ড বারনাবিকে, আমি এ পর্যন্ত যেসব জন্তু শিকার করেছি তাদের মাথা এবং দেহের অন্যান্য অংশের মালিকানাও তারই ওপর বর্তাবে।
৪। আমার যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রী করে তা নগদ টাকায় পরিণত করার অধিকার বর্তাবে এই উইলের দুই এক্সিকিউটর ও ট্রাস্টির ওপরে। আমার মৃত্যুর পরে সরকার যেসব কর ধার্য করবেন সেই টাকা থেকে তারা তা মেটাবেন এবং এই টাকা তারা বিভিন্ন ধরনের লগ্নী ও লাভজনক ব্যবসায় খাটাতে পারবেন।
৫। আমার যাবতীয় বিষয় সম্পত্তির মোট চারভাগের একভাগ পাবেন আমার ভগিনী জেনিফার গার্ডনার। ওই টাকা জেনিফার নিজেই ইচ্ছা ও প্রয়োজন মত খরচ করতে পারবে।