মলি তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করল–ওই ফ্ল্যাট বাড়িতেই তো ভদ্রমহিলা খুন হয়েছেন, তাই না?
তরুণ সার্জেন্ট আত্মগত ভঙ্গিতে মাথা দুলিয়ে বললেন, অন্য ঠিকানাটা হচ্ছে মঙ্কসওয়েল ম্যানর।
মলি দু চোখ বিস্ময় মেশানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–কি বললেন..মঙ্কসওয়েল ম্যানর। কিন্তু সমস্তটাই কেমন যেন অবিশ্বাস্য!
সেইজন্যেই সুপারিন্টেন্টে হগবেন আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিলেন এত তাড়াতাড়ি। এই ঘটনার সঙ্গে আপনাদের কোনো যোগাযোগ আছে কিনা সেটাই এখন জানার বিষয়।-ট্রেটার কথাগুলো বলে ফেললেন।
জিলের কণ্ঠে অকপট অভিব্যক্তি শোনা গেল–কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সম্পর্কের আভাস পর্যন্ত নেই। এটা হয়ত কোনো কাকতালীয় ব্যাপার।
শান্ত স্বরে ট্রেটার উত্তর দিলেন-সুপারিন্টেন্টে এই ব্যাপারটাকে এত তুচ্ছ বলে মনে করে না। তার মতে এ ব্যাপারে সাধ্যমত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর যেহেতু বরফের ওপর স্কী পায়ে দিয়ে হাঁটা-চলা করতে আমি বিশেষ অভিজ্ঞ সেজন্য আমাকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন। আমি এখানকার সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করব। সকলের নিরাপত্তার জন্যও যথাসাধ্য তিনি ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়েছেন।
জিল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফিরে তাকিয়ে বলল–নিরাপত্তা…? হায় ভগবান! আপনি কি মনে করেন কারুর এখানে খুন হওয়ার আশঙ্কা আছে?
ট্রেটার বিনীত কণ্ঠে বললেন–আমি আপনাদের বিচলিত করতে চাই না। তবে সুপরিনটেন্ডেট হগবেন সেই রকম একটা কিছুর আশঙ্কা করছেন।
জিল প্রশ্ন করল–কিন্তু কেনই বা…
মাঝপথে জিলকে থামিয়ে দিয়ে ট্রেটার বলল– সেই কারণটার খোঁজেই আমি এখানে এসেছি।
তবে সমস্ত ব্যাপারটাই কেমন যেন উদ্ভট।
হ্যাঁ তা ঠিক, তবে উদ্ভট বলেই বেশি বিপজ্জনক হয়ত!
মলি এবার মন্তব্য করল, বলল, আমার বিশ্বাস, আপনি নিশ্চয় সমস্ত ব্যাপারটা এখনো আমাদেরকে খুলে বলেননি। কিছু একটা বাকি থেকে গেছে!
ট্রেটার বলল– হ্যাঁ ম্যাডাম, আপনার অনুমান অভ্রান্ত। নোটবইয়ে ঠিকানা লেখা পাতাটার উপর দিকে ছেলে ভুলানো একটা ছড়ার লাইন লেখা ছিল। তিনটে ইঁদুর অন্ধ। নিহত মহিলার পেপাশাকের সঙ্গেও পিন দিয়ে একটা আটকানো কাগজের টুকরো পাওয়া গেছে। তাতে লেখা আছে– এই প্রথম এবং কাগজটার নিচের অংশে তিনটে ইঁদুরের ছবি আঁকা। ছবির তলায় ওই ছড়াটার প্রথম দুলাইনের স্বরলিপি।
ঘুম পাড়ানি মৃদুস্বরে মলি বিড়বিড় করল।
তিনটে ইঁদুর অন্ধ।
জানলা কপাট বন্ধ
বন্ধ ঘরে তারা।
ছুটতে ছুটতে সারা….
আচমকা বন্ধ হয়ে গেল তারা। সত্যিই কি ভায়বহ– কি বীভৎস ব্যাপারটা! তিনটে অনাথ শিশু ছিল, তাই বললেন না?
হ্যাঁ তিনজন, একটি পনেরো বছরের ছেলে, আর একটি চোদ্দ বছরের মেয়ে আর একটি বারো বছরের ছেলে। এই ছেলেটিই মারা গিয়েছিল শেষ পর্যন্ত।
কি ঘটলো অন্য দুজনের ভাগ্য?
যতদূর খোঁজ পাওয়া গেছে, প্রৌঢ় দম্পতির এক নিঃসন্তান মেয়েটিকে নিজেদের পালিতা কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আমরা এখনও পাইনি সঠিক সন্ধান। অন্য ছেলেটির তেইশ বছর হবে এখন। আমরা তারও কোনো খোঁজ জানি না। তবে ছেলেবেলা থেকেই অদ্ভুত প্রকৃতির ছেলেটা ছিল। সেনা বিভাগে যোগ দেয় আঠারো বছর বয়সে, এবং বছর খানেক বাদেই সে নিরুদ্দেশ হয় সেনাবাহিনী ছেড়ে। সেনাবাহিনীর চিকিৎসক খুব জোরের সঙ্গেই বলেছিলেন: ছেলেটার মানসিক গঠন স্বাভাবিক নয়।
জিল প্রশ্ন করল– তাহলে আপনি কি মনে করেন সেই ছেলেটিই মিসেস লিয়নের হত্যাকারী? আর যেহেতু সে একজন বিকৃত মস্তিষ্কের, কোনো অজ্ঞাত কারণে সেইজন্যে এখানেও এসে পড়তে পারে সশরীরে?
আমাদের বিশ্বাস, এখানকার কোনো একজন বাসিন্দার সঙ্গে ওই মামলার কোনো সংযোগ আছে লঙরিজ ফার্মের সঙ্গে। এই যোগসূত্রটা জানতে পারলে বিষয়টা সহজ হয়ে আসত অনেকটা। এই যোগসূত্রটার সঙ্গে আপনার কোন যোগাযোগ নেই তাহলে মিঃ ডেভিস, মিসেস ডেভিস, আপনার কি এই একই বক্তব্য?
মলি বলল- আমি! ও…হ্যাঁ, নিশ্চয়…
এখানে কে কে অতিথি আছেন আর?
নামগুলো মলি একে একে বলে গেল। মিসেস বয়েল, মেজর মেটকাফ, মিঃ ক্রিস্টোফার রেন এবং মিঃ প্যারাভিসিনি। সমস্ত কিছুই ট্রেটার নোটবই খুলে লিখলেন।
ট্রেটার জিজ্ঞেস করলেন : চাকর-বাকর?
মলি জবাব দিল- আমাদের কোনো কাজের লোক নেই। এই দেখ, অনেকক্ষণ আগে আলুগুলো উনুনে চড়িয়ে এসেছিলাম সেদ্ধ করার জন্য, বেমালুম ভুলে গেছি সে কথাটাই। ভাগ্যিস মনে পড়ল আপনি চাকর-বাকরদের প্রসঙ্গটা তুললেন বলে।
দ্রুত পায়ে মলি বেরিয়ে গেল পড়ার ঘর ছেড়ে।
জিলের দিকে তাকিয়ে ট্রেটার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন–এই সমস্ত অতিথিদের সম্বন্ধে আপনি কি জানেন?
জিল ইতঃস্তত সুরে বলল– আমি…মানে আমরা…সত্যি বলতে কি, এদের সম্বন্ধে আমাদের খুবই সীমিত জ্ঞান। মিসেস বয়েল বোর্নমাউথের এক হোটেল থেকেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন আমাদের এখানে। মেজর মেটকাফ লিমিংটন থেকে এসেছেন। কেনসিংটনের একটা প্রাইভেট হোটেলে থাকতেন মিঃ রেন। একমাত্র প্যারাভিসিনিই যেন আকাশ থেকে এসে পড়লেন। কিংবা বলা যেতে পারে বরফের জটিল আস্তরণ ভেদ করেই আবির্ভাব হয়েছিল তার। ভদ্রলোকের গাড়িটা আটকে পড়েছিল মাঝরাস্তায় বরফে।…তবে আমরা ধারণা, প্রত্যেক অতিথিই তাদের পরিচয়পত্র বা ওই জাতীয় কিছু নিশ্চয় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন।