বিল ঘাড় নেড়ে বলল, হ্যাঁ ঠিকই তো, তাড়া খাওয়া খরগোসের মতই ছুটছিলেন ভদ্রলোক। একটু থেমে আবার বলল, তিনি তখন হ্যাঁরো রোড ধরেই যাচ্ছিলেন এবং এত দ্রুত গতিতে হাঁটছিলেন যে পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে তার নাগাল পাওয়া খুবই অসম্ভব মনে হল। তাছাড়া ভাবলাম মানিব্যাগ বা ওই জাতীয় কিছু নয়, হয়ত সামান্য একটা নোটবই মাত্র…হয়তো এটা তার বিশেষ কোনো কাজেই লাগবে না। কিছুক্ষণ থেমে দম নিল জো। তারপর আবার বলতে শুরু করল-ভদ্রলোকের চালচলনও যেন কেমন একটা ঠেকছিল। টুপিটা চোখের কোল পর্যন্ত নামানো ছিল। ওভার কোটের বোতামগুলোও আঁটা ছিল। সিনেমায় ঠক-জোচ্চরদের যেমন চেহারা হয় ঠিক তাকে তেমনই অনেকটা লাগছিল। এ সম্বন্ধে বিলের কাছে তখন কি একটা মন্তব্য করেছিলাম।
বিল সায় দিয়ে বলল-হা হা, মনে আছে আমার।
তবে কেবলমাত্র মতলববাজ ভদ্রলোক ছাড়া এবিষয়ে তখন আর কিছু মনে হয়নি। ভাবলাম, বাড়ি ফেরবার জন্য হয়ত খুব তাড়া আছে তার। এই জন্যেই তাকে কোনো দোষ দেওয়া যায় না। কারণ যা তখন ঠান্ডা পড়েছে।…
বিলও সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে বলল–দারুণ ঠান্ডা।
সেইজন্য বিলকে বললাম, নোটবইটা খুলে দেখ ভেতরে কোনো দরকারী কাগজপত্র আছে কিনা। কিন্তু দু-একটা ঠিকানা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া গেল না। তার মধ্যে একটা হচ্ছে চুয়াত্তর নম্বর কার্লভার স্ট্রীট, আর একটা কোনো হতচ্ছাড়া ম্যানর হাউসের।
মুখ বেঁকিয়ে বিল উচ্চারণ করল বিটজি।
বুকের মধ্যে জো এবার আস্থা ফিরে পেয়েছে। কণ্ঠস্বরের দৃঢ়তার আভাস শোনা গেল।
সে বলল, চুয়াত্তর নম্বর কার্লভার স্ট্রীটে, ঠিকানাটা পড়ে আমি বিলকে শোনালাম। যে রাস্তায় আমরা কাজ করছিলাম সেখান থেকে জায়গাটা বেশি দূরত্ব ছিল না। দুজনে পরামর্শ করে নিলাম, ফেরবার পথে ঐ বাড়িতে না হয় একবার খোঁজ নেওয়া যাবে। পাতা উলটে দেখা গেল ভেতরে এক জায়গায় কি একটা লেখা আছে মজার কথা। বিল আমার হাত থেকে নোটবইটা কেড়ে নিয়ে চেঁচিয়ে পড়তে লাগল সেই জায়গাটা। ছেলে ভুলনো একটা ছড়ার লাইন। তিনটি ইঁদুর অন্ধ… নিশ্চয় তামাশা করেই কেউ লিখে রেখেছে। এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই…হা স্যার ঠিক সেই মুহূর্তে একটা গোলমাল, একটা চেঁচামেচি আমাদের কানে এল একজন স্ত্রীলোক খুন –খুন বলে চীৎকার করছে। চীৎকারটা আমাদের কাছ থেকে খুব একটা দূরে ছিল না। কয়েকটা রাস্তার পরেই।
জো কিছুক্ষণের জন্য চুপ করল। যেন রহস্য নাটকের চরমতম উত্তেজনার মুহূর্তে এসে শ্রোতাদের উৎকণ্ঠিত চিত্তে যেন সুড়সুড়ি দিয়েছে–এরকম যেন একটা পরিস্থিতি।
আমি তখন বিলকে ব্যাপারটার খোঁজ আনতে পাঠালাম। অল্প পরে ও ফিরে এসে খবর দিল যে কিছু দূরে একটা বাড়ির সামনে অনেক লোকের ভিড় জমে গেছে। কয়েকজন পুলিসও সেখানে দাঁড়িয়ে গেছে। সেই ফ্ল্যাটবাড়ির একজন ভাড়াটে মহিলা খুন হয়েছেন। বাড়ির কত্রীই ঘটনাটা জানতে পারেন সর্বপ্রথম। তিনিই লোক জড়ো করেন চেঁচামেচি করে আর পুলিসকে খবর দেয়। বিলকে আমি প্রশ্ন করলাম খুনটা কোনো রাস্তায় হয়েছে। বলল, কার্লভার স্ট্রীটে। তবে বাড়ির নম্বরটা দেখে আসতে ও ভুলে গেছে।
অস্বস্তিতে নড়েচড়ে উঠল চেয়ারের মধ্যে বিল। দুবার শব্দ করে আসতে করে কাশলো বিল। তার দুচোখে একটা নির্বোধ অসহায় ছায়া। যেন তার কাছে এই কাজটা খুবই অপরাধজনক হয়ে গেছে।
জো আবার বলতে শুরু করল আমি তখন বললাম, আমাদের নিশ্চিত হওয়া দরকার। ডিউটি শেষ করার পর, বাসায় ফেরার পথে ওদিকটা ঘুরে যাবো। খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম বাড়িটার নম্বর চুয়াত্তর। এই ভদ্রলোকের নোট বইয়ের মধ্যে ঐ ঠিকানাটা লেখা ছিল। বিলের ধারণা ছিল খুনটার সঙ্গে এর হয়তো কোনো সম্পর্ক নেই। নেহাতই একটা কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু পরে শুনলাম যখন পুলিস কোনো এক ভদ্রলোককে খোঁজ করছে যাকে খুনের ঘটনার কিছু আগে ওই বাড়িতে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল–তখন আর চুপচাপ বসে থাকা যুক্তিযুক্ত মনে হল না। যিনি এই মামলার তদন্তের ভার নিয়েছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করবার চেষ্টা করলাম।….
বোধহয় আমি শুধু শুধু বাজে বকে আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করছি না?
নাঃ নাঃ তোমরা উচিত কাজই করেছে।
পারমিন্টার ভরসা দিলেন তাদের।
তোমরা যে বুদ্ধি করে নোটবইটা সঙ্গে নিয়ে এসেছে এ জন্যেও অনেক ধন্যবাদ। পেশাদারী দক্ষতা সহকারেই তিনি দুজনকে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করলেন।
স্থান এবং কালের সম্বন্ধে ও অবহিত হলেন সবকিছু। কেবল পাত্রর বিবরণ সম্বন্ধেই তিনি তাদের কাজ থেকে বিশেষ কিছু আদায় করতে পারলেন না। হিস্টিরিয়া গ্ৰস্তা গৃহকত্রী যে বর্ণনা দিয়েছিল এরাও তার পুনরাবৃত্তি করলো, চোখ পর্যন্ত নামানো টুপি, ওভার শেটের বোতামগুলো আটা, থুতনি পর্যন্ত মাফলারটা ঢেকে দিয়েছে। কণ্ঠস্বর ছিল তার রুক্ষ এবং দুই হাতে ছিল দস্তানা যেটা ছিল পশমের।
যখন শ্রমিক দুজন চলে গেলেন তারপর পারমিন্টার চেয়ারে গা এলিয়ে বসে রইলেন। পালিশ করা ঝকঝকে টেবিলের উপর ময়লা রংচটা খোলা অবস্থায় পড়ে আছে নোটবইটা। সেটা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হবে ফিঙ্গার প্রিন্ট-এর জন্য।
তাদের সাহায্যে এর মধ্যে গুপ্ততথ্য আবিষ্কৃত হতে পারে। কিন্তু এখন তার দু-চোখের দৃষ্টি কালো কালিতে লেখা দুটো ঠিকানার দিকে নিবদ্ধ। দরজা ঠেলে সার্জেন্ট কেন্-কে ঘরে ঢুকতে দেখে পারমিন্টার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন। এদিকে এসো কেন্ জিনিসটা একবার নিজের চোখে পরীক্ষা করে দেখে যাও।