জলি বলল, কি করে তুমি টের পেলে? এখনও তো চোখে দেখনি তুমি তাকে।
মলি কোনো উত্তর দিল না। টেবিলের ওপর পরিষ্কার কাগজ পেতে তার ওপর কতকগুলো মশলা দেওয়া ছানার কেক সাজিয়ে রাখলো। তারপর একটা পাথরের সাহায্য পিষতে লাগলো। সেগুলো দেখে–এগুলো আমার কি কাজে লাগবে? বিস্ময়ের সুরে প্রশ্ন করলো জিল।
গরম টোস্টের ওপর এই কেকের গুঁড়োগুলো পুরু করে লাগিয়ে দেওয়া হবে। ঠোঁটের ফাঁকে রহস্যময় হাসি ছড়িয়ে জবাব দিল মলি।
প্রথমে নরম রুটির টুকরোর সঙ্গে সেদ্ধ আলুর টুকরো মিশিয়ে স্যাণ্ডউইচ তৈরি করবো।
তারপর গরম স্যাণ্ডউইচের ওপর এই কেকের গুঁড়ো গুলো পুরু করে মাখালে এক নতুন ধরনের খাবার তৈরি হবে।
সত্যিই তুমি একজন পাকা রাঁধুনী। প্রশংসার সুরে বলে উঠলো জিল।
এ বিষয়ে আমার মাঝে মাঝে সন্দেহ জাগে।
যে-কোনো একটা দিকে মন দিলে আমি সেটা খুব ভালোই করতে পারি।
কিন্তু অনেকগুলো ঝামেলা এক সঙ্গে ঘাড়ে এসে চাপলে তখনই দুচোখে অন্ধকার দেখতে হয়।
বিশেষ করে ব্রেকফাস্টের জোগান দেওয়া তো আমার কাছে খুবই পরিশ্রম সাধ্য ব্যাপার।
কেন?
কারণ তখন দশভূজা রূপ না ধরলে সমস্ত কিছু সামাল দেওয়া যায় না।
একই সঙ্গে ডিম সেদ্ধ, শুয়োরের মাংস, গরম দুধ, কফি, টোস্ট সবই দরকার।
দুধটা হয়তো উথলে উঠলো, কিংবা টোস্টটা বোধহয় পুড়ে গেলো
আবার মাংসটা যেন বেশি ভাজা না হয় বা ডিমটাও সেদ্ধ হতে হতে শক্ত না হয়ে যায় সেদিকেও সজাগ লক্ষ্য রাখতে হবে।
শিকারী বেড়ালের মতো ক্ষিপ্ত এবং তৎপর না হলে এঁটে ওঠা দুঃসাধ্য।
তাহলে একই সঙ্গে তোমার দশভূজা রূপ আর বিড়ালমূর্তি দেখে নয়ন সার্থক করবার জন্য কাল সারাদিনই আমি অলক্ষ্যে থেকে রান্নাঘরের আশেপাশে ঘোরাফেরা করব।
মলি বলল, জল ফোঁটানোর সময় হয়েছে, আমি কি জিনিষপত্র লাইব্রেরী ঘরে নিয়ে যাবো? খবর তো এক্ষুনি হবে। টি. ভি. তে খবর শুনতে শুনতেই না হয় আজকের চা খাওয়া পর্বটা শেষ করবো দুজনে।
জলি বলল, তুমি আজকাল যে পরিমাণে রান্নাঘরে কাটাতে শুরু করেছ তাতে ওখানেও একটা টিভির বন্দোবস্ত করলে মন্দ হয় না।
মলি বলল, তা ঠিকই বলেছো এই রান্নাঘরটা আমি খুব ভালোবাসি। এতবড় রান্নাঘর কোথায় পাবো? সমস্ত কিছুর জন্যেই কেমন সুন্দর পরিপাটি ব্যবস্থা আছে এবং আর একটা ব্যাপার এই ঘরটা বেশ বড়সড়ও আছে। এত বড় একটা রান্নাঘরের মধ্যে আমি ঢুকলে বেশ একটা স্বচ্ছলতা অনুভব করি। মনে হয় জীবনে যেন কোনো কিছুরই আর অভাব নেই। তবে এখনো পর্যন্ত নিজে হাতে যে রান্না করতে হয়নি তা ভাগ্য অনেক ভালো।
জলি বলল–আমার ধারণা এতবড় রান্নাঘর ব্যবহার করলে রেশনে এক বছরে যে জ্বালানি বরাদ্দ করা হয়েছিল তা এখানে একদিনেই শেষ হয়ে যাবে।
মলি বলল, সে তো হবেই। আপনি আর মলির সংসারের জন্যে তো আর এ রান্নাঘর তৈরি। হয়নি। এখানে যজ্ঞ বাড়ির রান্না বাঁধা যাবে। সেইসব দিনগুলোর কথা একবার ভাবো তো। এখানে ঘরে ঘরে ভেড়ার রাঙ আর গোরুর নিতম্ব ঝলসানো হচ্ছে। বিরাট কাঁচের পাত্রে সুরক্ষিত রাখা আছে চিনির আরকে জরানো ঘরে তৈরি সুস্বাদু স্ট্রবেরির আচার। ভিক্টোরিয়ান যুগের লোকেরা কি সুখেই না কাটিয়ে গেছে তাদের দিনগুলো। দোতলায় আসবাবপত্রগুলো দেখিয়ে দিও, সমস্ত কেমন মজবুত আর আরামদায়ক। ব্যবহার করা যায় সেগুলো কত সহজেই। আর সেই সঙ্গে আমাদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটের কথাও চিন্তা কর।
আসবাবপত্রগুলোও কত হাল্কা। ঠিক মতো ব্যবহারের উপযোগীও নয়। কোনো ড্রয়ার যদি একবার বন্ধ করা যায় তাহলে হাজার টানাটানিতেও তা আর খোলা যাবে না। জানলাটা খুলতে গেলে দেখা যায় যে তার গায়ে ছিটকিনির ব্যবস্থা নেই।
জিল বাধিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক। সময় সময় খুবই বিরক্তি ধরিয়ে দেয়।
চল, খবর শুনতে যাই। বোধ হয় খবর শুরু হয়ে গেছে।
প্রাত্যহিক খবরে আবহাওয়া সম্বন্ধে উদ্বেগজনক ভবিষ্যদ্বাণী করা হল। বৈদেশিক পররাষ্ট্র নীতিতে আগের মতোই অনড় অচল অবস্থা। পার্লামেন্টের ওপর দিয়ে বির্তকের ঝড় বইছে বাত-প্রতিবাদিমূলক। প্যাডিংটন অঞ্চলে কার্লভার স্ট্রীটে সংঘটিত হয়েছে একটা নৃশংস হত্যাকাণ্ড। শিকার হয়েছেন এই দুর্ভাগ্য এক মহিলা।…
মলির কণ্ঠে ক্ষুণ্ণ অভিযোগের সুর বেরিয়ে এল, আঃ! হাত বাড়িয়ে অফ করে দিল সুইচটা। কেবল অভাব আর অভিযোগের একঘেয়ে ক্লান্তিকর ধারাবিবরণী। আমি কিন্তু ওদের কম জ্বালানি কাজে লাগান আবেদনে আর কোনো কর্ণপাত করবো না। এই কনকনে ঠান্ডায় ওরা কি আমাদের জমে যেতে অনুরোধ জানাচ্ছে। তবে আমাদের যে মস্ত একটা বড় ভুল হয়েছে মানতেই হবে সেটা প্রথম সূত্রপাত হিসেবে শীতকালটা বেছে নেওয়া উচিত হয়নি। বসন্তকালে আরম্ভ হলে ভালো হত। মলি একটু চুপ করে আবার ভিন্ন সুরে বলল, যে মেয়েটা খুন হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে তার কথাটা।
কে? মিসেস লিয়ন?
ওর নাম কি লিয়ন? কে যে মেয়েটাকে খুন করল আর তার উদ্দেশ্যই বা কি ছিল?
হয়ত ওর ঘরের মেঝেয় অনেক ধন সম্পত্তি লুকনো ছিল।
আচ্ছা, রেডিওতে বললো যে ঘটনাস্থলের আশে পাশে ওই সময় এক জন সন্দেহভাজন লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে, তার সন্ধান পাবার চেষ্টা করছে পুলিস। তার মানে কি, ওই লোকটাই মেয়েটাকে খুন করছে?