হেনরিয়েটা–প্রায় ছ’মাসের মতো হবে।
পৈরট–এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করতে পুলিসের খুব অসুবিধা হবার কথা নয়।
হেনরিয়েটা–আমার মনে হয় তারা এদিক দিয়ে যাচ্ছে না। অর্থাৎ তারা যদি কিছুর সন্ধান করতেই চায়, তবে হয়তো একদিন আবিষ্কার করলেও করে উঠতে পারে।
পৈরট-হ্যাঁ, তারা এদিকে খোঁজ নেবে।
হেনরিয়েটা–আমি কিন্তু ভেবেছিলাম তারা এদিকের ব্যাপারেও খবর সংগ্রহ করবে। আচ্ছা, পৈরট লোকেরা কী করে? এ্যাঞ্জের কাছে গিয়ে কী বা বলে? এমন অদ্ভুত গোঁফের কাছে গিয়ে তাদের কী বা বলার থাকতে পারে। ওটা নেহাতই একটা পারিবারিক গোঁফ।
পৈরট–যেমন আমার?
হেনরিয়েটা–আপনার গোঁফ এবং পৈরট? আপনার গোঁফের সঙ্গে কারো তুলনাই চলে না, এককথায় এটা অতুলনীয়।
পৈরট–সত্যিই।
হেনরিয়েটা–এই জন্যই আমি আপনার সঙ্গে এমন ধারায় বলছি। আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে পুলিসের আমার এবং জনের মধ্যে সম্পর্কটা জানা দরকার। কিন্তু তোক জানাজানি হওয়ার এটার কি কোনো প্রয়োজন আছে।
পৈরট–সেটা সম্পূর্ণ অন্য জিনিষের ওপর নির্ভরশীল। পুলিস যদি মনে করে থাকে যে, এই ঘটনার সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক নেই তবে চেপে যেতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপারটা প্রকাশে আপনি কি খুব উদগ্রীব?
হেনরিয়েটা–আপনি হয়তো এটাকে কপটতা ভাবছেন। আপনি মনে মনে ভাবছেন যে, জাদার মানসিক শক্তির কথা ভাবছি বলেই হয়তো জনের মিসট্রেস হবার কোনো সম্ভাবনাই আমার মধ্যে নেই। তার বিবাহিত জীবনের যা ক্ষতি হবার ছিল তা হয়ে গেছে। এর চাইতে আরও অতিরিক্ত বোঝা তাকে সারাজীবন টেনে নিয়ে যেতে হবে কেন?
পৈরট–আপনি মিসেস জার্দার জন্যই এমনটি বোধহয় ভাবছেন?
হেনরিয়েটা–আপনি হয়তো এটাকে কপটতা ভাবছেন। আপনি মনে মনে ভাবছেন যে জাদার মানসিক শক্তির কথা ভাবছি বলেই হয়তো জনের মিসট্রেস হবার কোনো সম্ভাবনাই আমার মধ্যে নেই। তার বিবাহিত জীবন আমি ভেঙে দিইনি, আমি ছিলাম মিছিলের অন্যতম যাত্রী।
পৈরট-আঃ, এটাও ঠিক এইরকম?
হেনরিয়েটা–না, না, না, আমার আপত্তি ঠিক এই জায়গাতেই–আপনি আমার মতো করে ব্যাপারটা ভাবছেন না। জন সম্পর্কে লোকে যে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, আমি তাতেই মনে বড় ব্যথা পাই। এইজন্যেই আমি আপনার কাছে ছুটে এসেছি। আমি হয়তো আপনাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে উঠতে পারছি না। আমার কাছে এই ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, কাগজে শিরোনাম ছাপা হবে, এক চিকিৎসকের, ভালোবাসার জীবনকাহিনী, জার্দা, আমি ভেরোনিকা ক্রে। জন কিন্তু কোনোদিনই তেমন স্বভাবের ছিল না, সে কিন্তু স্ত্রীলোকের ব্যাপারে কোনোদিনই বেশি মাথা ঘামাত না, তার কাছে স্ত্রীলোকই সবকিছু ছিল না, তার কাজের জগৎ নিয়েই সে ব্যস্ত থাকত। হ্যাঁ, কাজের মধ্যে তার উৎসাহ, উদ্দীপনা, উত্তেজনা এবং দুঃসাহস মুখ লুকিয়ে আছে। অসতর্ক কোনো মুহূর্তে জনকে যদি জিজ্ঞাসা করা হতো, তার মনে কোনো স্ত্রীলোকের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা সবসময়ের জন্য ঘুরপাক খেত, সে কার নাম উল্লেখ করবে জানেন কি? মিসেস ক্যাবট্রি ছাড়া আর কার নামই বা সে বলত।
পৈরট–(বিস্ময়ের সঙ্গে) এই মিসেস ক্যাবট্রির আসল পরিচয় কি? কে সে?
হেনরিয়েটা–তিনি এক বৃদ্ধা। কুৎসিত-নোংরা স্বভাবের এই বৃদ্ধার সমস্ত শরীরে এখন বার্ধক্য নেমে এসেছে, দেহের মাংস সব কুঁচকে গেছে, ক্রিস্টোফার হাসপাতালের সেও এক রোগিণী, তার রিজওয়ের রোগ কালেভদ্রে দেখা দিত। আপনি যদি এই রোগের শিকার হন, আপনি অবশ্যই মারা পড়বেন, কারণ এই রাগের কোনো ওষুধ নেই, তাই আরোগ্য লাভেরও নেই কোনো উপায়। ক্যাবট্রির শরীরেও রোগ আছে তবু সে বাঁচতে চায়। জন সেই ওষুধ বার করবে, হরমোন ক্ষরণের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জন বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছে, মিসেস ক্যাবট্রি জনের খুব ভক্ত, জন এবং সে রোগের বিরুদ্ধে যেন সংগ্রাম করে যাচ্ছে, মাসের পর মাস ধরে রিজওয়ের ব্যাধি এবং মিসেস ক্যাবট্রি, সর্বদাই জনের মধ্যে উপস্থিত এবং তাদের আবেদন জনের মনে যে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে, এমন আর কিছু নেই যা তার মনে নিজের একটা স্থান দখল করে রেখেছে। জন এমনই এক চিকিৎসক ছিল, পুরো হার্লি স্ট্রিটের মধ্যে এবং সকল ধনী মানুষের কাছের মানুষ ছিল তাদের প্রিয় ডাক্তার জন, আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পাচ্ছি না যে, আপনাকে এই সত্য কেমন ভাবে বোঝাব যে, নতুন ওষুধ একদিন জন ক্রিস্টোর হাত দিয়েই আবিষ্কৃত হবে, এই ছিল তার একমাত্র সাধনা।
পৈরট–আপনি বোধহয় ঠিকমতো চিনতে পেরেছিলেন।
হেনরিয়েটা-ওঃ, হ্যাঁ, জন আসত এবং একথাই সে বলত। আমার কাছে অবশ্য সংক্ষিপ্ত করেই বলত, কারণ সে নিজের মনেই সব কথা বলে যেতে পারত। অন্য রোগীর রোগ সম্পর্কে যে আপনমনেই আলোচনা করত, বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার কথাও বলত, প্রতিটি রোগের বিরুদ্ধে কেন সে ঝাঁপিয়ে পড়ত, কী ভীষণ একাগ্রতা, অনেক সময়ই খুশী, অনেক সময় আক্রোশ, কখনও থাকত ক্লান্তির অবসাদ…
পৈরট-আপনার নিশ্চয়ই প্রায়োগিক জ্ঞান আছে?
হেনরিয়েটা-হা, জন যা বলত, আমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম এবং শিখতাম, বই পড়েও জানা যেত।
পৈরট–কিন্তু আপনি তো দেখছেন?
হেনরিয়েটা– না দেখে থাকলে হয়তো ভুল বলা হবে। লোকেরা শুনলে হয়তো ভেবে বসতে পারে যে, আমার জনের ওপর একটা প্রভাব ছিল এবং জনের কাছ থেকে আমি অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি। গ্র্যাঞ্জকে বোঝানোবোধহয় ততটা সহজ হবে না।