ওপরে উঠতে উঠতে জিল জবাব দিল–না, না, ওসব কিছুই করা নেই।
জিল চলে যাবার পর মিঃ রেন বলে, আমার বিশ্বাস, আপনার স্বামীটি আমায় খুব একটা ভালো নজরে দেখেন না। উনি আগে কি করতেন? ও নিশ্চয় নৌবাহিনীর লোক।
ছোট্ট করে মলি জবাব দিল–হ্যাঁ।
মিঃ রেন বলেন, আমি ঠিকই আন্দাজ করেছি তাহলে। স্থলবাহিনী বা বিমানবাহিনীর লোকেদের চেয়ে স্বভাবতই ওদের সহনশীলতা কিছু কম থাকে।… আচ্ছা কতদিন হলো আপনাদের বিয়ে হয়েছে? আপনি কি আপনার স্বামীকে গভীরভাবে ভালোবাসেন?
মলি বলল চলুন আপনাকে ঘরটা দেখিয়ে দিই, আপনি নিশ্চয় ঘরটা দেখবার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
মিঃ রেন বললেন–হ্যাঁ, একটু কৌতূহল তো আছেই। কিন্তু এই প্রশ্নটার জবাব পেতেও আমি আগ্রহী খুব। এটা আমার একধরনের নেশাও বলা যেতে পারে। একধরনের বাহ্যিক পরিচয়টুকু যথেষ্ট নয় আমার কাছে। তারা কি অনুভব করছে বা চিন্তা করছে সে সম্বন্ধেও আমার একটা অপরিসীম আগ্রহ করছে।
গম্ভীর কণ্ঠে মলি প্রশ্ন করল, মনে হয় আপনিই মিঃ রেন।
যুবকটি মাঝপথে থমকে দাঁড়িয়ে সহজাত অভ্যাসবশতঃ নিজের মাথার ঝাঁকড়া চুলটা কয়েক বার আঁকালেন।
কি আশ্চর্য আমার নিজের পরিচয়টাই এখনো ভালোভাবে জানানো হয়নি। অথচ এটাই তো সবচেয়ে জরুরী। এই অধমের নামই ক্রিস্টোফার রেন। দয়া করে নামটা শুনে হেসে উঠবেন না। আমার বাপ-মা ছিলেন কিছুটা রোমান্টিক ধাঁচের। তাদের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে আমি একজন উঁচুদরের শিল্পী হব। সেইজন্য বিশ্ববিখ্যাত স্থপতির অনুসরণে তারা আমার নাম রেখেছিলেন ক্রিস্টোফার। যেন কেবলমাত্র এই নামের জোরেই আমার স্থপতি হবার পৃথ একেবারে সুগম হয়ে উঠবে। অবাস্তব ধ্যান-ধারণা একবার ভেবে দেখুন তো?
মলি মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করল–আপনি কি একজন সত্যিই স্থপতি? অনেক চেষ্টা করেও সে তাদের হাসিটুকু দমন করতে পারল না।
বেশ গর্বের সুরে মিঃ রেন বলল–হ্যাঁ, নিশ্চয় অন্ততঃ কিছুটা তো বটে। অবশ্য পুরোপুরি স্থপতি হবার মত যোগ্যতা এখনো অর্জন করিনি। কিন্তু মনে মনে কল্পনা করতে ক্ষতি তো কিছু নেই। তবে দয়া করে একটা কথা মনে রাখা উচিত। পিতৃদত্ত এই নামটাই আমার স্থপতি হবার পথে প্রধান অন্তরায়। কারণ হাজার চেষ্টা করলেও ঐ স্থপতি রেনের সমতুল্য হতে পারা যাবে না। তবে ক্রিস্টোফার রেনের স্বকৃত পথই হয়ত একদিন আমাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেবে।
জিল ইতিমধ্যে নিচে নেমে গেছে। মলি রেনকে তাড়া দিয়ে বলল–আপনার ঘরটা দেখবেন চলুন। মিনিটকয়েক বাদে মলি যখন নিচে নেমে এল জিল জিজ্ঞেস করল-ব্যাপার কি, ওক কাঠের ছোট ছোট আসবাবপত্রগুলো কি ভদ্রলোকের পছন্দ হয়েছে?
মলি বলল, ভদ্রলোক ছাতা লাগানো মেহগনি কাঠের জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফুলের নকশা করা মশারি তার চাই। তাই একরকম বাধ্য হয়েই পাশের ঘরটাই বন্দোবস্ত করে দিয়েছি।
বিরক্ত কণ্ঠে জিল গজগজ করে বলতে থাকে–যত সব বখাটে চ্যাংড়াদের দল!
মলি তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করল–শোন জিল, আমার কথাটা মন দিয়ে শোন। আমরা এখানে কোনো নিমন্ত্রিত অতিথি আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করিনি এটা ব্যবসা আমাদের। এখন প্রশ্ন এই ভদ্রলোককে অর্থাৎ ক্রিস্টোফার রেনকে তুমি পছন্দ কর কিনা।
অকপটে জিল বললনা, মোটেই পছন্দ করি না।
মলি বলল–কিন্তু আমার মতে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উপর খুব একটা জোর দেওয়াটা আমাদের উচিত নয়, ভদ্রলোক সপ্তাহের শেষে সাত গিনি দিতে রাজী হয়েছেন– এইটুকুই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট।
হ্যাঁ তিনি যদি ঠিকঠিক পাওনা গণ্ডা মিটিয়ে দেন তাহলেই–জিল বলল।
মলি বলল–তাকে তো আমাদের সাপ্তাহিক চার্জের কথা বলা হয়েছে এবং তাতে তিনি রাজীও আছেন বলে আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। সে চিঠি আমাদের কাছে আছে।
জিল বলল–তুমি কি নিজের হাতে ভদ্রলোকের স্যুটকেসটা পাশের ঘরে রেখে এসেছ?
মলি বলল–না। তিনি তার স্যুটকেসটা উঠিয়ে নিয়ে গেলেন।
জিল বলল–খুব ভালো কথা। তবে আমার পক্ষে এটা বওয়া খুব একটা অসুবিধা হত না। ওর মধ্যে যে পাথরের নুড়ি ভরা নেই এ বিষয়ে নিশ্চিত আমি। জিনিষপত্র আছে কিনা সে সম্বন্ধে এখন সন্দেহ জাগছে আমার মনে!
মলি ইশারায় সচেতন করে দিয়ে জিলকে বলে উঠল স.স.. চুপ ভদ্রলোক বোধহয় নেমে আসছেন।
ক্রিস্টোফার রেন নিচে নেমে লাইব্রেরীর ঘরের দিকে এগিয়ে এলেন। এই লাইব্রেরী ঘরটা নিয়ে একটা গর্ব আছে মলির। ঘরটা বেশ প্রশস্ত এবং খোলামেলা। চেয়ারগুলোও ছিল বেশ মজবুত আর বড়সড়। উষ্ণতা সঞ্চারের জন্য দুধারে চুল্লীর ব্যবস্থা মনোরম। আধঘণ্টার মধ্যে ডিনার পরিবেশন করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হল। রেন ছাড়া বর্তমানে অন্য কোনো অতিথি নেই সে কথাও মলি বলল। ভদ্রলোক জানালেন যে সে ক্ষেত্রে তিনি রান্নাঘরে এসে মলির কাজের সাহায্য করতে পারেন।
রেন বেশ সাগ্রহে বলে উঠল, প্রয়োজন হলে আমি ওমলেটও ভেজে সাহায্য করতে পারি। মলিও বিশেষ কোনো আপত্তি দেখালো না। রান্না ঘরে ঢুকে কাপপ্লেট ধোয়া পোঁছার, কাজেও যথেষ্ট সাহায্য করলেন ভদ্রলোক। যদি ব্যাপারটা ঠিক প্রথাসিদ্ধ নয়, রাত্রে নিজের বিছানায় শুয়ে মনে মনে চিন্তা করলো মলি।
অতিথিশালার রীতিনীতি ঠিকমতো পালিত হলো না। এবং জিলও এজন্যে খুবই অপ্রসন্ন। তবে আগামীকাল অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত হবার পর তখন তো আর এ ধরনের বেনিয়মের কোনো সুযোগ থাকবে না।