গ্র্যাঞ্জ–কোন কোন সময় হয়?
ভেরোনিকা–আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য জন আমার বাড়ি ছুটে এসেছিল, কিন্তু দেখা হওয়ার সঙ্গে তার নিহত হওয়ার কোনো সম্পর্ক তো দেখছি না।
গ্র্যাঞ্জ–আপনি কী বলছেন মিস ক্রে?
ভেরোনিকা–বহুদিন ধরেই আমাদের মধ্যে পরিচয় ছিল–আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে দক্ষিণ ফ্রান্সে। জনের বয়স হয়েছে, তাছাড়া আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি শুনেছি যে, তাদের বিবাহিত জীবন খুব সুখের নয়, জার্দা জনের রোগিণীদের সম্বন্ধে মনে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করত এবং ঈর্ষায় জ্বলে গিয়ে নানারকম অশান্তিরও সৃষ্টি করত।
গ্র্যাঞ্জ–না, না, তিনি তেমন ধরনের কোনো কাজ করেন না। আপনার কি মনে হয় মিস ক্রে, মিসেস ক্রিস্টো তার স্বামীকে হত্যা করেছেন?
ভেরোনিকা–আমি ঠিক বলতে পারি না। বিচারের আগে কারো সম্বন্ধে এ ধরনের মন্তব্য করা কখনোই উচিত হবে না। আমি খুব দুঃখিত ইন্সপেক্টর। আমার ঝি-র মুখ থেকে শোনা কথা যে, জার্দা জনের মৃতদেহের পাশে রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। আপনি তো জানেন ইন্সপেক্টর, এই গ্রাম্য দেশে কত ছোট ব্যাপারও অতিরঞ্জিত হয়ে নিজের রঙ বদল করে।
গ্র্যাঞ্জ–মিস ক্রে, চাকরেরা অনেক সময় উপকারও করে থাকে।
ভেরোনিকা–ব্যাপারটা সত্যি ভীষণ বেদনাদায়ক যে, স্বামীর হত্যাকারী রূপে সন্দেহের তালিকায় স্ত্রীর নাম প্রথম আসছে। কিন্তু এই ঘটনায় অন্য স্ত্রীলোকও তো হাজির থাকতে পারে! আপনার কী মনে হয়, থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
ভেরোনিকা–একজন স্ত্রী ভাস্কর আছে, ক্রিস্টোর সঙ্গে তার বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল। তার সম্পর্কে আপনি তো সবকিছুই জেনে ফেলেছেন।
গ্র্যাঞ্জ–আপনি বলতে চাইছেন যে, ডাঃ ক্রিস্টো আপনার সঙ্গে বাড়িতে এসেই দেখা করে গেছেন। সাক্ষাৎ হবার সময়টা আপনার স্মরণে থাকে?
ভেরোনিকা–কিছুক্ষণ আমরা কথাবার্তা বলেছি ঠিকই। কিন্তু সময় কত হবে সেটা বলতে পারছি না, তবে রাত তখন অনেক।
গ্র্যাঞ্জ–তিনি কি বাড়ির ভেতরেও এসেছিলেন?
ভেরোনিকা–আমি তাকে কিছু পান করতে দিয়েছিলাম।
গ্র্যাঞ্জ–আপনারা তো সুইমিং পুলের ধারে তাবুতে বসেও কথা বলেছিলেন?
ভেরোনিকা–আপনি তো মশাই গোয়েন্দা, তাই না? হ্যাঁ, আমরা সেখানেও কিছুক্ষণ বসেছিলাম এবং সিগারেটও খেয়েছিলাম। আপনি এত খবর পেলেন কোথা থেকে?
গ্র্যাঞ্জ-আপনি তো সেখানে ভুল করে আপনার নোমশ গলাবন্ধ ফেলে এসেছিলেন?
ভেরোনিকা–হ্যাঁ, তা ফেলে এসেছিলাম।
গ্র্যাঞ্জ–রাত তিনটে নাগাদ ডাঃ ক্রিস্টো হলোতে ফিরে এসেছিলেন।
ভেরোনিকা–হ্যাঁ, তা হবে হয়তো।
গ্র্যাঞ্জ–আপনি একটা চিঠি মারফৎ ক্রিস্টোকে ডেকে এনেছিলেন এবং আপনাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছিল। কোন্ বিষয়কে কেন্দ্র করে আপনাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল, কষ্ট করে সেটা একবার বলবেন কী মিস ক্রে?
ইন্সপেক্টর ব্যাটারি খুলে ভেরোনিকার ক্রোধের আগুনে জ্বলে ওঠার চিত্রটা তার ক্যামেরায় বন্দী করে ফেলেন, চোখমুখ জুড়ে ক্রোধের রেশ, ঠোঁটও কেঁপে কেঁপে উঠছে ইত্যাদি…
ভেরোনিকা–আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি।
গ্র্যাঞ্জ–নিশ্চয়ই করেছিলেন। আপনার কথার শেষ উক্তি ছিল, “আমাদের মনে হয় যে, আমি তোমাকে মনে মনে এতটাই ঘৃণা করি যে, দুনিয়ায় আর কাউকে তেমনভাবে ঘৃণার চোখে দেখি বলে বিশ্বাস হয় না।”
ভেরোনিকা–পুরো ব্যাপারটা ঝি-চাকরদের বানানো গল্পের মতো! আপনি জানেন একটা কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কতভাবে বলা যায়। যেভাবে আপনি ব্যাপারটাকে সাজাতে চাইছেন, সেভাবে কথাটা আমি বলিনি।
গ্র্যাঞ্জ–আপনার কথার মধ্যে তাহলে কোনো গুরুত্ব ছিল না?
ভেরোনিকা–নিশ্চয় না। তাছাড়া, পনেরো বছর পরে জনের মুখোমুখি হলাম আমি, আপনি এই বিষয়টা অনুসন্ধান করলেই জেনে যাবেন।
গ্র্যাঞ্জ এবার উঠে পড়ে, সে বলে ওঠে, আচ্ছা, আজ না হয় এই পর্যন্ত থাক মিস ক্রে। সে ডাভকোট ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে রেস্টহেভেন-এর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
গ্র্যাঞ্জকে দেখে পৈর সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, জার্দা ক্রিস্টোর হাতে যে রিভলবার ছিল তার গুলিতে নাকি জনের মৃত্যু হয়নি?
গ্র্যাঞ্জ–ঠিক তাই, পৈরট।
পৈরট–কিন্তু তাতে করেও সুবিধা কিছু হলো না ইন্সপেক্টর?
গ্র্যাঞ্জ–সুবিধা হয় এমন কিছু বার করলেই তো হতো! কিন্তু যতক্ষণ না আসল বন্দুকের সন্ধান মিলছে ততক্ষণ পর্যন্ত সুবিধা কিছু হবে বলে তো মনে হয় না। স্যার হেনরির স্টক থেকেই বন্দুকটা চুরি গেছে, কিন্তু এর বেশি তো আর কিছু করা যাচ্ছে না!
পৈরট-ব্যাপারটা খুব সহজ বলে তো মনে হচ্ছে না!
গ্র্যাঞ্জ–না, সত্যি খুব জটিল ব্যাপার, আগে অবশ্য ভেবেছিলাম, সোজা ব্যাপার। একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, জার্দাকে এই ব্যাপারে জড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু তাই যদি হয় তবে আসল বন্দুকটা ডাঃ ক্রিস্টোর পাশে ফেলে রাখা হলো নাই বা কেন? জার্দা তো সেটা অবশ্যই কুড়িয়ে রাখতে পারতেন?
পৈরট-জার্দা তো বন্দুকটা নাও কুড়োতে পারতেন?
গ্র্যাঞ্জ–না কুড়োলেও, আগের আঙুলের ছাপ যদি নষ্ট করা অবস্থাতেই না মিলত, তবে তো সন্দেহের তালিকায় জার্দার নাম উঠত। এটাই তো হত্যাকারীর মনোগত বাসনা ছিল, তাই নয় কী?
আচ্ছা আপনি যদি কাউকে খুন করেন তবে আপনি এটাই চাইবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দোষটা অন্য কারো ঘাড়ে চাপাতে।নয় কি?হত্যাকারীর কাছ থেকে এরকম প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক ছিল।