- বইয়ের নামঃ প্রিক অন মাই থাম্ব
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
প্রিক অন মাই থাম্ব
১-৪. নতুন বছর শুরু
০১.
নতুন বছর শুরু হতে আর বেশী দেরী নেই।
ওয়েস্টের বিরাট হলে এখন জমায়েত হয়েছেন। পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিরা।
মিঃ স্যাটারহোয়াইট খুশী হয়েছেন এই কারণে যে ঘোটরা সবাই এই মুহূর্তে নিদ্রামগ্ন।
তার মনোভাবটাই এইরকম, তিনি মনে করেন, যৌবন অকারণে মানুষকে বিকৃত করে তোলে।
মিঃ স্যাটারহোয়াইটের বয়স বাষট্টি। ঈষৎ ঝুঁকে পড়েছেন বয়সের ভারে, শেষ হয়ে গেছে বুঝি সমস্ত আনন্দ, অন্য মানুষের জীবনযাত্রার প্রতি আছে তার অকারণ কৌতূহল। আর এই আশ্চর্য বোধই তাকে করে তুলেছে বিচিত্র সুন্দর মানুষ। সমস্ত জীবন ধরে তিনি দেখেছেন, সমান পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি। মনে মনে কল্পনা করেছেন অনেক কিছু। এই বয়সে এসেও এখনও পর্যন্ত তিনি ভুলতে পারেননি সেইসব দিনগুলির কথা। তাই বোধহয় সবসময় নতুন কিছুর সন্ধানে ব্যস্ত থাকেন।
তার কাছে জীবন এক রহস্যঘন নাটক। প্রতিটি পলে অনুপলে যেখানে সংযোজিত হচ্ছে একটির পর একটি নতুন অধ্যায়। যুদ্ধরত ঘোড়ার মতো তিনি বিপদের গন্ধ পান। ওয়েস্টে আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দিচ্ছে হয়তো এমন কিছু ঘটবে সকলকে একেবারে অবাক করে দেবে।
শুরু হয়ে গেছে হাউস পার্টি। জন আজকের অতিথিবৎসল গৃহকর্তা। অত্যন্ত সহৃদয় তিনি। এমন কি তার বিবাহিতা স্ত্রী মেরী লরাকিংও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল আগন্তুক অতিথি অভ্যাগতদের সন্তুষ্টি বিধানে। এসেছেন স্যার রিচার্ড স্কট, এককালে ছিলেন সৈনিক। এখন নিরন্তর দেশভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন, আর জমায়েত হয়েছে আরো অনেক অজানা ব্যক্তিরা। স্যাটারহোয়াইটের চোখে তারা এক-একটি জীবন্ত আগন্তুক বুঝি।
অ্যালেক্স পোর্টার। তার কাছেই এসেছেন স্যাটারহোয়াইট। অনেক জিজ্ঞাসা জমে আছে। এই লোকটিকে কেমন অদ্ভুত মনে হচ্ছে স্যাটারহোয়াইটের। অ্যালেক্স পোর্টারের বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। তার মাথায় যথেষ্ট চুল আছে। চোখের তারার রঙ নীল। ভালোবাসেন খেলাধুলো। যে কোন খেলাতে পারদর্শী, মনের মধ্যে নেই কল্পনার মৃদু আভাস। হঠাৎ দেখলে অ্যালেক্স পোর্টারের মধ্যে কোন অস্বাভাবিকত্ব ধরা পড়ে না। আর পাঁচটা ইংরেজ যুবকের মতো হাবভাব তাঁর।
কিন্তু রহস্য জমে আছে বুঝি তার স্ত্রীর অবয়বে। অন্তত স্যাটারহোয়াইটের কথায়, সে এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। দুবছর আগে পোর্টার গিয়েছিলে অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানেই তার সঙ্গে আলাপ হয়। আর তাকেই জীবনসঙ্গিনী করেন তিনি। বিয়ের আগে মেয়েটি কখনো ইংল্যান্ডে আসেনি। আর অন্যান্য যে সমস্ত অস্ট্রেলিয় তনয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যে মিঃ স্যাটারহোয়াইট যোগাযোগ করেছেন তাদের থেকে এই মেয়েটি একেবারে আলাদা।
এই মেয়েটির প্রতি কেন্দ্রাভূত স্যাটারহোয়াইটের সমস্ত একাগ্রতা এখন, প্রচণ্ড প্রাণবন্ত মেয়েটি। সবসময় টগবগ করে ফুটছে। কিন্তু হঠাৎ মিঃ স্যাটারহোয়াইটের মনে হলো যে, মেয়েটি কেন অকারণে তার চুলের রঙ পাল্টায়?
হয়তো এই ব্যাপারটা অন্য কারো নজরে পড়তো না। কিন্তু আগেই বলেছি আমরা, মিঃ স্যাটারহোয়াইটের আছে প্রচুর পর্যবেক্ষণ শক্তি। তিনি অনেক কৃষ্ণবর্ণ আচ্ছাদিত রমণীকে চেনেন, যাদের চুলের রঙ হলো সোনালী। কিন্তু এর আগে এমন কোন শ্বেতাঙ্গিনীর সন্ধান পাননি, অকারণে যে চুলগুলিকে কালো রঙে রাঙিয়ে তোলে।
এই ঘটনাই ভাবিয়ে তুলেছে তাকে। কি হতে পারে এই রহস্যের অন্তরালে?
পোর্টার অসম্ভব মদ্য পান করে চলেছে। পর্দার আড়াল থেকে মাঝে মধ্যেই লক্ষ্য রাখছে সে, পরীর মতো ফুটফটে উড়ে বেড়ানো স্ত্রী রত্নটির দিকে।
কথাগুলো উড়িয়ে যাচ্ছে।
বলে ওঠে–বারোটা বাজে। হ্যাঁপী নিউ ইয়ার। যদিও ঘড়িটা পাঁচ মিনিট ফাস্ট আছে। কিন্তু আমার মনে হয় এখন থেকেই নতুন বছরের আনন্দ করা উচিত।
সায় দেয় তার স্ত্রী। সকলে মিলে শুরু করে নববর্ষের পার্টি, টুকরো টুকরো কথাগুলো উড়ছে বাতাসে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে উপস্থিত সবাই আনন্দের অবগাহনে স্নাত হচ্ছে বুঝি।
স্যাটারহোয়াইট কিন্তু কথোপকথনে যোগ দিচ্ছেন না। তার মনের মধ্যে একটাই চিন্তা কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে।
হঠাৎ এখানে আর একটি ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ হয় তার নাম হচ্ছে হেনরী কুইন।
পরস্পর পরিচিত হতে বেশীক্ষণ সময় লাগে না। হেনরী কুইনকেও কেমন অদ্ভুত স্বভাবের মনে হলো স্যাটারহোয়াইটের। এমন কি ইভেসহ্যাম যখন তাকে মদ দিতে গেলো, সবিনয়ে সে সেটি প্রত্যাখ্যান করলো।
ইভেসহ্যাম জানতে চায়–কুইন, আপনি কি আগে এখানে এসেছিলেন?
-হ্যাঁ, দুবছর আগে।
—সত্যি?
-হ্যাঁ, তখন এই বাড়িটা ছিলো চ্যাপেল নামের এক ভদ্রলোকের।
চেনেন কে?
–হ্যাঁ, চিনি।
হঠাৎ ইভেসহ্যামের কথাবার্তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা দিলো। যা অনেকের চোখ এড়িয়ে গেলেও স্যাটারহোয়াইটের চোখ এড়াতে সমর্থ হয়নি।
মিঃ কুইন বলতে থাকে–আমার যথেষ্ট পরিচিত ছিলো সেই লোকটি। কিন্তু কি হলো তার সে খবর তো আমি আর পাইনি।
পরিবেশের মধ্যে থমথমে গভীরতা এসে প্রবেশ করে।
কারণ এই লোকটিকে আমি চিনতাম, জীবনের সমস্ত উন্মাদনার মধ্যে, সব সমস্যাকে ফুঙ্কারে উড়িয়ে দেবার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তার। আনন্দের সমুদ্রে অবগহন করতো সে।