ট্রেটার জিজ্ঞেস করল–কোনো দরজা?
নিৰ্দ্ধিধার সুরে মলি বলল–ঠিক বলতে পারব না।
ট্রেটার জিজ্ঞেস করলেন মিসেস ডেভিস, একটু ভেবে দেখুন। ওপরে না নিচে..আপনার বাঁ দিকে না ডান দিকে…?
মলি বিরক্তিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল–আমি, সত্যিই জানি না সার্জেন্ট। এমন কি ঠিক শব্দ শুনেছি কিনা সে নিয়েও আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে!
জিল রাগের সুরে ঝাঁঝালো গলায় বলল–এইভাবে উৎপীড়ন করাটা খুব অন্যায়। ও যে এখনো রীতিমত অসুস্থ সেটা কি আপনার চোখে পড়ছে না?
ট্রেটার বললেন–আমি যে একটা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে এসেছি সেকথা আপনি ভুলে যাবেন না কম্যাণ্ডার ডেভিস।
জিল বলল-নামের আগে আর আমি ম্যাণ্ডার শব্দটা ব্যবহার করি না, সার্জেন্ট।
ট্রেটার মাথা নেড়ে বললেন–সে তো ঠিকই। তবে ওই যে বললাম আমি এখানে একটা খুনের তদন্ত করতে এসেছি। এবং এই ঘটনার আগে কেউ আমার কথা শোনেননি। আপনারা ভালো ভাবেই জানেন যে মিসেস বয়েলও আমার কথাটা বিশেষ গুরুত্ব দেখাননি। তিনি আমার কাছে খুব জরুরী খবরটাই গোপন করেছিলেন। আপনারাও তাই করেছেন। তাহলে আর কিছু আমার বলার নেই। মিসেস বয়েল মারা গেছেন এবং খুব তাড়াতাড়ি এই রহস্যের উদ্ঘাটন না করলে আরও একটা খুন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আর একটা…? যত সব অর্থহীন ধ্যানধারণা! … কেন আরেকটা খুন হতে যাবেই বা কেন?
বিমর্ষ মনে ট্রেটার জবাব দিলেন–কারণ, কাগজের টুকরোর মধ্যে আঁকা ছিল তিনটে ইঁদুরের ছবি।
জিলের গলায় শোনা গেল অবিশ্বাসের সুর। সে বলল–প্রতিটি ইঁদুরই কি এক একটা মৃত্যুর প্রতীক। কিন্তু…কিন্তু তার মধ্যে তো একটা সংযোগ থাকবে? মানে…মানে আমি বলতে চাই, ওই মামলাটার সঙ্গে কেউ কি জড়িত ছিলেন?
ছিলেন নিশ্চয়। বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাই দেখে তো এটাই মনে হচ্ছে!
কিন্তু আরেকটা হত্যাই বা এখানে ঘটবে কেন?
ট্রেটার উত্তর দিলেন তার কারণ, ওই নোটবইটাতে দুটো মাত্র ঠিকানারই উল্লেখ ছিল। একটা ছিল চুয়াত্তর নম্বর কার্লভার স্ট্রীট এবং অন্যটি মঙ্কসওয়েল ম্যানর। কালর্ভার স্ট্রীটে একটি মাত্র সম্ভাব্য শিকারের সন্ধান আমরা পেয়েছি। তিনি মারা গেছেন। কিন্তু মঙ্কসওয়েল ম্যানরের কথা সম্পূর্ণ আলাদা। এখানের ক্ষেত্রটা হল অনেক বড়।
এই সমস্ত চিন্তা ভাবনা ভিত্তিহীন ট্রেটার। লরিজ ফার্মের কুচক্রিরা যে পাকেচক্তে এখানে এসে হাজির হবেন, এরকম সম্ভাবনা খুব একটা ম আশা করা যায় না।
ট্রেটার বললেন–তবে কোনো কোনো পরিস্থিতিতে সম্ভাবনাটা এবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আপনি নয় নিজেই বিষয়টা একবার ভালোভাবে দেখুন! ট্রেটার এবার সমবেত অতিথিদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তারপর আবার বললেন মিসেস বয়েলের মৃত্যুর সময় কে কোথায় ছিলেন তার বিবরণ আপনারা আমাকে দিয়েছেন। যদিও সেটা আমি যাচাই করে নেব। মিঃ রেন, মিসেস ডেভিস যখন চীৎকার করে ওঠেন, তখন তো আপনি আপনার ঘরেই ছিলেন তাই তো?
মিঃ রেন সম্মতিসূচক চিহ্নে মাথা নাড়লেন।
ট্রেটার বললেন–মিঃ ডেভিস, আপনি দোতলায় শোবার ঘরে পরীক্ষা করছিলেন এক্সটেনশনটা–তাই তো?
জিল জবাব দিল, বলল–হ্যাঁ।
মিঃ প্যারাভিসিনি আপনি ড্রয়িংরুমে বসে পিয়ানো বাজাচ্ছিলেন তাই তো? যদিও আপনার বাজানা কেউই শুনতে পাননি!
প্যারাভিসিনি বললেন আমি খুব আস্তে আস্তে বাজাচ্ছিলাম। একেবারে নিচু পর্দায়, শুধুমাত্র একটা আঙ্গুল দিয়েই টোক মারছিলাম।
ট্রেটার জিজ্ঞেস করলেন–কোনো সুরটা বাজাচ্ছিলেন আপনি?
মিঃ প্যারাভিসিনি উত্তর দিলেন–তিনটে ইঁদুর অন্ধ। দোতলায় মিঃ রেন তখনও এই সুরটার শিই দিচ্ছিলেন, প্রত্যেকের মাথায় তখন এই একটিমাত্র সুরই খেলা করছে। হাসতে হাসতে বললেন প্যারাভিসিনি।
ব্যাজার মুখে মলি বলল–সুরটা যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি সাংঘাতিক।
মেটকাফ প্রশ্ন করলেন–টেলিফোন অচল হওয়ার কারণটাই বা কি? তারটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে কাটা হয়েছে?
আপনার ভয়টাই সত্যি মেজরডাইনিং হলের জানলার ঠিক পাশেই খানিকটা তার কেউ কেটে দিয়েছে। মিসেস ডেভিস যখন মৃতদেহটা আবিষ্কার করে চেঁচিয়ে উঠলেন তখনই এই ব্যাপারটা আমি আবিষ্কার করলাম।
তীক্ষ কণ্ঠে জিল জানতে চাইল–সমস্ত ব্যাপারটাই যেন কেমন অদ্ভুত। এর পেছনে হত্যাকারীর কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে হয়?
ট্রেটার জিলের আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বললেন–মিঃ ডেভিস, এই মুহূর্তে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। খুনী হয়ত মনে করেন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কাজের পক্ষে সেটা সহজ হবে। কিংবা হয়ত এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্যই নেই। আমাদের চিন্তাকে বাড়িয়ে তোলা বা আমাদেরকে ভুল পথে চালনা করাই হয়ত তার কারসাজি। অল্প একটু হেসে ট্রেটার আবার বললেন–প্রত্যেক খুনীই নিজেকে খুব চালাক আর বুদ্ধিমান বলে মনে করে। নিজেদের প্রতি আছে তাদের অগাধ আস্থা। কাজের ক্ষেত্রে অপরাধীদের মানসিক দিক নিয়ে আমাদের পরীক্ষা করতে হয়। এটা আমাদের ট্রেনিংয়ের একটা দিক। এই সমস্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত অপরাধীদের কাৰ্যসূচী খুবই কৌতূহলোদ্দীপক।
জিলের কণ্ঠে শোনা গেল ব্যঙ্গের ঝাঁঝ–আমরা কি বড় বড় বক্তৃতা বন্ধ করে বর্তমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারি?
ট্রেটার বললেন–হ্যাঁ, নিশ্চয় মিঃ ডেভিস। আমাদের কাছে এখন প্রধান আলোচ্য বিষয় দুটো। একটা হল-খুন, আর দ্বিতীয়টা হল বিপদ। এই দুটো শব্দের মধ্যে আমাদের লক্ষ্যটা নিয়ে যেতে হবে।…মেজর মেটকাফ, আপনার গতিবিধি সম্পকে আমাকে আগে পরিষ্কার হতে দিন। আপনার বক্তব্য এই হত্যাকাণ্ডের সময় মদের বোতল মজুত রাখবার জন্য মাটির নিচে যে চোরাকুঠরিটা আছে সেখানে ছিলেন আপনি। কি জন্য আপনি সেখানে গিয়েছিলেন?