দেখতে বেশ সুন্দর আর স্বাস্থ্যবান, মিসেস বেলিং বললেন, তবে চোখের চাউনি দেখলে মনে হয় যে মারাত্মক কোনো দুশ্চিন্তা সবসময় ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ছেলেটা এসে হাজির হল ঠিক লাঞ্চের সময়, খেয়েদেয়ে সাড়ে চারটে নাগাদ একবার বাইরে বেরোলো, যখন ফিরে এল তখন ছটা ছাব্বিশ।
লাঞ্চের পরে ও কোথায় গিয়েছিল তা বলতে পারেন? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
না স্যার, দুঃখিত, মিসেস বেলিং জবাব দিলেন, ও ভীষণ চাপা, মুখচোরা স্বভাবের ছেলে। নিজে থেকে কোনো কথাই বলে না। কথা শেষ করে মিসেস বেলিং রেজিস্ট্রারের পাতা খুলে এগিয়ে দিলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের দিকে।
জেমস পিয়ার্সন, লন্ডন, রেজিস্টারে নাম ঠিকানা দেখে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মন্তব্য করলেন, শুধু এইটুকু দেখে কিছুই বোঝা যায় না, তবু জেমস পিয়ার্সন সম্পর্কে আমাদের খোঁজখবর নিতে হবে। ভালো কথা, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বন্ধু মেজর বারনাবিকে এখন কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?
এখানে পাবেন, মিসেস বেলিং জানালেন, ডাইনিং হলে উনি অনেকক্ষণ হল ব্রেকফাস্ট খেতে ঢুকেছেন, এই তো একটু আগে আমি ওঁকে কফি দিয়ে এলাম।
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট ডাইনিং হলে ঢুকে দেখলেন ভেতের কেউ নেই, শুধু এককোণে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক খবর কাগজ পড়তে পড়তে কফির পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছেন। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এগিয়ে এসে তার মুখোমুখি বসলেন, কোনো ভূমিকা না করে নিজের পরিচয়পত্রখানা তুলে ধরলেন তার সামনে, বললেন, আপনিই মেজর বারনাবি?
হ্যাঁ, প্রৌঢ় ভদ্রলোক কফির পেয়ালায় আরেকবার চুমুক দিয়ে বললেন, আপনি হলেন গিয়ে–ইন্সপেক্টর ন্যারাকট। এখানে কেন এসেছেন তা বুঝতে পেরেছি।
আপনার ঘনিষ্ট বন্ধু ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের তদন্তের দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়েছে মেজর, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আশা করব এ কাজে আপনি আমায় প্রয়োজনীয় সহয়তা করবেন।
বলুন কি জানতে চান, কফির খালি পেয়ালা পাশে সরিয়ে রেখে মেজর বারনাবি বললেন, আমি যতদূর সম্ভব আপনাকে সহায়তা করব।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের কি কোনো শত্রু ছিল?
আমি যতদূর জানি দুনিয়ায় ওঁর কোনো শত্রু ছিল না? বারনাবি জবাব দিলেন।
ওঁর রান্নার লোক ইভানসকে কি আপনার বিশ্বাসী বলে মনে হয়?
নিশ্চয়ই, বারনাবি জোর গলায় বললেন, আমি জানি ট্রেভিলিয়ান ওকে খুব বিশ্বাস করতেন।
ইভানস হালে বিয়ে করায় ট্রেভিলিয়ান কি ওর ওপর খুব রেগে গিয়েছিলেন?
রেগে যাননি, বারনাবি মুচকি হেসে বললেন, তবে ভেতরে ভেতরে ওর ওপর কিছু বিরক্ত হয়েছিলেন যদিও এ ব্যাপারে ইভানসকে কোনোদিন মুখ ফুটে কিছু বলেননি তিনি। আসলে ট্রেভিলিয়ান নিজে ব্যাচেলার ছিলেন তাই।
আচ্ছা, আপনি তো ওঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন মেজর, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান কোনো উইল করেছিলেন কিনা বলতে পারেন? উনি ব্যাচেলার ছিলেন তাই জানতে চাইছি যে উইল তৈরি না করলে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের অবর্তমানে ওঁর সম্পত্তির মালিক কে হবে?
ট্রেভিলিয়ান উইল করে গিয়েছেন, মেজর বারনাবি বললেন, সেই উইলের এক্সিকিউটর উনি আমাকেই করেছেন।
টাকাকড়ি কি অবস্থায় উনি রেখে গেছেন তা বলতে পারেন?
দুঃখিত, ইন্সপেক্টর তা আমি বলতে পারব না।
ট্রেভিলিয়ানের অবস্থা নিশ্চয়ই খুব স্বচ্ছল ছিল?
শুধু স্বচ্ছল নয়,বারনাবি বললেন, উনি ছিলেন রীতিমতো ধনী, ওঁর মতো ধনী লোক এ তল্লাটে আর একজনও নেই।
ওঁর জীবিত আত্মীয়রা কে কোথায় আছেন তা বলতে পারেন?
আত্মীয়? ভুরু কুঁচকে কি ভেবে নিয়ে মেজর বারনাবি জানালেন, যতদূর জানি এক বোন আর কয়েকটি ভাইপো আর ভাইজি আছে। তবে তাদের কাউকেই আমি কখনো দেখিনি। আত্মীয়দের সঙ্গে ট্রেভিলিয়ানের কোনো ঝগড়াঝাটি বা মনোমালিন্য হয়েছে বলেও কখনো শুনিনি।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ওর উইল কোথায় রেখেছেন জানেন?
ওয়ালটার্স অ্যান্ড কার্বউডের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন, মেজর বারনাবি বললেন, ওরা এই এক্সহাম্পটনের বহুদিনের পুরোনো সলিসিটর। উইলটা ওরাই তৈরি করেছিল, ওদেরই জিম্মায় তা রয়েছে।
তাহলে মেজর বারনাবি, আমি এক্ষুনি একবার ওয়ালটার্স অ্যান্ড কার্বউডে যাব, আপনাকেও আমার সঙ্গে যেতে হবে।
তার মানে? মেজর বারনাবি বলে উঠলেন, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের তদন্তের সঙ্গে ওঁর উইলের কি সম্পর্ক?
মেজর, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট শান্তভাবে বললেন, আপনি আপনার বন্ধুর খুনের মামলাটাকে যতটা সাধারণ ভাবছেন বাস্তবে তা কিন্তু ততটা সাধারণ নয়। ভালো কথা, আপনাকে আরেকটা প্রশ্ন করব। মেজর বারনাবি, আমি জানতে পেরেছি ডঃ ওয়ারেনকে প্রশ্ন করেছিলেন বিকেল পাঁচটা পঁচিশ মিনিট নাগাদ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃত্যু ঘটেছিল কিনা?
যদি প্রশ্নটা করেই থাকি, মেজর বারবি কিছুটা রাগতসুরে বললেন, তাতে এমন কি অন্যায় হয়েছে?
ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন উঠছে না মেজর, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আমার ধারণা কোনো কারণে নিশ্চয়ই মৃত্যুর এই সঠিক সময়টা আপনার মাথায় গেঁথে গিয়েছে।
পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিট বলে এমন কি অন্যায় করেছি তাই তো বুঝতে পারছি না, বারনাবি আবার একইরকম রাগতসুরে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ইচ্ছে করলে আমি দুটো বেজে পঁচিশ অথবা চারটে বেজে কুড়ি মিনিটও বলতে পারতাম, তাতে কিছুই আসে যায় না।