ট্রেটার বলল, আর আপনাকে দেখে যতটা কমবয়সী মনে হয় আসলে কিন্তু ততটা ছেলেমানুষ আপনি নন।
১৯৪০ সালের ওই দুর্ঘটনার সময় আপনি স্থানীয় এ্যাবিভ্যালের স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন।
মলি বলল না আমি নই।
ট্রেটার উত্তেজিত হয়ে বলল, সত্যকে অস্বীকার করবেন না মিসেস ডেভিস।
মলি বলল–আমি সত্যি কথা বলছি। আপনি বিশ্বাস করুন।
লঙরিজ ফার্মের শিশুটা যে মারা গিয়েছিলো অত্যাচারের ফলে সে মারা যাবার আগে আপনার কাছে একটা চিঠি পাঠায়। কোনোরকমে চুরি করে সে ঠিকানাটা জোগাড় করে চিঠির মধ্যেই সাহায্য চেয়েছিল সে আপনার। কোনো ছাত্র ঠিক সময় মত স্কুলে হাজির হচ্ছে কিনা তার দায়িত্ব শিক্ষিকার। কিন্তু সে দায়িত্ব আপনি পালন করেননি। হতভাগ্য ছাত্রের অনুরোধটা আপনার পাষাণ হৃদয়ে এতটুকু নাড়া দেয়নি। এমন কি সেই চিঠিটারও কোনো গুরুত্ব দেননি।
মলি বাধা দিয়ে বলল-দাঁড়ান…দাঁড়ান, আপনি যার কথা বলছেন সে আমি নয়–সে আমার দিদি। আমার দিদি আমার থেকে সাত বছরের বড়। সে একজন শিক্ষিকা ছিলো। কিন্তু চিঠিটা সে অবজ্ঞা করেছে সে ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। আমার দিদি ওই সময় নিউমোনিয়ায় ভুগছিল। চিঠিটা তার হাতে এসে পৌঁছয়নি। এবং এই ব্যাপারটা সে বিন্দু বিসর্গও জানতো না। যখন খামটা সত্যিই তার হাতে পৌঁছল তখন আর করার কিছু ছিল না। সে ছেলেটা মারা গেল। আমার দিদি খুবই অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তার ওপর ওরকম একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় দিদি খুব ভেঙে পড়েছিল। মনে রাখবেন এই ঘটনার পেছনে তার কোনো হাত ছিল না। তবুও সে নিজেকে অপরাধী মনে করত। বিবেকের দংশন থেকে সে একটুও মুক্তি পায়নি। আমরা পুরো ঘটনাটা জানতাম বলে ঘটনাটাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করতাম। ভুলেও কখনও এ বিষয়ে কোনো কথা দিদির সামনে উল্লেখ করিনি। ব্যাপারটা আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মত মনে হত।
মলি নিজের অজান্তেই দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল, তার শরীরটা তখনও কাঁপছে। শেষে নিজেকে সংযত করে যখন আবার মুখ তুলে তাকাল তখন দেখল ট্রেটারের একজোড়া চোখ তার মুখের উপর পড়েছে।
ট্রেটার ধীরে ধীরে বলল–তা হলে আপনি নন আপনার বোন? যদিও তাতে কিছু এসে যায় না। তাই না। আপনার বোন… আপনার ভাই… তার ঠোঁটের কোণে দেখা গেল কুটিল হাসি। কথা বলতে বলতেই পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি যেন বের করলেন।
মলিও অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে ট্রেটারের হাতের জিনিষটার দিকে।
তারপর বলল–কিন্তু … কিন্তু পুলিসরা তো সবসময় রিভলবার নিয়ে চলাফেরা করে, আমার তাই ধারণা।
ট্রেটার বললেন– তবে আমি পুলিস নই মিসেস ডেভিস। তাই আপনি আমার হাতে রিভলবার দেখতে পাচ্ছেন, আমার নাম জিম। আমি হতভাগ্য জর্জের ভাই। আপনি আমায় পুলিস বলে মনে করেছিলেন আর এই মঙ্কসওয়েলে পা দেওয়ার আগে টেলিফোনের তারটা কেটে দিই। তার ফলে নতুন করে পুলিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো উপায় রইল না।
মলি কোনো কথা বলল না। তার দু চোখের মধ্যে আছে এক বিস্ময়। কোনো যাদুকর বুঝি তাকে যাদু করেছে। রিভলবারের নলটাও তার দিকেই তাক করা আছে।
ট্রেটার বলল–এক পা নড়বেন না মিসেস ডেভিস। চেঁচিয়ে লোক জড়ো করেও কোনো লাভ নেই। আপনার ফুসফুস দুটো তাহলে এই রিভলবারের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে।
ট্রেটারের মুখে সেই কুটিল হাসি। মলির হাবভাবে দেখা গেল একধরনের শিশুসুলভ ভাব। ট্রেটারের গলার স্বরও খুব বদলে গেছে। মনে হচ্ছে যেন কোনো কিশোর কথা বলছে।
ট্রেটার দু বার মাথা ঝাঁকিয়ে বলল–হ্যাঁ আমিই সেই হতভাগ্য জর্জের বড় ভাই। লঙরিজ ফার্মেই যে জর্জ মারা গিয়েছিল। ওই নোংরা নিষ্ঠুর মেয়েটাই আমাদের ওখানে পাঠিয়েছিল। ওই ফার্মের কর্মচারী মিসেস গ্রেগ খুবই আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছে। আপনিও আমাদের কোনো সাহায্য করেননি। তিনটে অন্ধ ইঁদুরের মত আমরা ওই ফার্মে বন্দী ভাবে জীবন যাপন করতাম। তখনই মনে মনে ভাবতাম বড় হলে আমি আপনাদের প্রত্যেককেই মেরে ফেলব। এই প্রতিজ্ঞার কথা আমি ভুলিনি এবং কিভাবে আমার এই প্রতিজ্ঞাকে সার্থক করব তা সবসময় ভাবতাম।
ট্রেটার একটু চুপ করে আবার বলতে শুরু করল, সেনাবাহিনীর ডাক্তাররা সবসময় আমাকে বিরক্ত করত। নানারকম অদ্ভুত প্রশ্ন করত। সেইজন্য আমি পালাবার পথ খুঁজছিলাম। কারণ আমার সন্দেহ হয়েছিল ওরা হয়ত আমাকে আটকে রাখতে চায়। কিন্তু এখন আমি সাবালক আমার স্বাধীন ভাবে কাজ করার অধিকার এখন হয়েছে।
মলি যেন তার বুদ্ধিটা কিছু ফিরে পেয়েছে। আলাপচারিতার মধ্যে এই খুনে জায়গাটাকে এখন ভুলিয়ে রাখতে হবে। মলি মনে মনে চিন্তা করল। এছাড়া কোনো উপায় নেই। তাহলে অন্ততঃ আত্মরক্ষার কাজটা হতে পারে।
মলি কাতর কণ্ঠে বলল– কিন্তু জিম শোন, আমাকে মেরে তুমি মুক্তি পাবে না। এখান থেকে যেতে পারবে না।
প্রশ্নটা শুনে জিমের মুখ কালো হয়ে গেল। বলল, হ্যাঁ আমার স্কী দুটোও কে লুকিয়ে রেখেছে অনেক খুঁজেও পাইনি।
জিম একটু থেমে আবার বলল– তবে এই মুহূর্তে আমার কোনো ভয় পাচ্ছে না। কেননা রিভলবারটা আপনার স্বামীর। আমি ড্রয়ার থেকে এটা চুরি করেছি। সকলে ভাববে আপনাকে তিনিই খুন করেছেন। তবে আমার তাতে কিছু এসে যায় না, সমস্ত ব্যাপারটাই বেশ মজার। এই ধরনের লুকোচুরি খেলতে আমার বেশ ভালোই লাগে।