হেনরি–তা বোধহয় আছে, আমি তো রিভলবারটা আমার সংগ্রহের অংশ বলেই সনাক্ত করেছি।
গ্র্যাঞ্জ–যে রিভলবারটা আপনি আজ সকালে সনাক্ত করে এসেছেন, রিভলবারের এই গুলিতে ডাঃ ক্রিস্টোর মৃত্যু হয়নি।
হেনরি–আশ্চর্য!
গ্র্যাঞ্জ আশ্চর্যরকমভাবে ঘাবড়ে যায়। স্যার হেনরি বেশি কথা না বলে নিজের আগ্নেয়াস্ত্রের স্টক পরীক্ষা করতে রাজী হওয়ায় সে হেনরির কাছে আন্তরিকভাবেই কৃতজ্ঞ। ব্যাপারটা সত্যি খুব আশ্চর্যের–কারণ পরীক্ষা করার কোনো অর্থই হয় না।
হেনরি–আপনার একথা বলার পেছনে কোনো কারণ আছে কি, যে গুলিতে জনের মৃত্যু হয়েছে সেটা আমার স্টক থেকেই প্রাপ্ত?
গ্র্যাঞ্জ–কারণ অবশ্যই কিছু নেই, তবে আমি পুরোপুরি ভাবে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে চাই-গুলিটা আপনার স্টকের, না অন্য কোনো স্থান থেকে সংগৃহীত করা হয়েছে।
হেনরি-হ্যাঁ, আপনার যুক্তি অবশ্যই ঠিক, সেকথা আমি মেনেও নিচ্ছি। আচ্ছা, দেখাই যাক, তবে একটু সময়সাপেক্ষ।
তিনি ডেস্ক খুলে চামড়ার বাঁধাই একটা খাতা বার করে আনলেন এবং খাতার মধ্যে দেখতেও লাগলেন। হেনরিকে দেখে বড় ক্লান্ত লাগছিল। গ্র্যাঞ্জ এবার ঘড়ির দিকে দৃষ্টি দিল তিরিশ মিনিট। হেনরি বললেন, মনে হয় আরও একটু সময় লাগবে।
গ্র্যাঞ্জ–হ্যাঁ, স্যার।
হেনরি–একটা ৩৮ স্মিথ এবং ওয়েসন পাওয়া যাচ্ছে না। ওটা একটা বাদামী রঙের আবরণের মধ্যে ছিল এবং র্যাকের শেষ প্রান্তে।
গ্র্যাঞ্জ–এটাকে আপনি শেষ কখন দেখেছিলেন?
হেনরি–এই মুহূর্তে সেটা বলা সম্ভব হচ্ছে না ইন্সপেক্টর। এক সপ্তাহ আগে আমি একবার ড্রয়ারটা খুলেছিলাম, সেই সময়ে চুরি গিয়ে থাকলে শূন্য জায়গাটা আমার নজরে পড়ার কথা ছিল। তবে আমি জোর দিয়ে বলতে পারি না যে, ওটা আমার নজরে এসেছিল।
গ্র্যাঞ্জ–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ স্যার, দেখি আমি কতটা কী করতে পারি।
বহুক্ষণ নিশ্চল মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকার পর হেনরি জানলা দিয়ে বাগানের দিকে চলে গেলেন। সেখানে তার স্ত্রী দস্তানা ইত্যাদি নিয়ে বাগানের কাজে ব্যস্ত। তিনি মনে মনে এটা ভাবতে থাকেন, ইনসপেক্টর কী চান? তিনি আবার চাকরদের নিয়ে পড়বেন নাকি? হেসে শুধু বলে ওঠেন, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি বড় ক্লান্ত হেনরি।
হেনরি–হত্যাকাণ্ড এই বিষয়টাই খুব চিন্তার, লুসি!
লুসি–তা তো বটে! কিন্তু সব মৃত্যুর রূপই তো এক। ক্যানসার বা অন্য কোনো রোগে মারা গেলেও মৃত্যুর চিত্রটা একইরকম হবে। যতদিন রোগে ভোগে ততদিন আত্মীয়স্বজনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তার-বদ্যির জন্য ছোটাছুটি করে, টাকা বার করে এবং সবশেষে মারা গেলে আবার সেই ইত্যাদি…
হেনরি–কিন্তু আমাদের কাছে এই ব্যাপারটা ক্রমেই ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। যতটা সহজ ভাবে বিষয়টাকে নিয়েছিলাম, এখন সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে ততটা সহজ বোধহয় নয়।
লুসি–এছাড়া আর উপায়ই বা কী, আমাদের সহ্য করা ছাড়া তো কিছু করার নেই! বর্তমান নিয়ে ভাবা বোধহয় উচিত হবে না, অসুবিধাটা কোনোভাবে দূর হলেই আমরা না হয় বাইরে চলে যাব। খৃস্টমাসে বা ইস্টারের ছুটিতে চলো না আমরা বেড়িয়ে আসি আইন্সউইক বা অন্য কোনো জায়গা থেকে, কি বলো, ভালো হবে না?
হেনরি–খৃস্টমাস আসতে এখনও অনেক দেরি তার জন্য না হয় পরেও ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পাওয়া যাবে।
লুসি–তা অবশ্য আছে, আমি আগে থাকতে ভেবেও রেখেছি…তাছাড়া, সে বোধহয় এর মধ্যে মনস্থির করার সময়ও পেয়ে যাবে…
হেনরি–কে?
লুসি হেনরিয়েটার কথা বলছি। আমার মনে হয়, তারা অক্টোবরে–আগামী বছরের অক্টোবরে বিবাহটা সেরে ফেলতে পারে…তখন আমরা সেখানে গিয়ে হাজির হতে পারি…
হেনরি–তুমি সবসময় একটু বেশি ভেবে নাও, লুসি।
লুসি–তুমি বার্নবেস? সেখানে একটা ভালো দেখে স্টুডিও হতে পারে এবং হেনরিয়েটার একটা স্টুডিওর খুব প্রয়োজন। হাজার হোক তার প্রতিভা আছে একথা তো অস্বীকার করা যায় না। তার জন্য এডওয়ার্ডের গর্ববোধ হবে। দুটো ছেলে একটি মেয়ে–অথবা দুটো ছেলে দু’টো মেয়ে–চমৎকার হবে।
হেনরি–তুমি কতদুর কল্পনা করে নিয়েছ লুসি? আগে বিবাহ তো হতে দাও, তবে তো ছেলেমেয়ের কথা উঠছে।
হেনরি-বেচারা শয়তানী।
লুসি–কেন, শুধু শুধু শয়তানী কেন বলছ? সকলেই তো একদিন-না-একদিন মারা যাবে। মৃত্যুর যখন কোনো অবধারিত কাল নেই। মৃত ব্যক্তির জন্য শোক করে চোখের জল ফেলা আমার কুষ্টিতে নেই, ভালো লাগে না…
হেনরি লুসির দিকে কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকেন। কেবল বলে ওঠেন, আমি সর্বদাই ভাবতাম যে, তুমি বোধহয় জন ক্রিস্টোকে মনে মনে পছন্দ কর। ঠিক বলিনি কি?
লুসি-হা, তাকে আমার সত্যি ভালো লাগত। তার আকর্ষণও এড়িয়ে যাওয়া যেত না ঠিকই, তবে ব্যক্তি বিশেষের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা আমার কোনোদিনই ধাতে সয় না।
.
১৮.
হারকিউল পৈরট জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ল হেনরিয়েটা স্যাভারনেক রাস্তা দিয়ে তার বাড়ির দোরগোড়ার দিকে এগিয়ে আসছে। জন ক্রিস্টো যেদিন নিহত হয় সেদিন তার গায়ে সবুজ টুইডের যে পোষাকটা ছিল আজও তার গায়ে উঠেছে সেই পোষাক। তার সঙ্গে রয়েছে একটা স্প্যানিয়াল কুকুর। পৈরট তাড়াতাড়ি গিয়ে সদর দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পড়ে। হেনরিয়েটা তার দিকে তাকিয়ে মৃদুমন্দ হাসতে থাকে।