সে তো বটেই, বলে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট থেমে গেলেন, এই মুহূর্তে তিনি মেজর বারনাবিকে আর চটাতে চাইলেন না।
যাকগে, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আরেকটা ব্যাপার আমার কাছে অদ্ভুত ঠেকছে।
কোন ব্যাপার বলুন তো?
এই সিটাফোর্ড হাউস ভাড়া দেবার ব্যাপার কি? জানি না আপনার নিজের অভিমত কি, কিন্তু আমার কাছে এটা সত্যিই অদ্ভুত।
এ ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে একমত, মেজর বারনাবি বললেন, শুধু আমি নই, সবাই এই একই কথা বলবে এবং সেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ইংল্যান্ডের এই গন্ডগ্রামে বাড়ি ভাড়া নেওয়া আমার মনে হয় ভদ্রমহিলার নিজের মাথার ঠিক নেই।
ভদ্রমহিলা আপনার পরিচিত?
নিশ্চয়ই, আমি তো ওঁর বাড়িতেই ছিলাম যখন
যখন কি? প্রশ্ন করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
ও কিছু নয়, বাদ দিন,বলে এমনভাবে হাত নাড়লেন বারনাবি যেন এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলতে চান না তিনি।
তীক্ষ্ণ চোখে মেজর বারনাবির চোখের দিকে তাকালেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট। বারনাবি যে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক কিছু যে তার কাছে গোপন করতে চাইছেন সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি এও বুঝতে পারলেন যে এক তীব্র দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে বারনাবির মনে, যার আভাস তিনি তখনও পর্যন্ত দেননি।
আপনি নিজ মুখে এক্ষুনি বললেন, যে আপনি সিটাফোর্ড হাউসে ছিলেন, গলা সামান্য চড়ালেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, ভদ্রমহিলা ওখানে কতদিন আছেন?
তা মাস কয়েক তো বটেই।
ভদ্রমহিলা বিধবা, একটি মাত্র মেয়ে ওঁর সঙ্গে থাকে, তাই না?
ঠিক বুলেছেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
তা এত জায়গা থাকতে হঠাৎ এই গণ্ডগ্রামে উনি থাকতে এলেন কেন সেকথা ভদ্রমহিলা বলেছেন?
বলেছিলেন, মেজর রুমালে নাক মুছে বললেন, আসলে ভদ্রমহিলা বড্ড বেশি কথা বলেন–শহরের কোলাহলের বাইরে বহুদূরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে থাকতে চান, এসব উনি বলেছিলেন, কিন্তু
আবার কথা শেষ না করে মঝপথে থেমে গেলেন মেজর বারনাবি।
কিন্তু এই কারণকে আপনার স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি তাই না মেজর? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
ঠিক তাই, মেজর বারনাবি মাথা নেড়ে সায় দিলেন, ভদ্রমহিলা সুন্দরী, কথা বলে বোঝা যায় বিদূষী, রুচিশীলা ও ফ্যাশান সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। ওঁর মেয়েটিও শিক্ষিতা, সুন্দরী ও স্মার্ট। ওঁদের এই গণ্ডগ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকাটা খুবই বেমানান।
মেজর, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন। আপনার কি ধারণা ওরা মা আর মেয়ে কারো কাছ থেকে পালানোর জন্যই এই গণ্ডগ্রামে এসে উঠেছে? ওরা কি এখানে লুকিয়ে আছে?
না, কখনোই তা আমার মনে হয় না, বারবি জবাব দিলেন, এই সিটাফোর্ড খুব ছোট জায়গা, এখানে কোনো কিছুই গোপন থাকে না। ওরা খুব মিশুকে আর অতিথিবৎসল। কেউ না কেউ রোজই বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়। আচার-আচরণেও খুব বনেদী।
আপনার কি মনে হয় ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে ভদ্রমহিলার আগে পরিচয় হয়েছিল?
না, তা হতে পারে না।
এত নিশ্চিভাবে কি করে বলছেন?
আচ্ছা, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে পুরানো পরিচয়টাকে কোনোভাবে কাজে লাগানোর পরিকল্পানা ওদের ছিল কি না একথা একবারও কি আপনার মনে হয় নি?
দেখুন, একটু ভেবে নিয়ে মেজর বারনাবি বললেন, সত্যি বলতে কি এভাবে ব্যাপারটা আদৌ আমি ভাবিনি, তবে আমার মনে হয় এই জাতীয় কোনো পরিকল্পনা ওদের ছিল না। জীবনের বহুসময় বিদেশে কলোনীতে কাটানো আর পাঁচজন ইংরেজের সঙ্গে ওদের কোনো তফাৎ নেই।
বেশ, তাই মেনে নিচ্ছি, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, এবার অন্য প্রসঙ্গে আসছি। মেজর, বাড়ি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নিজে বানিয়েছিলেন, তাই না?
হ্যাঁ,
আগে কখনো বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়নি, এটাও ঠিক?
নিশ্চয়ই।
তাহলে এই বাড়িতে এমন কিছু অবশ্যই নেই যার আকর্ষণে মিসেস উইলেট সেটা ভাড়া নিয়েছেন।
এটা একটা ধাঁধা, যদিও এর সঙ্গে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান হ্যাজেলমুর নামে যে বাড়িটা ভাড়া নিয়েছিলেন সেটা কার সম্পত্তি?
হ্যাজেলমুরের মালিক এক মাঝবয়সি অবিবাহিতা মহিলা, নাম মিস গারপেন্ট। প্রত্যেক বছর শীতের সময় উনি চেল্টেনহ্যাম বেড়াতে যান, সেখানে একটা বোর্ডিংয়ে ওঠেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মেজর বারনাবির উত্তরে এমনকিছুই ইন্সপেক্টর ন্যারাকট খুঁজে পেলেন না যা তদন্তের কাজে কোনোভাবে তাকে পথ দেখাতে পারে। বিরক্তিসূচক ভাবে ঘাড় নেড়ে তিনি আবার প্রশ্ন করলেন।
এই বাড়ির এজেন্ট তো উইলিয়ামসনস?
আজ্ঞে হ্যাঁ।
ওদের অফিসটা তো শুনেছি এক্সহ্যাম্পটনেই, তাই না?
ওয়াল্টার্স অ্যান্ড বার্কউডের পাশের কামরায়।
বাঃ! হঠাৎ উৎসাহিত হয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, তাহলে মেজর আসুন না। এক্ষুনি একবার ওখান থেকে ঘুরে আসা যাক, অবশ্য যদি আপনার আপত্তি না থাকে।
বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই, মেজর বারনাবি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, উকিলরা কি চীজ, তা নিশ্চয়ই জানেন। বেলা দশটার আগে মিঃ বার্কউডকে ওঁর অফিসে পাবেন না।
.
০৭.
মেজর বারনাবিকে সঙ্গে নিয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রথমে এলেন এস্টেট এজেন্ট মেসার্স উইলিয়ামসনের অফিসে। এরা বাড়ি আর জমির দালালী করে, এদের মাধ্যমেই মিসেস উইলেট সিটাফোর্ড হাউস ভাড়া নিয়েছিলেন। জনৈক অল্পবয়সি কর্মচারী তাদের অভ্যর্থনা জানাল, মেজর বারনাবি তার সঙ্গে ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের পরিচয় করিয়ে দিলেন এবং তিনি যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের তদন্তে এসেছেন তাও জানালেন।