ট্রেটার বললেন–হ্যাঁ, সেই সমস্ত ব্যাপারে আমি ঠিকসময়ে খোঁজখবর নেব।
জিল সহজ কণ্ঠে মন্তব্য করল– তবে একদিক দিয়ে আমাদের ভাগ্য ভালো। এই প্রচণ্ড দুর্যোগের মধ্যে সহজসাধ্য হবে না খুনীর আবির্ভাব।
ট্রেটার বললেন- হয়তো তার প্রয়োজন নেই আর মিঃ ডেভিস। জিল বড় বড় চোখে চেয়ে রইল। তারপর বলল– তার মানে? আপনি কি…?
দুদিন আগে মিসেস গ্রেগ মারা গিয়েছেন। আপনার প্রত্যেক অতিথি তো উপস্থিত হয়েছেন তারপরে, তাই নয় কি?
তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু একমাত্র মিঃ প্যারাভিসিনি ছাড়া প্রত্যেকেই তো আগে থেকে বুক করে রেখেছিলেন খবর দিয়ে।
সার্জেন্ট ট্রেটার গভীর নিঃশ্বাস ফেলেন একটা। তার কণ্ঠস্বরেও যেন একটা ক্লান্তির ছাপ। তিনি বললেন– এই খুনগুলোও আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।
খুনগুলো সম্বন্ধে আপনি কি বলতে বা বোঝাতে চাইছেন? আমি তো একটা খুনের কথাই জানি। আরও খুনের সম্বন্ধে বা আপনি কিভাবে এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন?
ট্রেটার বলল– কথাটা আপনি একপক্ষে ঠিকই বলেছেন। আগামী খুনটা আমর উচিত ছিল প্রতিরোধ করা। অন্ততপক্ষে তার জন্য চালিয়ে যাওয়া উচিত প্রচেষ্টা!
জিলের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল উত্তেজনায়। সে বলল– তবে…তবে আপনার আশঙ্কা সত্যি হয় যদি, এখানে একজন অতিথির সঙ্গেই ওই ছেলেটির বয়স মিলে যায় খুব। তিনি হলেন ক্রিস্টোফার রেন।
স্টাডিরুম থেকে সার্জেন্ট বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোলেন।
ট্রেটার বলল–মিসেস ডেভিস, আপনি আমার সঙ্গে একবার লাইব্রেরী ঘরে এলে আমি খুব খুশি হব। আমি সকলের সামনে বক্তব্য রাখতে চাই কতগুলো। অতিথিদের খবর দেবার জন্য মিঃ ডেভিসকে আমি পাঠিয়ে দিয়েছি।
ওয়ালটার র্যালে কি কুক্ষণেই যে এই বস্তুটির অবিষ্কার করেছিলেন, সেই কথা ভাবলেই আমি অবাক হয়ে যাই মঝে মধ্যে!
সার্জেন্ট ট্রেটার রসিকতাটি ঠিকমতো বুঝতে পারল না। তার মুখ ব্যাজার হয়ে এল বিরক্তিতে। মলিও নিজেকে সামলে নিল। কণ্ঠে ক্ষমা প্রার্থনার বিনীতভঙ্গি। সে বলল– আমি যেন এখনও ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছি না সম্পূর্ণভাবে।…ভাবতে গেলে এত অবাস্তব বলে মনে হয়…
এর মধ্যে অবাস্তবতা বলে কিছু নেই, মিসেস ডেভিস। সমস্তটাই যেন নিখুঁত পরিকল্পনা।
মলি জিজ্ঞাসার সুরে বলল- আচ্ছা লোকটার চেহারার বিবরণ নিশ্চয়ই আপনারা জানতে পেরেছেন?
ট্রেটার বলল- উচচতা মাঝারি, স্বাস্থ্যও খুব ছিপছিপে। গায়ে গাঢ় কালো রঙের ওভারকোট, বেশির ভাগটা মাফলারে ঢাকা। নিশ্চয় আপনি বুঝতে পারেন, যে কোনো সাধারণ লোকের চেহারার সঙ্গে এ বর্ণনা সম্পূর্ণ মিলে যায়। কিছুক্ষণ থেমে ট্রেটার বললেন আপনাদের বড় হলঘরটাতেও তো আমি তিনটে কালো ওভারকোট আর তিনটে হাল্কা বাদামী টুপি দেখলাম।
কিন্তু লণ্ডন থেকে তো কেউই আসেননি এখানে?
ট্রেটার বললেন– সত্যিই কি তাই, মিসেস ডেভিস? তারপরেই ট্রেটার দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে কোণের দিকে বড় টেবিল থেকে একটা খবরের কাগজ নিয়ে বললেন- এটা হচ্ছে উনিশে ফেব্রুয়ারীর ইভনিং স্ট্যাণ্ডার্ড। অর্থাৎ দুইদিন আগের লণ্ডনের সংস্করণ। নিশ্চয় পত্রিকাটি কেউ এখানে নিয়ে এসেছেন– তাই না?
মলি চোখদুটো বড় বড় করে তাকিয়ে বলল– কি আশ্চর্যের ব্যাপার। কোথা থেকেই বা এখানে এটা আসতে পারে। মনের অবচেতনে অস্পষ্ট এক স্মৃতির অনুরণন ঘটল তার।
ট্রেটার বললেন– লোকের মুখের কথাই সব সময় ঠিক বলে জেনে নেওয়া উচিত নয়। তাছাড়া যে সমস্ত অতিথিদের আপনি আশ্রয় দিয়েছেন এখানে তাদের সম্বন্ধে প্রায় কিছুই জানেন না আপনি একটুখানি থেমে ট্রেটার আবার বললেন আমার ধারণা, ব্যবসার ক্ষেত্রে দুজনেই একবারে আপনারা নবাগত।
ঘাড় নেড়ে মলি সায় দিয়ে বলল– হ্যাঁ আপনি ঠিকই ধরেছেন। এই মুহূর্তে তার নিজেকে আরো বেশি অনভিজ্ঞতা আর বেশি ছেলেমানুষ বলে মনে হচ্ছে।
ট্রেটার বলল- আপনাদের বিয়েটা খুব বেশিদিন হয়নি বলে মনে হচ্ছে।
মলির গলায় লজ্জার সুর ফুটে উঠল। সে বলল– সবে এক বছর এবং সেটাও ছিল খুব হঠাৎ!
অনুকম্পার ভঙ্গিতে ট্রেটার বলল– প্রথম দর্শনেই প্রেম, ওই জাতীয় কিছু তাই তো?
এ ধরনের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাকগলার জন্য মলি জানাতে পারল না কোনো তিরস্কার। শান্তভাবে মাথা দুলিয়ে বলল- হ্যাঁ। তারপর হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার জন্য দৃঢ় স্বরে বলল– বিয়ের আগে পনের দিনের পরিচয় আমাদের।
বিয়ের আগের উজ্জ্বল স্মৃতিতে তার চোখ দুটো আনন্দে নেচে উঠল। মধুর আবেশে তার বুকটা ভরে উঠল। তারা দুজনেই দুজনকে চেনে, জানে, এর মধ্যে কোনো ভুল নেই। দুঃখ দুর্দশায় ভরা পৃথিবীর বুকের ওপর তাদের দুজনের এই সাক্ষাৎটা খুব আশ্চর্যের হওয়াই স্বাভাবিক। একে অন্যের হৃদয়ে কি গভীর সুখই না বয়ে চলে। নিজের অজান্তেই একটা পাতলা হাসির রেখা সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল।
চমকে উঠে মলি নিজেকে সংযত করল। সার্জেন্ট ট্রেটার বেশ প্রশ্রয়পূর্ণ দৃষ্টিতেই তাকে দেখছিলেন?
ট্রেটার জিজ্ঞেস করলেন– আপনার স্বামী এ অঞ্চলের নিশ্চয় বাসিন্দা নন।
মলি হালকা ভবে মাথা নেড়ে বলল–না, ওর বাড়ি লিঙ্কনশায়ারে।
মলি জানালো তবে জিল ছেলেবেলায় কোথায় কিভাবে মানুষ হয়েছে তা সে জানে না, জিলের বাবা-মা এখন আর বেঁচে নেই– এইটুকুই সে জানে আর পুরনো দিনের কথা উঠলেই এড়িয়ে যায় জিল। মলির ধারণা, জিল খুব অসুখী ছিল ছেলেবেলায় তাই সেদিনগুলোকে সে ভুলে হকতে চায়।