মলি আস্তে করে মাথা নেড়ে বলল–হ্যাঁ। জিলের সঙ্গে নিশ্চয় কিছু-এর সম্পর্ক আছে? ও কি তোমায় কিছু বলেছে বা এমন কোনো কাজ করেছে…
না আসলে জিল নয়। ওই লোকটা…ওই লোকটা ভয়ঙ্কর…
ক্রিস্টোফার চমকে উঠে বলল–কাকে তুমি ভয়ঙ্কর বলছো? প্যারাভিসিনি?
মলি বলল-না না, সার্জেন্ট ট্রেটার!
রেন বল সার্জেন্ট ট্রেটার?
মলি বলল-হা, ওই ভদ্রলোকই ইঙ্গিত করলেন এমন কতগুলো ব্যাপার…জিলের ব্যাপারে এমন কতগুলো বাজে ধারণা ঢুকিয়ে দিলেন আমার মাথায়। আমি কোনোদিন সে সমস্ত বিষয়ে চিন্তা পর্যন্ত করিনি! এমন কি তাদের অস্তিত্বের কথাও জানা ছিল না আমার! লোকটি সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর। ঘৃণা করি আমি…এই ধরনের লোকদের ভীষণ ঘৃণা করি আমি…
চিন্তার ভাঁজ পড়ল ক্রিস্টোফারের ভূ দুটিতে। বিস্ময়ের আভাস ছিল তার কথার সুরে। জিল? …জিল। হ্যাঁ দুজনেই আমরা প্রায় সমবয়সী। যদিও ওকে বয়সে কিছুটা বড় দেখায় তবে তা নয় আসলে। হ্যাঁ, ঠিকই। জিলের সঙ্গেও নাকি অনেক মিল আছে অজ্ঞাত হত্যাকারীর। তবে মলি–এ সব চিন্তা খুবই হাস্যকর। ভিত্তিহীন অলীক কল্পনামাত্র। কারণ, কার্লভার স্ট্রীটে যেদিন ওই মেয়েটা মারা যায়, সেদিন জিল সারাক্ষণ তোমার সঙ্গেই ছিল এখানে?
মলি চুপ করে রইল। তার আড়ষ্ট চোখমুখ। মলির ভাবগতিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করল ক্রিস্টোফার। বলল–তবে কি জিল এখানে ছিল না?
মলি এবার উত্তর দিল। জড়িত গলায় বলল– সেদিন সারাক্ষণই জিল বাড়ীর বাইরে ছিল। খুব সকালেই সে বেরিয়েছিল গাড়ী নিয়ে। আমি জানতাম, শহরের অপরদিকে একটা নিলাম ঘর থেকে ও কিছু তারের জাল কিনতে গেছে। সেই কথা জানিয়ে গিয়েছিল আমাকে। এর মধ্যে এতটুকু অবিশ্বাস ছিল না, কিন্তু…
রেন প্রশ্ন করল–সেখানে কি ও যায়নি?
মলি ম্লানমুখে এগিয়ে গেল টেবিলটার দিকে, তারপর টেবিলের ওপর থেকে দুদিনের আগের ইভনিং স্ট্যাণ্ডার্ডটা তুলে আনল।
ক্রিস্টোফার কাগজটা সাগ্রহে নিয়ে বলল–এটা তো দেখছি দুদিনের পুরনো একটা লণ্ডন সংস্করণ?
জিল যখন ফিরে এলো তখন এই পত্রিকাটা ওর কোটের পকেটে ছিলো।
তাহলে…তাহলে ও নিশ্চয় লণ্ডনে গিয়ে থাকবে।
ক্রিস্টোফারের দৃষ্টিতেও সন্দেহের ছায়া। একবার মলির দিকে আর একবার কাগজটার দিকে ফিরে তাকালেন ক্রিস্টোফার।
ঠোঁট বেঁকিয়ে শিস্ দিতেও শুরু করলেন মৃদু সুরে। পরমুহূর্তে সংযত করলেন নিজেকে। এখন ওই সুরটার উপযুক্ত সময় নয়।
মলির চোখের দিকে একবারও না তাকিয়ে এবং খুব সুনির্বাচিত শব্দ সাজিয়েই তিনি তার বক্তব্যটা উপস্থিত করলেন।
কতটুকু জানো জিলের সম্বন্ধে তুমি?
থামো…থামো, চুপ করো!
আর্ত সুরে চেঁচিয়ে উঠলো মলি।
শয়তান ট্রেটারও আমাকে এই একই প্রশ্ন করেছিলেন।
অথবা এমন ধরনেরই একটা কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। বললেন, মেয়েরা প্রায়শই কিছু না জেনে সম্পূর্ণ অপরিচিত অজ্ঞাত কুলশীল কোনো পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। তাদের পূর্ব জীবন সম্বন্ধে তাদের স্ত্রীদের সঠিক কোনো ধারণা থাকে না।
যুদ্ধের সময়েই এমন ঘটনা বেশি ঘটে।
কেবলমাত্র পুরুষদের মুখের কথা বিশ্বাস করেই মেয়েরা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তিনি খুব একটা মিথ্যে বলেননি। এ ধরনের অনেক কাহিনীই ইদানীং শোনা গেছে।
তুমিও আবার এই একই কথা বলতে শুরু করো না।
আমি আর সহ্য করতে পারছি না! আমরা ভাগ্যচক্রে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছি বলেই এই সমস্ত চিন্তা-ভাবনা মনের মধ্যে উদয় হচ্ছে। যত অবিশ্বাস্যই শোনাক না কেন, যে কোনো অশুভ ইঙ্গিতই এখন আমরা অতি সহজে বিশ্বাস করে নেবো।
কিন্তু সেটা সত্যি নয়…আদপেই সত্যি না! আমি…
আচমকাই মলির বাক্যস্রোত মাঝপথে রুদ্ধ হয়ে এলো। ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হলো ভেজানো দরজাটা, ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল জিল।
থমথমে মুখ চোখ। তোমাদের অন্তরঙ্গ আলাপ-আলোচনায় কোনোরকম বাঁধা দিলাম না তো?
বিশেষ কাউকে উদ্দেশ না করেই তির্যক কণ্ঠে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলো জিল।
রেন অপ্রস্তুতভাবে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আমি আপনার মিসেসের কাছ থেকে কয়েকটা রান্নার টুকিটাকি শিখে নিয়েছিলাম।
তাই নাকি? ভালো ভালো!…দেখুন মিঃ রেন বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের আজগুবি গল্প করে বেড়ানো খুব একটা উচিত নয়। দয়া করে আপনি এখন রান্নাঘর থেকে বাইরে যান… কি আমার কথাটা কি আপনার মাথায় ঢুকল না?…
হ্যা..নিশ্চয়!
আর একটা কথা মনে রাখবেন। মলির কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। আমার স্ত্রী পরবর্তী শিকার হোক, এটা আমি চাই না!
ক্রিস্টোফার শান্ত গলায় বলল– সেইজন্যই, আমি মনে মনে এত উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছি।
এই সহজ কথাটার মধ্যে কোনো গূঢ় অর্থ আছে কিনা, সেটা গ্রাহ্য করল না জিল। তার মুখচোখ আরো পাঁশুটে হয়ে উঠল। জিল কঠিন স্বরে মন্তব্য করল–চিন্তা-ভাবনার দায়িত্বটা আমার উপর ছেড়ে দেন না কেন! আমিই আমার স্ত্রীকে দেখাশোনা করতে পারবো। যদি ভালো চান তো এখান থেকে আপনি চলে যান!
মলি নিবেদন জানাল–দয়া করে তুমি চলে যাও রেন!
রেন দরজার দিকে এক পা-এক পা করে এগোলেন। এগোতে এগোতে বলে গেলেন– তবে আমি কাছাকাছি আছি। তার এই বক্তব্যটা যে যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ সেটা বলাবাহুল্য।
জিল অধৈৰ্য্য ভঙ্গিতে বলল–আপনি কি যাবেন দয়া করে?