মেটকাফ জবাব দিলেন– তেমন কোনো উদ্দেশ্য আমার ছিল না : ইতস্ততঃ ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে ওদিকে ছোট্ট দরজাটা আমার চোখে পড়ল। দরজাটা খুলতেই দেখলাম একটা সরু সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে। ওই সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই চোরকুঠরিটার সন্ধান পেলাম।
মেটকাফ এবার জিলকে লক্ষ্য করে বললেন–আপনাদের মাটির নিচে ভাড়ার ঘরটা সত্যিই খুব সুন্দর। প্রাচীন মঠে মন্দিরে এরম গুপ্ত স্থান পাওয়া যায় সন্ধান করলে।
ট্রেটার বললেন–আমরা এখানে প্রাচীনকালের স্থাপত্য শিল্প নিয়ে গবেষণা করতে বসিনি, মেজর মেটকাফ এখানে একটা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।…মিসেস ডেভিস, আপনি আমার কথা শুনুন। আমি দরজাটা খোলা রেখেই বাইরে যাচ্ছি… কথাটা বলতে বলতেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল ট্রেটার। কয়েক সেকেণ্ড পর কোথায় দরজা ভেজানো একটা শব্দ কানে এল। যদিও শব্দটা ছিল খুবই ক্ষীণ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন– এই শব্দটাই কি আপনার তখন কানে এসেছিল?
মলি বলল হ্যাঁ, অনেকটা যেন এই রকমই।
ট্রেটার বললেন–এটা সিঁড়ির নিচে কাঠের আলমারির দরজা বন্ধ করার শব্দ। ঘটনাটা হতে পারে যে খুনী মিসেস বয়েলকে খুন করার পর হলঘরের মধ্যেই ফিরে যাচ্ছিল। এমন সময় মিসেস ডেভিসের পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি ওই আলমারির মধ্যে ঢুকে পাল্লাটা টেনে নেয়।
রেন উত্তেজিত ভাবে বললেন–তাহলে নিশ্চয়ই আলমারির গায়ে খুনীর আঙুলের ছাপ পাওয়া যাবে?
মেজর মেটকাফ বললেন কিন্তু ওই আলমারির হাতলের মধ্যে আমার আঙুলের ছাপও রয়ে গেছে।
ট্রেটার মাথা নাড়িয়ে বললেন–তা ঠিকই, তবে তার একটা সন্তোষজনক উত্তর আমরা পেয়েছি, তাই নয় কি?
জিল দৃঢ় কণ্ঠের সুরে বলল- দেখুন সার্জেন্ট, একথা ঠিকই যে বর্তমান পরিস্থিতিটা সামলানোর সব ভার সরকারীভাবে অর্পণ করা হয়েছে আপনার ওপরেই। তবে বাড়িটা যে আমার সে কথাও ভুলে গেলে চলবে না এবং আমারও একটা নৈতিক কর্তব্য আছে অতিথিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে। দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য আমাদের তো কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সার্জেন্ট সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন–যেমন…?
মানে…আমি বলতে চাই। এই অপকীর্তির প্রধান হোতা হিসেবে যার পর প্রথমেই সন্দেহ জাগে তাকে কি আপাতত আটক করে রাখা যায় না?
কথা থামিয়ে জিল এবার সোজাসুজি ক্রিস্টোফার রেনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।
আসন ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন ক্রিস্টোফার। উত্তেজনার আধিক্যে তার সুর কণ্ঠস্বর আরো তীক্ষ্ণ শোনালো। এটা সত্যি নয়। কখনোই সত্যি নয়।
আপনারা সকলে মিলে আমার পেছনে লাগছেন! প্রত্যেকেই আমাকে বিরূপ দৃষ্টিতে দেখে! আপনারা মিলে যুক্তি করে আমার উপর দোষটা চাপিয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু এটা তো উৎপীড়ন…
নির্মম নিষ্ঠুর উৎপীড়ন….
অমন ভেঙে পড়বেন না। শান্ত স্বরে উপদেশ দিলেন মেটকাফ।
শক্ত হোন…দৃঢ় হোন…নিজেকে সংযত করুন।
আপনার দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, মিঃ রেন। ধীর পায়ে এগিয়ে এলোে মলি।
উত্তেজিত রেনের পিঠে হাত দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করবার চেষ্টা করলো।
আমরা কেউই আপনার বিরুদ্ধে যাইনি। মলি ব্যাকুল দৃষ্টিতে ট্রেটারের দিকে তাকালে ভদ্রলোককে সে ভরসা দিল।
আমরা আগে থেকে কাউকেই অপরাধী হিসেবে ধরে নিয়ে, এইভাবে মামলা সাজিয়ে চেষ্টা করব। জবাব দিলেন ট্রেটার।
আপনি সেটা বুঝিয়ে বলুন, যে আপনি ভদ্রলোককে গ্রেপ্তার করতে যাচ্ছেন না।
না না, আপাতত কাউকেই গ্রেপ্তারের কোনো ইচ্ছা নেই।
তার জন্যে সুনিশ্চিত সাক্ষী প্রমাণের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তার কোনো আভাসই পাওয়া যাচ্ছে না।
জিল চেঁচিয়ে উঠলো, মনে হচ্ছে তোমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে, মলি।
সার্জেন্টের অবস্থাও সেইরকম।
ঠিক মতো বিচার বিবেচনা করে দেখা গেল, অপরাধীর চেহারার সঙ্গে একজনের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে, এবং জিল শোনে…
ঈশ্বরের দোহাই একটু শান্ত হও…
মলি বিধ্বস্ত অসহায় ভঙ্গিতে মিনতি করল। বলল, সার্জেন্ট ট্রেটার, আড়ালে আমি আপনার সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। যদি অনুগ্রহ করে এক মিনিট সময় দেন?
জেদের সুরে জিল বলল–আমিও থাকবো তোমার সঙ্গে।
মলি বলল–না জিল…তুমিও না! আমার অনুরোধ…
জিলের চোখে মুখে বজ্রের মেঘের মতই কালো ছায়া নেমে এল। বলল, কি যে আছে তোমার মাথায় তা আমি বুঝতে পারছি না!
অন্য সকলের সঙ্গে জিলও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। যাবার সময় খুব জোড়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
হ্যাঁ বলুন মিসেস ডেভিস, কি আপনার বক্তব্য?
মলির মুখ থেকে কিছুক্ষণের জন্যও উদ্বেগ ও বিভ্রান্তির ছায়াটাও সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়নি। গলার সুরে দেখা গেল অস্বস্তির ছোঁয়া। বলল–সার্জেন্ট ট্রেটার, বর্তমানের ঘটনার প্রসঙ্গে আপনি আমাদের কাছে লঙরিজের ওই মামলাটার উল্লেখ করেছিলেন। আপনার কি ধারণা, ভাগ্যহত ওই তিনটি অনাথ শিশুর মধ্যে এই সমস্ত খুনের জন্য দায়ী বড় ছেলেটিই? কিন্তু সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন না।
মিসেস ডেভিস, আপনার বক্তব্যটা খুবই যুক্তিসঙ্গত। তবে যাবতীয় সম্ভাবনা ইঙ্গিত করছে সেই দিকেই। মানসিক অস্থিরতা, সেনাবাহিনী থেকে পলায়ন, চিকিৎসকের রিপোর্ট….
মলি বলল হ্যাঁ, আমি জানি, ক্রিস্টোফারকে সন্দেহ করার প্রধান কারণ সেটাই। কিন্তু ওই ভদ্রলোকের দ্বারা এ কাজ সম্ভব বলে আমার মনে হয় না। নিশ্চয় আড়াল থেকে কেউ তাকে ইন্ধন জুগিয়েছে। আচ্ছা, ওই তিনটি বাচ্চার বাবা মা বা অন্য কোনো আত্মীয় স্বজনের সন্ধান পাওয়া যায়নি?