লুসি–উদ্বেগের কারণ নেই। আমাদের কিছু করার আগেই জন রাস্তা থেকে সরে গেছে।
রান্নাঘরে ডোরিস ইমট কাঁদছিল কারণ গাজন তাকে খুব তিরস্কার করেছে ঘরের কথা পুলিসের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার জন্য।
.
২২.
দরজায় শব্দ হওয়াতে পৈরট জানালা দিয়ে দেখে বিস্মিত হল যে, ভেরোনিকা ক্রে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। সে হেনরিয়েটার মতো টুইডের পোশাক পরে এসেছিল।
ভেরোনিকা বলল–আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে আমি পরিচিত হতে খুবই উদগ্রীব। আমি আপনার সঙ্গে একটা বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি। জনের মৃত্যু সম্পর্কে আগামীকাল বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধান, আপনি তা জানেন?
পৈরট–আমি জানি।
ভেরোনিকা-ইনসপেক্টর গ্র্যাঞ্জের মাথায় কে ঢুকিয়েছে যে আমি জনের সঙ্গে ঝগড়া করেছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম আমি জনকে পনেরো বছর দেখিনি। তিনি বিশ্বাসই করলেন না। কিন্তু ওটা সত্য।
পৈরট-সত্য হলে প্রমাণিত হবে। আপনার উদ্বেগের কারণ নেই।
ভেরোনিকা–কিন্তু আসল কথা আমি ইনসপেক্টরকে বলতে সাহস পাইনি। আপনাকে বলতে চাই। পনেরো বছর আগে জনের সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সে আমাকে অভিনয় ছাড়তে বলে, কিন্তু আমি ছাড়িনি। তাতে সে রেগে গিয়ে সব ভেঙে দিয়ে চলে গেল। তারপরে তার সঙ্গে আমার দেখা হয় সেই শনিবার রাত্রে। সে তার স্ত্রীকে এবং সন্তানদের পরিত্যাগ করে আমাকে বিয়ে করতে চাইল এবং আমার স্বামীকে পরিত্যাগ করতে বলল। কিন্তু আমি তাকে প্রতিবাদ করলাম। সেইজন্য তাকে পরের দিন চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য।.সে এক গোঁ ধরে বসল। সে আমার কোনো কথাই শুনল না। আমি বললাম আমি তাকে অত্যন্ত ঘৃণা করি। তখন সে রেগে চলে গেল। এখন সে মৃত।
ভেরোনিক কাহিনীর একবর্ণও পৈরটের বিশ্বাসযোগ্য মনে হল না। তবু তার মধ্যে একটা সরলতা ছিল। ঘটনা একটা ঘটেছিল ঠিকই কিন্তু যেভাবে, ঠিক সেভাবে নয়, ভেরোনিকাই জনকে ভুলতে পারেনি। সে-ই ব্যর্থ প্রেমিকা, সে-ই জনের কাছে অন্যায় প্রস্তাব করেছিল এবং জন তাতে রাজী হয়নি। এটাই বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা।
পৈরট-যদি জনের মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক থাকে তবে প্রকাশ করতে পারেন, আর তা না হলে নিজের মনেই রেখে দেওয়া ভালো।
ভেরোনিকা তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল এব পৈরটের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
.
২৩.
বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধান অল্পক্ষণের মধ্যেই শেষ হল। পুলিসের অনুরোধে একপক্ষকালের জন্য মুলতুবি হয়ে গেল। জার্দা ভাড়ার গাড়িতে চড়ে শোকের কালো পোশাক এবং একটা অদ্ভুত কালো টুপি পরে এসেছিল।
অসহিষ্ণুভাবে এডওয়ার্ড বলল, ক্রিস্টোর মধ্যে সকলে কি দেখে? সেই ভাগ্যহীনা স্ত্রীলোকটা একদম ভেঙে পড়েছে। সে অত্যন্ত স্বার্থপর ছিল কী, তুমি তার সম্বন্ধে কি ভাব?
মিডগে–আমি? আমি তাকে সম্মান করতাম।
এডওয়ার্ড–তাকে সম্মান করতে? কেন?
মিডগে–সে নিজের কাজ জানত।
এডওয়ার্ড–তুমি ডাক্তার হিসাবে তাকে ভালো ভাবতে?
আর বেশি সময় ছিল না। হেনরিয়েটা গাড়ি করে মিডগেকে লন্ডনে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এডওয়ার্ড হলোতে চলে গেল। পরে সে হেনরিয়েটার দিকে এগিয়ে গেল, আমি তোমাকে ফোন করব, হেনরিয়েটা।
হেনরিয়েটা–তা কোরো, কিন্তু আমি অনেকদিন বাইরে থাকতে পারি।
এডওয়ার্ড-বাইরে?
হেনরিয়েটা–হ্যাঁ, আমার দুঃখ ভোলার জন্য। তুমি এটা আশা কোরো না যে, আমি ঘরে বসে বসে কাদব, করো কি?
এডওয়ার্ড-আমি আজকাল তোমাকে বুঝতে পারছি না। তুমি অন্য প্রকার হয়ে গিয়েছ।
সে একটু নরম হয়ে এডওয়ার্ডের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমি ইচ্ছা করলে ফিরে আসতে পারি, পারি না লুসি। যেখানে হেনরিয়েটা গাড়ি রেখেছে সেই মার্কেট স্কোয়ারে সে চলে গেল, তার এবং মিডগের স্যুটকেস আগেই গাড়িতে তোলা হয়েছিল। তারা গাড়িতে উঠে চলে গেল।
হেনরিয়েটা–মিডগে, তোমার কাঁধের উপর দিয়ে তাকাও। দেখো গাড়ি পেছনে যাচ্ছে।
মিডগে–হ্যাঁ?
হেনরিয়েটা–ইহা একটি ভেন্টর ১০।
মিডগে–তাই কি, তারা কি এখনও আমাদের দিকে নজর রাখছে?
হেনরিয়েটা–তাই তো মনে হয়। এই দ্বিতীয় বন্দুকের ব্যাপার বোঝ কি?
মিডগে-না। এটাও কি হেরির বন্দুক?
হেনরিয়েটা–জানি না, এখনও তো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মিডগে–না, তা সত্যি। হয়তো কোনো বাইরের লোকও হতে পারে হেনরিয়েটা, আমি কাকে জনের হত্যাকারী বলে সন্দেহ করছি জান? সেই স্ত্রীলোকটি।
হেনরিয়েটা-ভেরোনিকা কে?
মিডগে–হ্যাঁ। এটা সম্ভব নয় হেনরিয়েটা, তুমি ভাব না?
হেনরিয়েটা–ভেবে লাভ কি? আমাদের সকলের কথাই ভাবতে পারি।
মিডগে–আমাদের সকলের কথা?
হেনরিয়েটা–আমরা সকলেই এর মধ্যে আছি। তবে জনকে গুলি করার পেছনে একটা মতলব আবিষ্কার করতে হবে। আমার কিন্তু লুসির মতোই ভেরোনিকার অভিনয় দেখতে ভালো লাগবে।
মিডগে বলল–তুমি এত প্রতিহিংসাপরায়ণ কেন, হেনরিয়েটা?
হেনরিয়েটা যেহেতু আমি জনকে ভালোবাসতাম।
তারা তখন অ্যালবার্ট ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। লন্ডনে শেষ বিকেলের আলো মিলিয়ে যাচ্ছে। তারা দুজনে স্টুডিওর দরজায় এসে দাঁড়াল। মিডগেএকা একা স্টুডিওর মধ্যে ঘুরে ঘুরে হেনরিয়েটার কাজ দেখছিল। নির্জন স্টুডিওতে কাঠ ও ব্রোঞ্জের মূর্তিগুলির মধ্যে তার কেমন যেন ভয় ভয় করছিল।