হেনরিয়েটা–আমি ভেতরে গিয়ে আপনার বাড়িটা একবার ঘুরে দেখতে পারি কি? বাড়ি দেখতে আমার বরাবরই খুব ভালো লাগে। আমি সর্বদাই কুকুর নিয়ে বেড়াই।
পৈরট–ইংরেজদের বোধহয় এই স্বভাব।
হেনরিয়েটা–আমি জানি, সেকথা আমি ভেবেও ছিলাম। সেই জগৎবিখ্যাত কবিতাটা জানেন আপনি? দিনগুলো একে একে কোথা দিয়ে যেন পার হয়ে যাচ্ছে, হাঁসকে খাওয়াই, স্ত্রীকেও ভর্ৎসনা করি, বাঁশীতে হ্যাঁন্ডেলের লায়গো বাজাই এবং ইচ্ছে হলে কুকুরের সঙ্গেও এক ছুট লাগাই আমি।
হেনরিয়েটার মুখে আবার হাসি ফুটে ওঠে, অত্যুজ্জ্বল অহেতুক হাসি। পৈরট তাকে নিয়ে বসবার ঘরে গিয়ে বসায়। হেনরিয়েটা ঘরের চারিদিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়–ঘরের পরিচ্ছন্নতা দেখে সে বিস্ময়ে মূক হয়ে যায়।
চমৎকার! সব জিনিষই দুটো করে। আমার স্টুডিও ঘুরে দেখার পর আপনি আমায় ভালো চোখে দেখার পরিবর্তে ঘৃণাই করবেন।
পৈরট-ঘৃণা করতে যাব কেন?
হেনরিয়েটা–ওঃ সেখানকার সব জিনিষে কাদার ছাপ।ওখানে একটি করে জিনিষও মজুত আছে–সংখ্যায় যদি দুটো থাকত তবে বোধহয় নষ্ট হয়ে যেত।
পৈরট–আমি তা ভালোভাবেই বুঝতে পারি। আপনি নিজে একজন শিল্পী।
হেনরিয়েটা-আপনি কি একজন শিল্পী নন পৈরট?
পৈরট–এই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, কিন্তু আমি বলব, না। অপরাধ কী জিনিস সেটা আমি বুঝি–সেগুলো কল্পনাশক্তির সর্বোচ্চ চর্চা। তাই সমাধান করার জন্যেও কোনো সৃজনী শক্তির কাছে দ্বারস্থ হতে হয় না। প্রয়োজন হয় শুধু সত্য উদঘাটনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।
হেনরিয়েটা–সত্যের জন্য প্রবল ইচ্ছা–এই প্রয়াস আপনাকে হয়তো বিপজ্জনক পথে চালিত করতে পারে। এই সত্য কি আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে?
পৈরট–আপনি কী বলতে চাইছেন, মিস স্যাভারনেক?
হেনরিয়েটা–আমার বলার উদ্দেশ্য হল এই যে, আপনি সত্য জানার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু জানাই কি সব? আপনি যদি সত্য জানতেই চান তবে আপনার সুপ্ত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে?
পৈরট-আপনি বলছেন যে, ক্রিস্টোর মৃত্যুর সব রহস্য আমার কাছে মোটেই অজানা নয়–যে জ্ঞান আমার মধ্যে সঞ্চিত আছে সেটা নিজের মধ্যে রাখাই ভালো–তাই না? আচ্ছা আমি আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করি যে, জনের মৃত্যুর ব্যাপারে আপনি কতটুকু জানেন?
হেনরিয়েটা–সম্ভাব্য উত্তর–জাদা, সন্দেহের প্রথম পাত্র বা পাত্রী, স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন–সত্যি কী ঘৃণ্য ব্যাপার।
পৈরট–কিন্তু আপনি তো তা মেনে নিতে একেবারেই মনের দিক থেকে প্রস্তুত নন? কী উদ্দেশ্যে আপনার এখানে আগমন সেটা বললেন না তো?
হেনরিয়েটা–আমি এ ব্যাপারে স্থির নিশ্চিত যে, আপনার মতো সত্য উদঘাটনের প্রবল বাসনা আমার নেই। কুকুর নিয়ে বেড়াতে আসা ইংরেজপল্লীর রেওয়াজ, ওটা নিতান্তই বাজে অজুহাত। তাছাড়া এ্যাঙ্গ্যাটেলদের কুকুরও নেই, এদিকটা আপনি হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন।
পৈরট-হ্যাঁ, আমার দৃষ্টি গেছে সেদিকে।
হেনরিয়েটা–মালীর কাছ থেকে তাই আমি কুকুরটা বার করে এনেছি। আমি সর্বদাই সত্যের আশ্রয় নিই না, পৈরট।
আবার সেই উজ্জ্বল, উচ্চকণ্ঠে খান-খান হয়ে ভেঙে পড়া সেই অট্টহাসি।
পৈরট-না, আপনার সাধুতা সম্পর্কে আমি কোনো কথা তুলতে চাই না।
হেনরিয়েটা– কী করে বুঝলেন?
পৈরট-কারণ এটাকে সত্য বলে আমার মন মেনে নিয়েছে।
হেনরিয়েটা-সাধুতা, আমার এখনও ঠিক ভালোভাবে বোধগম্য হয় না যে কথাটার প্রকৃত অর্থ কী?
কার্পেটের দিকে তাকিয়ে নিশ্চল হয়েই বসে রইল সে, ধীরে ধীরে মাথা তুলে পৈরটের দিকে তাকাল।
হেনরিয়েটা–আপনি কি জানতে চান না যে, কোন উদ্দেশ্যে আমি এখানে হাজির হয়েছিলাম?
পৈরট-আপনি হয়তো কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু মুখ ফুটে বলা সাহসে কুলোচ্ছে না।
হেনরিয়েটা-হা, ঠিকই বলেছেন, বিচারের মাধ্যমে অনুসন্ধান এবং পৈরট, আগামীকাল, তার জন্য মনস্থির করার ব্যাপারেও সময় লাগবে
হেনরিয়েটা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, একেবারে ভেঙে পড়ে। সে উঠে ঘরময় পায়চারি করতে শুরু করে দিল। ঘরের জিনিষগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, একটা ফুলদানির স্থান পরিবর্তন করে প্রৈটকে জিজ্ঞাসা করে ওঠে, ব্যবস্থাটা আপনার পছন্দ হয়?
পৈরট–মোটেই না মিস।
হেনরিয়েটা–আমি আগে থাকতেই জানতাম যে, আপনি এ ব্যাপারটা কখনও মেনে নেবেন না।(সে তাড়াতাড়ি করে জিনিষগুলোতে আবার যথাস্থানে রেখে দিলে) আচ্ছা লোকের যদি বলার মতো কিছু থেকেই থাকে এবং সে যদি নিজের মুখে কিছু বলতে চায় তবে আপনার মতো লোকের কাছে বলতেই পারে, কিন্তু পুলিসের এটা জানার কোনো প্রয়োজন আছে কি, আমি জন ক্রিস্টোর মিসট্রেস ছিলাম।
পৈরট–তাই নাকি? আপনারা প্রেমিক-প্রেমিকা ছিলেন?
হেনরিয়েটা–একথা বলে যদি আপনার মনে সুখ হয়, তাহলে বলতে কোনো বাধা নেই।
পৈরট–আপনি যেভাবে কথাটা বলছেন, আসলে ব্যাপারটা কি তাই ছিল?
হেনরিয়েটা–না।
পৈরট–কেন নয়?
হেনরিয়েটা নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ে। সে উঠে গিয়ে পৈরটের পাশে এসে বসে পড়ে এবং ধীর কণ্ঠে শুধু বলে ওঠে-পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে নির্ভুল ভাবে সব জিনিষ ব্যক্ত করার সবার মধ্যেই একটা প্রয়াস থাকে।
হেনরিয়েটার ব্যাপারে জানার আগ্রহ পৈরটের উৎসাহ যেন দ্বিগুণ হয়ে যায়। সে বলে ওঠে, আপনি জন ক্রিস্টোর মিসট্রেস ছিলেন? আপনাদের এই সম্পর্ক কতদিনের?