- বইয়ের নামঃ পসটার্ন অফ ফেট
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
পসটার্ন অফ ফেট
১. ট্রুপেন্স আর টমি
ট্রুপেন্স আর টমি স্বামী স্ত্রী। তারা পুরানো বাড়ি কিনেছিল। তাতে অনেক পুরানো জিনিষপত্র ছিল। কাজের, অকাজের অনেক জিনিষ ছিল। বিক্রি করার সময় বাড়ির মালিক ওঁদের জিনিষগুলো নিয়ে ফাঁকা করে দিতে বলল। বাড়িটাতে তারা দুজনে বই নিয়ে পড়ছিল। বাড়িটায় বহু জিনিষপত্রের সঙ্গে একরাশ বই ছিল।
এখানে আসবার সময় ওরা সাথে করে দুতিনটে বাক্স এনেছিল। প্রয়োজনীয় বইগুলো নিয়ে তারা বাকী বইগুলো বিক্রি করে দেবে।
দুজনে গল্প করতে করতে তাক থেকে বইগুলো নামিয়ে কাড়াকাড়ি করে বাক্সে রাখছিল। সেই সময় ছোটবেলার অনেক বই তাদের হাতে আসছিল। তাদের ছোটবেলার অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। টমি তেমন উৎসাহী ছিল না বইগুলোর ব্যাপারে। ট্রুপেন্স কিন্তু উৎসাহের সঙ্গে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিল। টমি চলে গেল নিজের উদ্দেশ্যে।
ব্ল্যাক অ্যারো বইটা ট্রুপেন্সের হাতে এলো। বইটা খুলে তার কপালে ভাঁজ পড়ল। বইটার একটা ব্যাপার তাকে কৌতূহলী করে তুলল। বইটির একটি পাতার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। পাতার সংখ্যা চৌষট্টি কি পঁয়ষট্টি হবে। পাতাটির বিশেষ বিশেষ শব্দের বিশেষ বিশেষ বর্ণের নিচে দাগ টানা আছে। তার মাথায় কিছুতেই এলো না কেন বর্ণগুলোর নিচে দাগ দেওয়া আছে। তার মনে হল শব্দগুলির থেকে বিশেষ বিশেষ এক একটা শব্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা ট্রুপেন্সের কাছে ভালো ভাবে পরিষ্কার হয়ে গেল। টমি ট্রুপেন্সকে একটি পাতায় লালকালি দিয়ে টুকে নিয়ে বুঝিয়ে দিল কয়েকটা বাক্যকে কেউ মজা করে ঐ ভাবে প্রকাশ করেছে।
ট্রুপেন্স টমির এই ধাঁধা সমাধানে বেশী বিস্মিত হল না। বিস্মিত হল বর্ণ মিলিয়ে বাক্য কয়েকটির সারমর্ম বুঝতে পেরে। বাক্য কয়েকটি এইরকম ছিল।
মেরি জর্ডন স্বাভাবিক ভাবে মারা যায়নি। আমাদের মধ্যে একজন ছিল, আমি জানি সে কে?
পরের দিন বাড়ি ফিরে টমি ট্রুপেন্সকে দেখতে না পেয়ে তার মাথায় ট্রুপেন্সের কোন খারাপ কিছু হয়েছে এই ভাবনা মাথায় এল। সে ওপরে গেল।
মন দিয়ে ট্রুপেন্স বেশ কয়েকবার লাইনগুলি পড়ছিল। কিন্তু সে কিছুতেই বিচ্ছিন্ন ভাবে দাগ দেওয়া বর্ণগুলির অর্থ বুঝতে পারছিল না।
শেষে সে টেবিলে বসে বর্ণগুলোকে লেখার চেষ্টা করল। সে মুহূর্তে টমি এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল বইগুলো কতদূর গোছান হয়েছে।
টমি ওকে ব্ল্যাক অ্যারো বইটির দাগ দেওয়া বর্ণের ধাঁধাটার কথা বলল।
ও বলল স্টিভেনসনের এই বইটা আরো কয়েকবার পড়ার ইচ্ছা ছিল। সে পড়েছিল। পড়তে গিয়ে তার হঠাৎ নজরে পড়ল একটা পাতায় কয়েকটা বর্ণকে লালকালি দিয়ে দাগ দেওয়া।
কিন্তু ব্যাপারটিতে টমি ট্রুপেন্সের মত ধাঁধিয়ে গেল না।
সে ভাবল হয়তো আবার কোন বই নিয়ে পড়েছে। সেখানেও দেখতে না পেয়ে নিচে নেমে এলো। কুকুর হ্যানিবলকে ডেকেও কোন সাড়া পেল না।
ট্রুপেন্সকে আসতে দেখে টমি রেগে গিয়ে জানতে চাইল কোথায় গিয়েছিল। এবং যখন সে জানতে পারল ট্রুপেন্স কবরখানায় গিয়েছিল তখন টমি অবাক হয়ে যায়। শেষে বুঝল তার ধাঁধার মেরী জর্ডনের মৃতদেহ সেখানে কবর দেওয়া হয়েছিল কিনা দেখতে গিয়েছিল।
টমির জর্জ আণ্ডারউড নামে একজন বন্ধু ছিল ট্রুপেন্স তাকে চেনে। টমিকে আরও জানাল সে একজন মেয়ে। কথাবার্তা চলতে চলতে তাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেল।
বিকেলে দুজনে চা খেতে খেতে টমি বলল, বুড়ো আইজ্যাককে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু জর্ডন নামের কাউকে মনে করতে পারল না। টমি ট্রুপেন্সকে জিজ্ঞাসা করল পেতলের কাজটা কি করবে? ট্রুপেন্স জানাল যে সে হোয়াইট এলিফেন্ট মেলে নিয়ে যাবে। টমি জানাল সে ওর মতো যাবে, তাহলে ওটা বয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
টমি দরজা খুলে কুকুরটার পেছন পেছন দৌড়াল, কুকুরটার গলার দড়িটা খুলে তার হাতে রয়ে গেল। হ্যানিবল কবরস্থানে এসে পৌঁছালে টমি তার গলায় দড়িটা পরিয়ে দিল। কুকুরটি লেজ নাড়তে লাগল ওর কাছে আসবে বলে।
টমি চার্চের কাছে জীর্ণ পাথরের সমাধি দেখতে পেল। ওটা খুবই পুরানো। এইরকম আরো অনেক সমাধি প্রস্তর টমির নজরে পড়ল। বেশীরভাগই আঠাশ শতাব্দীর তারিখে। একটা লম্বা ছিল। তা দেখে টমি আপন মনেই বলে উঠল, অদ্ভুত, ভীষণ অদ্ভুত।
***
ফেদাই এলিফেন্টমেল গিয়ে মিস লিটলের সাথে ট্রুপেন্সের আলাপ হল। কিছু দ্রব্যাদির দায়িত্ব দিল। ওর খ্রীস্টান নাম ডরোথি। মিস লিটল পেতলের বাতিটা দেখে খুশী হওয়াতে ট্রুপেন্স তার কৌতূহলী প্রশ্নের উত্তর দিল। সেই সময় পার্কার এলেন। আলাপ পরিচয় হবার পর তিনি জানালেন তিনি ট্রুপেন্সকে কবরস্থানে ঘুরতে দেখেছেন। ট্রুপেন্সের ঐ ব্যাপারটা ভালো লাগাতে আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য বলল, হ্যাঁ দেখে তো মনে হল যত সব পারকিনসনদেরই ওখানে কবর দেওয়া হয়েছে।
পার্কার স্বীকার করল যে তাদের মধ্যে কাউকেই তার মনে পড়ে না।
ট্রুপেন্স কথা বলতে বলতে তাকে বলল মেরী জর্ডন বলে কারোর নাম তার জানা আছে কিনা। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারলেন না। এবং ট্রুপেন্স জিজ্ঞাসা করল, এখানে কি আর কোন পারকিনসন দল থাকে। তিনি জানালেন এখানে কেউ থাকে না এবং অনেকদিন আগেই তারা চলে গেছে।