সেই অবস্থাতেই তুলে নিলো রিসিভারটা।
হ্যাঁ..বলুন, দূরভাষের অপর প্রান্ত থেকে একটা ভরাট গম্ভীর স্বর ভেসে এলো, মঙ্কসওয়েল ম্যানর…?
হ্যাঁ, এটা মঙ্কসওয়েল ম্যানর অতিথিশালা।
আমি কম্যান্ডর ডেভিসের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
অনুগ্রহ করে যদি একটু খবর দেন…
কিন্তু তিনি এখন ফোন ধরবার মতো ফুরসৎ পাবেন কিনা বলতে পারি না। জবাব দিলো মলি।
আমি তার স্ত্রী মিসেস ডেভিস।… আপনি কে কথা বলছেন?
বার্কায়ারের পুলিস-সুপারিন্টেন্টে হবেন।
আচমকা ধাক্কা খেয়ে মলি যেন চমকে উঠলো কিছুটা।
ও…তাই বুঝি..?
শুনুন মিসেস ডেভিস, একটা গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
টেলিফোনে অবশ্য সমস্ত ব্যাপারটা খুলে বলতে চাই না, তবে আমি ডিটেকটিভ সার্জেন্ট ট্রেটারকে মঙ্কসওয়েল ম্যানর-এর ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছি। যে কোনো মুহূর্তেই ট্রেটার আপনাদের ওখানে পৌঁছে যেতে পারে।
কিন্তু মনে হয় না ভদ্রলোক আসতে পারবেন বলে। পথঘাট সমস্তই বন্ধ হয়ে গেছে বরফে। রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করাই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
হগবেনের কণ্ঠস্বরে সুগভীর আশ্বাসের ধ্বনি। ট্রেটার যেভাবেই হোক পৌঁছে যাবে। সেজন্য চিন্তা করবেন না। তবে আপনার স্বামীকে জানিয়ে রাখবেন দয়া করে, ট্রেটারের কথা যেন শোনেন মন দিয়ে। এবং সে যা বলবে সেই নির্দেশই যেন মেনে চলেন। ব্যস্ আর কিছু নয়।
কিন্তু সুপরিনটেণ্ডেট হগবেন…. কেনই বা…।
মলি মাঝপথে থেমে গেল। হগবেন ইতিমধ্যে লাইন কেটে দিয়েছেন। তার অর্থ, তিনি বললেন যা এর বেশি তার আর কোনো বক্তব্য নেই। তবুও কয়েক মুহূর্ত বোকার মতন ফোন ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর রিসিভারটা ধীরে ধীরে নামিয়ে রাখল। ইতিমধ্যে দরজা ঠেলে জিল ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
মলির বুক থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ল। সে বলল –যাক তাহলে এসে পড়েছ তুমি।
জিলের লম্বা চুলের ফাঁকে ফাঁকে সাদা বরফ জড়িয়ে আছে। গালে ও কপালে কয়লার কালি। চোখে মুখে রয়েছে ব্যস্ততার ছাপ। বলে উঠল সে –তোমার ব্যাপারটা কি মলি? আমি কয়লার ঝুড়িগুলো সব বোঝাই করে রেখেছি, ঠিকমতো কাঠের ব্যবস্থাও রেখে দিয়েছি। এখন গিয়ে মুরগির ঘরটা দেখতে হবে। তারপর ব্রয়লারটা সুবন্দোবস্ত করতে পারলেই এ বেলার মত আমার ছুটি। কিন্তু তোমাকে যেন কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে….
মলি বলল –পুলিস কর্তৃপক্ষ ফোন করেছিলেন, জিল।
জিল অবিশ্বাসের সুরে বলল– পুলিস?
মলি ম্লান মুখে বলল, হ্যাঁ। তারা একজন ইনসপেক্টর না সার্জেন্ট –কাকে যেন এখানে পাঠচ্ছেন।
জিল বলল –কিন্তু কেন? কি আমাদের অপরাধ?
মলি বলল –তা বলতে পারব না। আচ্ছা আমরা যে দুই পাউণ্ড আইরিশ মাখন আনিয়েছি তার জন্যে শুল্কবিভাগ কোনো আপত্তি তোলেনি তো?
জিল ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর বলল –টি.ভি-র লাইসেন্সটা ঠিক সময় রিনিউ করা হয়েছে তো, তাই না?
মলি বলল –হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে সমস্ত ঝামেলা অনেক দিন আগেই মিটে গেছে। তবে সামনের বাড়ির বাসিন্দা মিসেস বিভূলকের কাছে আমি আমার পুরনো কোটটা দিয়ে নিয়েছিলেন পাঁচটা রেশনের কুপন। নিশ্চয় সেটা খুব একটা দোষের নয়, কারণ আমি যখন আমার পুরানো কোটটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি তখন পাঁচটা রেশনেরই বা কুপন ভোগ করতে পারবো না কেন?…কিন্তু…কিন্তু…এ ছাড়া কি-ই বা হতে পারে আর? কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ঠিক!…
দু-একদিন আগে খুব বড় একটা অ্যাকসিডেন্টর হাত থেকে আমি অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। তবে সে ব্যাপারে কোনো দোষ নেই আমার। অন্য গাড়িটাই হুড়মুড়িয়ে আমার গাড়ির ওপর এসে পড়েছিল। এমন কি তার আগে হর্ণ পর্যন্ত দেয়নি।
অপ্রসন্ন সুরে গুণ গুণ করলো মলি, বলল –নিশ্চয় আমরা কিছু একটা করেছি।
আজকাল মুস্কিল হচ্ছে, তুমি যা কিছু করতে যাও সমস্তই বেআইনি। –জিলের গলায় রাগের সুর ছিল। সে আবার বলতে শুরু করল সেইজন্য সব সময়ই নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী মনে হয়। তবে আমার বিশ্বাস এই অতিথিশালা সংক্রান্তই কিছু হবে। বিনা অনুমতিতে এ ধরনের কোনো ব্যবসা পরিচালনাটাই হয়তো আইনের চোখে দণ্ডনীয় অপরাধ!
আমার ধারণা কেবলমাত্র পানীয় পরিবেশনের ক্ষেত্রেই কিছু কিছু বাধানিষেধ চালু আছে। কিন্তু আমরা তো অতিথিদের টেবিলে কোনোরকম পানীয় সরবরাহ করিনি। তাহলে কেন নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবসা চালাতে পারব না?
হ্যাঁ, আমি জানি! তোমার কথার মধ্যে যুক্তিও আছে যথেষ্ট। তবে ওই যা বললাম, আজকাল হয়ত সমস্ত ক্ষেত্রেই সরকারী বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
হায় ভগবান! মলি দীর্ঘশ্বাস ফেললো, কেনই বা মরতে আমরা এই হোটেল খুলে বসতে গেলাম! প্রথম দিনই বরফ চাপা পড়ে — পথঘাট সব বন্ধ হয়ে গেলো। তার ফলে অসময়ের জন্যে যে সমস্ত টিনের খাবার আমরা মজুত করে রেখেছিলাম সে সবই অতিথিরা দুদিনে শেষ করে দেবে।
অল্পেতেই তুমি বেশি নার্ভাস হয়ে পোড়ো না। সান্ত্বনার সুরে জিল বললো, আমাদের হয়তো, এখন কিছুটা দুদিন যাচ্ছে, কিন্তু শীগগিরই দুর্যোগের মেঘ কেটে যাবে। অন্যমনস্ক ভাবে মলির কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো জিল। তাপর একটু থেমে সম্পূর্ণ ভিন্ন সুরে বলে উঠলো, একটা কথা কি জানো মলি, আমার কেবলই মনে হচ্ছে বিষয়টা নিশ্চয় খুব গুরুতর কিছু হবে। তা না হলে খামোকা একজন পুলিস সার্জেন্টকেই বা তারা এখানে পাঠাতে যাবে কেন? চোখ তুলে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে ইঙ্গিত করলো জিল, খুব জরুরী কিছু না হলে এমন দিনে…