হেনরিয়েটা–আপনি কখন অনুমান করলেন?
পৈরট–আমি শীঘ্রই বুঝেছিলাম যে, আপনারা যা করেছেন তার পেছনে আত্মীয়দের সমর্থন ছিল। কিন্তু কেন আপনি এটা করতে চেয়েছিলেন।
হেনরিয়েটা–কারণ, জন আমাকে করতে বলেছিল। সে জানত জাদা যা করেছে তার পরিণাম থেকে কেউ যদি রক্ষা করতে পারে সে আমি এবং সে জানত আমি সবকিছুই করব, কেননা জনকে ভালোবাসি। কাজেই প্রথমেই আমি রিভলবারটা পুলের জলে ফেলে দিলাম, তাতে আঙুলের ছাপ নষ্ট হয়ে যাবে। পরে যখন জানলাম যে, অন্য বন্দুক দিয়ে জনকে গুলি করা হয়েছে তখন আমি সেই বন্দুকটা খুঁজতে লাগলাম এবং খুঁজে পেলামও এবং আমার স্টুডিওতে লুকিয়ে রেখেছিলাম, পরে এনে যেখানে রাখলাম পুলিস সেখান থেকে উদ্ধার করেছে?
পৈরট–কাদামাটির মধ্যে?
হেনরিয়েটা কি করে জানলেন জিনিসটা কোথায় ছিল?
পৈরট–আপনার ঘোড়ার মডেল দেখেই বুঝেছিলাম আপনার মনে ছিল, ট্রয়-এর কাঠের ঘোড়া, কিন্তু আঙুলের ছাপ কি করে ম্যানেজ করলেন?
হেনরিয়েটা–একজন বুড়ো অন্ধ দেশলাই বিক্রি করে, সে জানত না ওটা কি? আমি তাকে ওটা ধরে থাকতে বললাম, আমি টাকা বার করছি বলে।
পৈরট–আমি জানি, বুঝতে পেরেছিলাম, জার্দা ক্রিস্টো ছাড়া সকলকেই জড়ানো হচ্ছে।
হেনরিয়েটা–জাদার কী করা হবে?
পৈরট-জার্দার ব্যাগ উল্টে দিল, তা থেকে সোয়েড এবং অনেক রঙিন চামড়ার টুকরো পাওয়া গেল। পৈরট চামড়াগুলো সাজিয়ে হোলস্টার তৈরি করল। আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি।
হেনরিয়েটা–কেউ কোনোদিন জানবে না, প্রকৃত কি ঘটেছিল। তবে আমার মনে হয় একজন ঠিকই জানবে, সে ডাক্তার ক্রিস্টোর ছেলে। একদিন সে অবশ্যই আমার কাছে এসে সত্য ঘটনা জানতে চাইবে। কিন্তু আপনি তাকে বলবেন না।
পৈরট-হ্যাঁ, আমি তাকে বলব, টেরি কেবল জানতে চায়। বিজ্ঞানীর কাছে সত্যটাই বড় কথা। তা সে গ্রহণ করবে এবং বেঁচে থাকবার মতো নির্ভরশীল অবলম্বন করে তুলবে। আর আপনি চলে যান, আপনার স্থান জীবিতদের মধ্যে।
.
৩০.
লন্ডনের পথে গাড়ি চালাতে চালাতে দুটো চিন্তা হেনরিয়েটার মনে জেগে উঠল–আমি কী করব, আমি কোথায় যাব? এখন সে প্রতি নিশ্বাসে বলছে, জন…জন। সে ভাবল, আমি যদি সেই চা পান করতাম!
হঠাৎ তার মনের উপরের কালো পর্দা সরিয়ে সে ভাবল, হ্যাঁ আমি অবশ্যই সেখানে যাব–আমি সেন্ট ক্রিস্টোফার হাসপাতালে যাব। হাসপাতালে মিসেস ক্যাবট্রি ডাক্তার ক্রিস্টোর জন্য দুঃখ করছিল।
বৃদ্ধা বলল-দুঃখে ভেঙে পড়ো না, যা যাবার তো চলে গেছে, তা তো ফিরে আসবে না। একাকী খালি করছিল।
জন তুমি বলেছিলে, আমি যদি মরে যাই, প্রথম যে কাজ তুমি করবে, তা হচ্ছে তোমার চোখ দিয়ে অশ্রু গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে–আর তুমি একটি শোকাকুল রানীর মূর্তি বা অন্য কোনো শোকের মূর্তি গড়তে শুরু করবে।
সে ভাবল, আমি যা, উহা তাহাই। মিডগে এবং এডওয়ার্ড আইন্সউইক চলে গিয়েছে। তার মধ্যে সত্যতা ছিল–শক্তি ছিল। উষ্ণতা ছিল। কিন্তু আমি একটা পূর্ণব্যক্তি নই–আমি আমার নিজের নই, কিন্তু আমার বাইরের কোনো এক সত্ত্বার। আমি আমার মৃতের জন্য শোক করতে পারি না। তার পরিবর্তে আমি আমার দুঃখ দিয়ে একটি স্ফটিকের মূর্তি তৈরি করব।
এগজিবিট নং ৫৮ ‘শোক’ স্ফটিক– মিস হেনরিয়েটা স্যাভারনেক…।
এক নিশ্বাসে সে বলল, জন আমি যা-না করে পারলাম না, তার জন্য আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে ক্ষমা করো।