মিসেস উইলেট মানুষ হিসাবে চমৎকার স্যার। ইভানস বলল, লোককে খাওয়াতে খুব ভালবাসেন। রোজ ওঁর বাড়িতে আত্মীয় বন্ধু কেউ না কেউ নিমন্ত্রিত হন।
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বুঝলেন তিনি যা জানতে চাইছেন সে সম্পর্কে ইভানস এর চাইতে বেশি আলোকপাত করতে পারবে না। অগত্যা মিসেস উইলেটের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
ইভানসকে পাঠিয়ে স্টাডি থেকে সার্জেন্ট পোলককে ডাকিয়ে আনলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলেন দুজনে।
কিরকম মনে হল স্যার? ইভানস সম্পর্কে ইশারায় মন্তব্য করলেন সার্জেন্ট পোলক, ওর বক্তব্যের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু পেলেন কি?
না, ওসব কিছু নেই, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট উত্তর দিলেন, ইভানস আমার প্রশ্নের উত্তরে যা কিছু বলেছে তার মধ্যে মিথ্যে বা সন্দেহজনক কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে ভবিষ্যতে ওর চরিত্রের কোনো পরিবর্তন ঘটবে কিনা তা কে বলতে পারে? অবশ্য একথা মানতেই হবে যে ইভানস খুব বুদ্ধিমান লোক, খুব হুঁশিয়ার হয়ে তবেই সে আমার এক একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে।
সার্জেন্ট পোলককে সঙ্গে নিয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এবার বাকি ঘরগুলো খানাতল্লাসি শুরু করলেন। গোটা বাড়িতে শোবার ঘর মোট তিনটে, এছাড়া আছে বাথরুম আর রান্নাঘর। দুটি শোবার ঘর একদম ফাঁকা। ভেতরে আসবাব দূরে থাক একটুকরো কাগজও পড়ে নেই। চারদিকে একপলক চোখ বুলিয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এ বিষয়ে নিশ্চিত হলেন যে গত কয়েক সপ্তাহ কেউই ওই দুটো ঘরের একটিতেও থাকেনি। এরপর তারা দুজনে এসে ঢুকলেন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের নিজের ঘরটিতে। এ ঘরটি দিব্যি ছিমছাম ও ঝকঝকে, তকতকে, সবকটি আসবাবই যথেষ্ট রুচিসম্মতভাবে সাজানো। আসবাবগুলোর দেরাজ আর আলমারি খুলে ভেতরে সবকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করলেন তারা দুজনে, কিন্তু কোনোরকম বিশৃঙ্খলা তাদের চোখে পড়ল না। প্রত্যেকটি জিনিস যথাস্থানে রয়েছে। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান যে খুব পরিপাটি স্বভাবের লোক ছিলেন সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
ট্রেভিলিয়ানের নিজের শোবার ঘর খানাতল্লাসি সেরে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট পোলককে সঙ্গে নিয়ে ঢুকলেন লাগোয়া বাথরুমে, কিন্তু সেখানেও সন্দেহজনক কোনো কিছু তাদের চোখে পড়ল না।
ওপরে তো কিছুই পাওয়া গেল না স্যার, সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে সার্জেন্ট পোলক মন্তব্য করলেন।
তাই তো দেখছি, সার্জেন্ট, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মন্তব্য করলেন, কিন্তু স্টাডিতে যেসব কাগজপত্র আছে সেগুলো এখনও আমাদের দেখা হয়ে ওঠেনি। আমি চাই এই কাজটা আপনি নিজে করুন তাছাড়া ইভানসকে এখনকার মতো আমি ছেড়ে দিচ্ছি, ও বাড়ি চলে যাক। পরে দরকার মতো আমি নিজে ওর বাড়িতে গিয়ে দেখা করব ওর সঙ্গে।
তাই হবে স্যার। সার্জেন্ট পোলক গোড়ালি ঠুকে অভিবাদনের ভঙ্গিতে সায় দিল।
লাশ এবার সরানোর ব্যবস্থা করুন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আচ্ছা, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের লাশ যিনি প্রথম পরীক্ষা করেছিলেন সেই ডঃ ওয়ারেন তো কাছেই থাকেন, তাই না পোলক?
হ্যাঁ স্যার।
ওঁর সঙ্গে একবার দেখা করা দরকার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, থ্রি ক্রাউনসের এপাশেই তো থাকেন উনি কেমন?
হ্যাঁ স্যার, পোলক ঘাড় নেড়ে হাসলেন।
তাহলে আমি আগে থ্রি ক্রাউনসের দিকেই যাব। নিন আপনি এখোন, সার্জেন্ট।
সার্জেন্ট পোলক দুটি আঙুল কপালের একপ্রান্তে ঠেকিয়ে আলতোভাবে স্যালুট করলেন তার ওপরওয়ালাকে। তারপর খাবার ঘরে ঢুকলেন তিনি। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন সেই বাড়ি থেকে, থ্রি ক্রাউনসের দিকে এগিয়ে চললেন তিনি।
.
০৬.
থ্রি ক্রাউনস সরাইখানার মালিক মিসেস বেলিং ইন্সপেক্টর ন্যারাকটকে খাতির করে বসালেন। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের প্রসঙ্গ উঠতেই গলা চড়িয়ে বলে উঠলেন তিনি, খুনীর আর দোষ কি, বাড়িতে ওঁর দেখাশোনা করার মতো দ্বিতীয় কেউ ছিল না, একটা কুকুর পর্যন্ত নয়। অথচ আপনিই দেখুন এখান থেকে এই বাড়ি কত কাছে। তাছাড়া এটা গন্ডগ্রাম হলেও আমার এই সরাইয়ের নাম অনেকেই জানে, বিশেষতঃ যাদের প্রায়ই ঘোরাঘুরি করতে হয়। খদ্দের তো এখানে কতই আসে, রাতও কাটায়, কিন্তু তাদের মনে কি অভিসন্ধি চাপা আছে তা কি জানা সম্ভব? আমি তো সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কখন কি হয় এই ভেবে?
আচ্ছা মিসেস বেলিং, ইন্সপেক্টর প্রশ্ন করলেন, গতকাল রাতে আপনার এখানে কে কে ছিল বলতে পারেন?
হ্যাঁ, পারব না কেন, মিসেস বেলিং একটু ভেবে নিয়ে বললেন, মোট তিনজন গতকাল রাতে এখানে ছিলেন তাদের দুজনেই সেলসম্যান। তৃতীয়জন এসে পৌঁছেছিলেন শেষ ট্রেনে, বয়স নিতান্তই কম। ওর নামটা মনে করতে পারছি না। ওহো, আরও একজন ছিল বটে। সে এসেছিল লন্ডন থেকে, ওর নামটাও রেজিস্টারে লেখা আছে। আজ সকালবেলাই সে চলে গেছে, বলেছিল ছটা দশের ট্রেন ধরে এক্সেটারে যাবে। এই লোকটিকে আমার একটু অদ্ভুত বলে মনে হয়েছিল।
কি কাজে এখানে এসেছে তা ও বলেছিল?
আজ্ঞে না, আমি বারবার জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু এ বিষয়ে ও একবারও মুখ খোলনি।
ছেলেটাকে দেখতে কেমন ছিল? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জানতে চাইলেন।