মিডগে–কিন্তু জানা তো হলো না।
এডওয়ার্ড-জেনে লাভ কি? জন ক্রিস্টো আমাদের কী ছিল?
মিডগে–কিছু না থাকলেও তার জন্য সকলেই শোক করেছে, তাকে সমাধিস্থ করেছে। জন ক্রিস্টো মরে গিয়েই শেষ হয়ে যায়নি। জন ক্রিস্টো এখনও এই হলোতে রয়েছে। মিডগে ভাবল এডওয়ার্ড বোধহয় হেনরিয়েটা এবং জন ক্রিস্টোর কথা ভাবছে। হেনরিয়েটা না জানতে পারে সে কী চায়, কিন্তু এডওয়ার্ড চিরদিনই হেনরিয়েটার থাকবে…
মিডগের মনে হলো সে হয়তো এডওয়ার্ডকে নিয়ে সুখী হবে না। কারণ, সর্বদাই হেনরিয়েটার কথা ভাববে, এটা তার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। আমি অত্যন্ত দুঃখিত এডওয়ার্ড। কিন্তু তবু আমাকে বলতে হচ্ছে, আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি না।
এডওয়ার্ড–কিন্তু আইন্সউইককে তুমি ভালোবাসো।
মিডগে–কিন্তু শুধু আইন্সউইকের জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারি না। সেটা তোমার জানা উচিত।
এডওয়ার্ড-অবশ্য তুমি যা বলতে চাইছ তা আংশিক সত্য।
মিডগের ক্ষীণ আশা ছিল যে, এডওয়ার্ড তার সঙ্গে তর্ক করবে এবং তাকে বোঝাবার চেষ্টা করবে, কিন্তু তা সে কিছুই করল না।
মিডগে হাতের আংটিটা খুলে এডওয়ার্ডকে ফেরত দিল।
এডওয়ার্ড–মিডগে, আমার ইচ্ছে যে ওটা তুমি রেখে দাও।
মিডগে–আমি তা পারি না।
এটা সম্পূর্ণ বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই হয়েছিল, সে জানত না এবং কোনোদিনই জানবে না মিডগে কী অনুভব করছে। প্লেটের উপর স্বর্গ নেমে এসেছিল। প্লেটটা ভেঙে গিয়েছে এবং স্বর্গ তার আঙুলের ফাঁক দিয়ে চলে গেছে।
.
২৮.
বালিশের উপর এপাশ-ওপাশ করেও মিডগের ঘুম আসছে না। সে দরজার খিল খোলার শব্দ পেল। তার দরজার পরে বারান্দায় কার পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এডওয়ার্ড এত রাত্রে তার দরজার পাশ দিয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে। সে কোথায় যাচ্ছে? সে কি বাইরে চলে যাচ্ছে? সে উঠে ড্রেসিং গাউনটা পরে হাতে একটা টর্চ নিয়ে দরজা খুলে পথে নেমে এল। সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে আলোটা জ্বেলে দিল। সামনের ও পাশের দরজা তালাবন্ধ। রান্নাঘরের দরজা ভেজানো। একটা ক্ষীণ আলো এসে পড়ছিল। এডওয়ার্ড মেঝেতে শুয়ে আছে, তার মাথা গ্যাসচুল্লীর মধ্যে।
মিডগে সার্সি খুলতে না পারায় কাঁচ ভেঙে দিল, এডওয়ার্ডকে গ্যাসচুল্লী থেকে বার করে গ্যাস বন্ধ করে দিল। এডওয়ার্ড অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল এবং অদ্ভুতভাবে শ্বাস নিচ্ছিল। মিডগে এডওয়ার্ডকে জানালার কাছে টেনে নিল। কিন্তু এডওয়ার্ড কেন, কেন? মিডগে শুনতে পেল অনেক দূর থেকে এডওয়ার্ড যেন বলছে, কী ঠান্ডা! মিডগে বাহুবন্ধনে এডওয়ার্ডকে আবদ্ধ করল।
–তোমার স্পর্শ এত গরম মিডগে।
হঠাৎ আনন্দ এবং আত্মবিশ্বাসের গর্ব যেন তাকে পূর্ণ করল। সে নুয়ে পড়ে তার ঠোঁটের উষ্ণতা অনুভব করছিল। এডওয়ার্ডের মনে হল মিডগের ভালোবাসা যেন তাকে ঘিরে ধরেছে, তাকে সবকিছু থেকে আড়াল করে এবং সেই ঠান্ডা মরুভূমিতে সুখের জোয়ার বইতে লাগল, যেখানে এতদিন সে একলা ছিল।
এদিকে হঠাৎ লুসির মাথায় মতলব এল। তিনি হেনরিয়েটার ঘরে গেলেন, এটা সেই হোলস্টার, তুমি কি এটা সম্বন্ধে কিছু ভেবেছ?
–হোলস্টার? হোলস্টার সম্বন্ধে কি ভাববো?
–হেনরির সেই রিভলবারটা হোলস্টারের মধ্যে ছিল তুমি জান, সেই হোলস্টারটা পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ সেটার কথা ভাবছেও না।
.
২৯.
জাদার মাথা ব্যথা করার জন্য চায়ের জল ফুটতে দিল। এমন সময় সদর দরজায় ঘন্টা, জার্দাই দরজা খুলে দিল। সে হেনরিয়েটার গাড়ি দেখে বিস্মিত হল।
হেনরিয়েটা বলল, শোনো জার্দা, হোলস্টার ছাড়া সবই ঠিক আছে। তোমাকে আর কিছুতেই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়াতে পারবে না, তুমি পুলের ধারে ঝোঁপের মধ্যে যে রিভলবারটা ফেলেছিলে, সেটা আমি এমন জায়গায় লুকিয়েছি যা তুমি কিছুতেই পারতে না এবং তার উপরে যে আঙুলের ছাপ আছে তা পুলিস কোনোদিন সনাক্ত করতে পারবে না। এখন শুধু জানতে চাই হোলস্টারের কী করছ? হোলস্টারটা দিয়ে দিতে অনুরোধ করে হেনরিয়েটা।
জার্দা-পুলিস যখন হার্লি স্ট্রিটে এসেছিল, আমি তখন এটাকে টুকরো করে কেটে ব্যাগে করে আমার চামড়ার কাজের সঙ্গে রেখে দিয়েছি।
জাদা জনকে মহৎ ভাবত। তার বিশ্বাস ভঙ্গ হওয়াতেই সে জনকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। সে গোয়েন্দা কাহিনীতে পড়েছিল যে, কোন বন্দুকের গুলিতে কে নিহত হয়েছে পুলিস তা বলতে পারে। তাই দুটো রিভলবার নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, একটাতে গুলি ছুঁড়ে ঝোপে ফেলে দিয়ে অন্যটা ধরে দাঁড়িয়েছিল। সেজন্যে প্রথমে তাকে খুনী সন্দেহ হলেও পরে তা প্রমাণিত হয়নি। জার্দা উঠে চা তৈরি করতে গেল। এমন সময় পৈরট এসে হাজির। হেনরিয়েটা গাড়ি নিয়ে হলো ছেড়ে বেরিয়েছে বলে পৈরট তার পিছু নিয়েছে। ছেলেমেয়েরা জার্দাকে প্রশ্ন করে বাবাকে কেন হত্যা করা হয়েছে? এই কথা বলতে বলতে জার্দার ঠোঁট নীল হয়ে এল এবং ঝুঁকে পড়ল। পৈরট ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল, এবং বলল, সহজ এবং অপেক্ষাকৃত বেদনাহীন মৃত্যু।
হেনরিয়েটা বলল-হার্টফেল করল, না চায়ের মধ্যে কিছু ছিল? সে নিজেই কিছু মিশিয়েছিল। সে চলে যাওয়ার এই রাস্তাই পছন্দ করল।
পৈরট বললেন-না না, এটা আপনার চায়ের কাপ। সে দেখেছিল যে আপনি তার গোপন কথা জানেন, কাজেই আপনারও মরা উচিত। আপনি খুব ক্লান্ত হেনরিয়েটা।