কাগজের পাতায় যদিও ছবিটা ভালো করে ফুটে ওঠেনি। কেমন যেন অস্পষ্ট। সেই দিকে মলি অস্পষ্টভাবে তাকিয়ে ছিল। এমন সময় পেছন থেকে ক্রিস্টোফার রেনের ডাকে চেতনা ফিরে এল।
ছবি দেখে মনে হয় নিম্নশ্রেণীর অসৎ চরিত্রের কোনো মহিলা তাই নয় কি? বেশ্যাদের মুখের চেহারা সাধারণত এই রকমই হয়ে থাকে। তাছাড়া পাড়াটাও খুব নোংরা। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো নিগূঢ় তথ্য আছে বলে তো আমার মনে হয় না।
বিরক্তি সহকারে নাক কুঁচকিয়ে মিসেস বয়েল বললেন–মেয়েটা যে তার যোগ্য শাস্তিই পেয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
মিঃ রেন বেশ আগ্রহের সুরে কথা বলে মহিলার দিকে তাকালেন। পরে বললেন, তাহলে আপনার ধারণা এটা কোনো যৌন অপরাধমূলক ঘটনা?
মহিলা উত্তর দিলেন, সে বিষয়ে আমি কোনো উত্তর বা ইঙ্গিত করিনি, মিঃ রেন।
তিনি বললেন কিন্তু মেয়েটাকে তো গলাটিপেই মারা হয়েছে তাই নয় কি? আমি ভাবছি –ভদ্রলোক তার দীর্ঘ সাদা হাতদুটো সামনে মেলে ধরে বললেন, কাউকে গলা টিপে খুন করার সময় হত্যাকারীর মনের মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তাই নাকি মিঃ রেন?–ভদ্রমহিলা বললেন।
ক্রিস্টোফার রেন ভদ্রমহিলার দিকে দুপা এগিয়ে গিয়ে বললেন–আচ্ছা মিসেস বয়েল, আপনাকে কেউ যদি খুন করে তাহলে আপনার মনে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে সে বিষয়ে কোনোদিন চিন্তাভাবনা করেছেন?
মিসেস বয়েল আগের মত উদ্ধত সুরে বলে উঠলেন, তাই নাকি মিঃ রেন? আপনি তো খুব…
মলি এবার বাকি অংশটুকু খবরের কাগজ থেকে পড়লেন। এই ব্যাপারে জোর জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিস কর্তৃপক্ষ যে ব্যক্তির সন্ধান করছে তার গায়ে কালো ওভার কোট, মাথায় হোমবার্গ টুপি, উচ্চতা মাঝারি, গলায় একটা পশমের মাফলার জড়ানো।
রেন মন্তব্য করলেন, প্রকৃতপক্ষে চেহারার বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছে লোকটিকে দেখতে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতই। তার ঠোঁটের ফাঁকে মৃদু হাসির রেখা দেখা দিল।
মলি মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলল- হ্যাঁ, সাধারণ যে কোনো লোকের চেহারার সঙ্গেই এ বর্ণনা অবিকল মিলে যায়।
ইনসপেকটর পারমিন্টার স্কটল্যাণ্ডের ইয়ার্ডে তার নিজের ঘরেই বসে ছিলেন। সামনের চেয়ারে বসে ছিলেন ডিটেকটিভ সার্জেন্ট কেন।
পারমিন্টার বলনে আমি ঐ শ্রমিক দুজনকে ডেকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই।
হা স্যার, আমি খবর পাঠাচ্ছি আর্দালিকে।
পারমিন্টার প্রশ্ন করলেন, ওদের চালচলন কেমন?
উত্তরে বললেন– দেখলে মনে হয় শ্রমিক হিসাবে খুবই দক্ষ। হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে না। তাছাড়া ওদের ওপর নির্ভর করা যায়।
গম্ভীর ভাবে পারমিন্টার মাথা নাড়িয়ে বললেন।
অনতিবিলম্বে দুজন শ্রমিক ঘরের মধ্যে ঢুকল। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, চোখেমুখে একটা ইতস্ততঃ ভাব। পারমিন্টার একনজরে দুজনের আপাদমস্তক দেখলেন। লোকের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছেন।
মৃদু সুরে পারমিন্টার প্রশ্ন করলেন তাহলে তোমাদের বিশ্বাস মিসেস লিয়নের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তোমরা কিছু প্রয়োজনীয় খবরাখবর দিতে পারবে? তোমাদের সুবিবেচিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। তারপর তিনি একটা চেয়ারের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়ে বললেন বসতে। খোলা সিগারেটটাও তাদের সামনে এগিয়ে দিলেন।
শ্রমিক দুজন চেয়ারে বসে সিগারেট ধরাবার আগে পর্যন্ত স্থিরভাবে অপেক্ষা করলেন এবং তারপর বললেন–কি জঘন্য আবহাওয়া।
হা স্যার, যা বলেছেন! গাছ পাথর সব জমে যাওয়ার অবস্থা।
আচ্ছা এখন কাজের কথা শুরু হয়ে যাক। তোমরা কে কি দেখেছ বল?
শ্রমিক দুজন এবার কিছুটা ইতস্ততঃ বোধ করল। দুজনের চোখেই একটা কুণ্ঠিতভাব দেখা গেল। ঘটনার যথাযথ বর্ণনা দেওয়াটা তাদের কাছে যেন ছিল এক দুঃসাধ্য ব্যাপার।
মোটাসোটা লোকটা তার সঙ্গীকে অনুরোধের সুরে বলল–তুমিই না হয় বলনা জো!
অল্প কেশে জো বলল–না… মানে আসল ব্যাপারটা হচ্ছে তখন আমাদের কাছে কোনো দেশলাই ছিল না।
প্রশ্ন করা হল–তোমরা তখন কোথায় ছিলে?
উত্তর দিল– জারম্যান স্ট্রীটে। রাস্তার ধারে গ্যাস সরবরাহের পাইপ মেরামত করছিলাম।
মাথা দোলা দিলেন ইনসপেক্টর পারমিন্টার। পরে তিনি স্থান এবং কালের নিখুঁত বিবরণ সংগ্রহ করতে পারবেন। জারম্যান স্ট্রীট যে অকুস্থলের খুব কাছে তা তিনি জানেন।
উৎসাহ দেবার সুরে তিনি বললেন, তোমাদের কাছে তখন কোনো দেশলাই ছিল না?
উত্তর দিল না স্যার। আর যখন আমার দেশলাইটা ফুরিয়ে গিয়েছিল, বিলের লাইটারটাও তখন জুলছিল না। সেইজন্য একজন পথচারী ভদ্রলোককে ডেকে তার কাছে দেশলাই আছে কিনা তা জানতে চাইলাম। তখন তাকে দেখে বিশেষ কিছুই মনে হয়নি… নেহাৎ একজন সাধারণ ভদ্রলোক বলেই মনে হল।…
আবার মৃদুভাবে মাথা নাড়লেন পারমিন্টার।
তিনি পকেট থেকে দেশলাই বার করে এগিয়ে দিলেন। কিন্তু মুখে কোনো কথা বললেন না। বিল-ই ভদ্রতার খাতিরে বলল–কি জঘন্য ঠান্ডা। হাত পা যেন সব অসাড় হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ তা বটে। ছোট্ট করে জবাব দিলেন তিনি। তার কণ্ঠস্বরের মধ্যে যেন একটা রুক্ষস্বর। মনে হল বুকে সর্দি জমেছে। অগ্রিম ধন্যবাদ জানিয়ে ভদ্রলোককে দেশলাইটা দিলাম ফেরত। তখনই আমার নজরে পড়ল তার পকেট থেকে কি যেন একটা মাটিতে পড়ে গেছে। কিন্তু তাকে ডেকে সে বিষয়ে কিছু বলবার আগেই দ্রুত পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। তবু আমি পেছন থেকে কয়েকবার তাকে ডাকাডাকি করলাম, তবে তিনি ততক্ষণে বাঁদিকে মোড় ঘুরিয়ে চোখের বাইরে চলে গেলেন। তাই না বিল?