এসো এখন চা খাওয়া যাক–হেনরিয়েটার মুখে সেই সহৃদয় অভিব্যক্তি কিন্তু মিডগে দেশলাই দেখে সব ভুলে গেলে। সে বলল, এই দেশলাই ভেরোনিকা কে নিয়েছিল এবং লুসি তাকে ছটা নিতে জেদ করল। কেউ কি দেখেছে, তার ঘরে দেশলাই ছিল কিনা?
হেনরিয়েটা–আমার মনে হয় পুলিস খোঁজ নিয়েছে। এডওয়ার্ডকে প্রত্যাখ্যান করা হেনরিয়েটার পক্ষে নির্দয়তা। মিডগে চায় এডওয়ার্ড সুখী হোক। এডওয়ার্ডের কাছে মিডগে চিরদিনই ‘ছোট মিডগে’-এর বেশি কিছু নয়। ভালোবাসতে পারা যায় এমন স্ত্রীলোক সে কোনোদিনই এডওয়ার্ডের কাছে হতে পারল না। শরতের হিমেল সন্ধ্যায় তারা বেরিয়ে পড়ল। মিউস পেরিয়ে যেতেই, একটা গাড়ি পাশাপাশি যেতে লাগল।
হেনরিয়েটা বলল–একটা ভেন্টর ১০, আমাদের ছায়া। দেখো, সে আমাদের অনুসরণ করবে। কী পাশবিক সব ব্যাপার।
-তোমার কি তাই মনে হচ্ছে, আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না–মিডগে বলল।
হেনরিয়েটা মিডগেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে মিউস-এ ফিরে এসে গ্যারেজে গাড়ি রেখে দিল। আর একবার সে স্টুডিওতে ঘুরে বেড়াল, তারপর সে মনে মনে বলল–কাজ করাই ভালো। সময় নষ্ট করা উচিত নয়।
হেনরিয়েটা ওভারঅল পরে নিল, প্রায় দেড়ঘণ্টা কাজ করার পর সে লক্ষ্য করল, যে-মডেলটা সে তৈরি করেছিল তা তার পছন্দমতো হয়েছে। এটা একটা ঘোড়ার আকৃতির মতো। এলোমেলো কাদা লাগানো হয়েছে। অশ্বারোহী বাহিনীর ঘোড়ার মতো রক্তমাংসের ঘোড়া নয় যেন।
.
২৪.
শ্যাফটেসব্যারি এভিনিউর ঘোরানো ফুটপাথের উপর দাঁড়িয়ে এডওয়ার্ড এ্যাঙ্গক্যাটেল ইতস্তত করছিল। বাইরে সোনালি অক্ষরে লেখা রয়েছে ‘ম্যাডাম অ্যালফ্রেজ।
এডওয়ার্ড অতীত যুগে বাস করতে চায় এবং বর্তমানকে সে অনাস্বাদিত রূপে গ্রহণ করে। মিডগে তার কাছে খেটে খাওয়া সাবালিকা। তার কাছে সব যেন ওলোটপালট হয়ে গেল–তার মনে হল আইন্সউইকের বহুমূল্য অংশটিই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে যেন হঠাৎ মোহাচ্ছন্নের মতো বলে ফেলেছিল, তোমাকে আরও বেশি দেখতে ইচ্ছে হয়, ছোট মিডগে…
সেই থেকে সে এই ভেবে কষ্ট পাচ্ছে যে, সে কোনোদিন মিডগের সুখদুঃখের কথা ভাবেননি। ম্যাডাম আলফ্রেজের দোকানে অত্যন্ত কষ্টের চাকরির কথা শোনা থেকে সে আকাশ পাতাল ভেবে ভেবে অবশেষে ঠিক করেছে নিজে গিয়ে একবার দেখে আসবে।
কোনোরূপে এডওয়ার্ড একটু নিচু হয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে গেল এবং দেখতে পেল দুটি কর্কশ স্বরের স্ত্রীলোক শো-রুমে তাদের পোষাক পরীক্ষা করছিল এবং একটি কালো মেয়ে তাদের পোষাক দেখছিল। দোকানের পেছনে মোটা নাকের একটা বেঁটে স্ত্রীলোক তার খদ্দেরের সঙ্গে তর্ক করছিল। ক্রেতা অত্যন্ত মোটা ছিল; একটা ইভনিং গাউন ছিল তাদের তর্কের বিষয়।
পাশ থেকে একটা ভীতিপ্রদ স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। আপনি ভালো কিছু একটা দেখাতে পারেন না, যা পছন্দ হওয়ার মতো? উত্তরে সে মিডগের শান্ত স্বরের অনুনয় বিনয় ও পোষাক পছন্দ করানোর জন্য দু-একটা আবেদনের কথা শুনতে পেল।
ইতিমধ্যে ম্যাডাম আলফ্রেজ মোটা ক্রেতার কাছ থেকে চলে এসে এডওয়ার্ডের দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকাল। এডওয়ার্ড জিজ্ঞাসা করল, আমি মিস হার্ডক্যাসলের সঙ্গে কথা বলতে পারি কি?
একটা বদমেজাজের স্ত্রীলোক কতগুলি পার্শেল নিয়ে বেরিয়ে গেল, মিডগে তার জন্য দরজা খুলে দিল। ইতিমধ্যে মিডগে কোট পরে প্রস্তুত হয়ে এসে হাজির হল, এডওয়ার্ড তার সঙ্গে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে এডওয়ার্ড বলল, এইসব জিনিষের সঙ্গে তুমি মানিয়ে চল? সহ্য কর কি করে, ফ্রকগুলি ক্রেতার মুখের উপর ছুঁড়ে মারতে পার না? কিন্তু তোমার এখানে থাকা উচিত নয়। আমি নিজে সব দেখতে পেয়েছি, অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই সব ছাড়িয়ে ট্যাক্সি করে তোমাকে আইন্সউইকে নিয়ে যাই।
মিডগে–তুমি জান দুটো পনেরোর ট্রেনে আইন্সউইকে যাওয়ার অর্থ কী? বলতে হয় তাই বলে যাচ্ছো; কিন্তু চিন্তা করে কিছু বলছ না।
ঠিক এই সময় একটা ট্যাক্সি ডেকে দুজন তাতে উঠে পড়ল। ট্যাক্সিতে চুপচাপ বসেছিল। তারা বার্কলি হোটেলে ঢুকল।কফি পান করতে করতে এডওয়ার্ড জিজ্ঞেস করল, তুমি আইন্সউইক ভালোবাসো না? আমি বলছি তুমি চিরকালের জন্য আইন্সউইকে এসো, আজকেই যেতে হবে তা বলছি না। আমি বলছি তুমি আমায় বিয়ে করো মিডগে। আমরা পরস্পরকে অনেকদিন ধরে জানি। তুমি আসবে কি?
মিডগে–আমার তো ম্যাডাম আলফ্রেজের কাছে যেতে হবে, তার ভরসা তো আমি।
এডওয়ার্ড–কিন্তু তার আগে আমাদের বন্ড স্ট্রিটে যেতে হবে।
মিডগে–আংটি?
এডওয়ার্ড–এটাই তো সচারাচর ব্যবহৃত হয়।
অনেকক্ষণ বাছাবাছির পরে এডওয়ার্ড নিজের আংটি পছন্দ করল। পরে মিডগের অনুরোধে তার আংটিটাও পছন্দ করে দিল।
.
২৫.
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল সব শুনে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বললেন–এখন থেকে সেন্ট জর্জের গির্জায় তোমাদের বিবাহ হবে।
মিডগে বলল–আমি শান্তিপূর্ণ বিবাহের পক্ষপাতী। একখানা কোট এবং স্কার্ট হলেই আমার বিয়ে হয়ে যাবে।
লুসি বলে-না, মিডগে, সাদা বাদে সার্টিনের পোশাক চাই। ম্যাডাম আলফ্রেজের দোকানের নয়, ভালো দোকানের। মিরিলীতে চলো মিডগে। হেনরি তোমাকে দেবে। তোমার বা এডওয়ার্ডের কিছু খরচ করতে হবে না।
মিডগে–হত্যাকাণ্ডের ব্যাপার তো মিটে গেছে।