বেরিল কলিন্স গ্রাঞ্জের প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিয়ে দেয় এবং ডাক্তারের পেশার খুঁটিনাটি সবকিছুই তার নখদর্পণে। গ্র্যাঞ্জ বিষয়ান্তরের দিকে গমন করল। তার বাসনা এখন জন এবং জাদার সম্পর্কের মধ্যে নাক গলানো।
বেরিল বলল, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল এককথায় ভীষণ ভালো।
ইন্সপেক্টর খুব গোপন একটা কথা জিজ্ঞাসা করে ওঠে, আচ্ছা, তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই নাকি আর দশটা বিবাহিত যুগলের মতো সর্বদা কিছু-না-কিছু নিয়ে ঝগড়া করে যেত?
এমন ঝগড়ার কথা আমি কল্পনাতেও আনতে পারি না।–মিসেস ক্রিস্টো নিঃসন্দেহে স্বামীর প্রতি অনুরক্তা ছিলেন, অনেকটা ঠিক ক্রীতদাসীর মতোই বিশ্বস্তা এবং অনুগতা।
গ্র্যাঞ্জ–নিজের জন্য কিছু করতেন না?
বেরিল–না, সবকিছুতেই ডাক্তার ক্রিস্টোকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়াত।
গ্র্যাঞ্জ–অত্যাচারী, এ্যা?
বেরিল ভাবতে থাকে।
-না, তা বলা বোধহয় উচিত হবে না আমার, তবে তিনি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু ভাবতে পারতেন না। তিনি মনে মনে সবসময়ে এটাই প্রত্যাশা করতেন যে, মিসেস ক্রিস্টো–ক্রিস্টোর ইচ্ছামতোই চলবেন।
গ্র্যাঞ্জ–রোগীদের নিয়ে কোনো অসুবিধা ছিল না? আমি বলতে চাইছি, রোগিণীদের সঙ্গে কোনোরকম…আপনি সহজ করেই বলতে পারেন, মিস কলিন্স। লোকেরা অবশ্য ভাবে, ডাক্তারের সেইদিক থেকেও অসুবিধার কারণ ঘটতে পারে…
ঘৃণায় বেরিলের নাসিকা সঙ্কুচিত হয়ে যায়, সে বলে ওঠে, ওঃ, সেইরকম জিনিষ! ডাক্তার ক্রিস্টো এমন একজন চিকিৎসক ছিলেন যে সে লাইনের যে-কোনো অসুবিধা দূর করার ক্ষমতা তার ছিল। রোগী বা রোগিণীদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত মধুর। আসলে তিনি যে একজন অত্যাশ্চর্য চিকিৎসক ছিলেন এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
গ্র্যাঞ্জ–কোনো স্ত্রীলোকের সঙ্গে কোনো ব্যাপারে কি তিনি কখনো জড়িয়ে পড়েছিলেন? আনুগত্যর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে জবাব দেবেন, এগুলো জানার সত্যি খুব প্রয়োজন আছে মিস কলিন্স।
বেরিল–হ্যাঁ, আমি সেটা ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি। না, এমন কোনো ঘটনা সত্যি আমি জানি না।
গ্র্যাঞ্জ–হেনরিয়েটা স্যাভারনেকের ব্যাপার কি? বেরিলের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।
বেরিল–এই পরিবারের তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
গ্র্যাঞ্জ–ডাক্তার ক্রিস্টো এবং মিসেস ক্রিস্টোর মধ্যে মিস হেনরিয়েটাকে নিয়ে তার মনে কী অশান্তি ছিল?
বেরিল– কখনও না
গ্র্যাঞ্জ–মিস ভেরোনিকা ক্রে-র কি খবর?
বেরিল–ভেরোনিকা ক্রে! বেরিলের কণ্ঠস্বরে নির্ভেজাল বিস্ময়ের সুর।
গ্র্যাঞ্জ–ডাক্তার ক্রিস্টোর বান্ধবীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
বেরিল–আমি তার সম্বন্ধে কোনোদিন কিছু শুনিনি। তবে নামটা খুব শোনা শোনা লাগছে।
গ্র্যাঞ্জ-সিনেমার অভিনেত্রী।
বেরিল–হ্যাঁ, হা, মনে পড়েছে। এইজন্যই নামটা শুনে মনে হচ্ছিল খুব চেনা চেনা। তবে আমি জানতাম না যে, ডাক্তার ক্রিস্টোর সঙ্গে তার কোনো পরিচয় ছিল কিনা!
বেরিলের বলার ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল তার প্রত্যুত্তরে দেওয়া জবাবও খুব স্পষ্ট, তাই এ্যাঞ্জের পক্ষে কোনো প্রশ্ন তোলা সত্যি সম্ভবপর ছিল না।
গত শনিবারে ডাক্তার ক্রিস্টোর আচার-ব্যবহারে কোনো ব্যতিক্রম চোখে পড়েছিল কি? শুধু এই প্রসঙ্গে এসেই তার গোপনীয়তা ভেঙে গেল এবং জবাবও একটু আলাদা ধরনের শোনাল।
বেরিল–তার হাবভাব মোটেই প্রতিদিনের মতো ছিল না।
গ্র্যাঞ্জ–কোনো পরিবর্তন নজরে পড়েছিল কি?
বেরিল–সাধারণ কোথাও যাবার থাকলে একটু তাড়াতাড়ি রোগী দেখার ব্যাপারটা সেরে রাখতেন। কিন্তু এবার ঘটনাটা হল একটু আলাদা, শেষ রোগীণীকে দেখার আগে বহুক্ষণ এভাবে কেটে গেল, রোগী দেখার ঘন্টা বাজানোর কথা তার মনেও এল না। আমার মনে হয় তিনি হয়তো কোনো গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। এর বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সত্যি সম্ভব নয়।
ইন্সপেক্টর গ্র্যাঞ্জ নিজের অনুসন্ধানে মনের দিক থেকে মোটেই খুশী হতে পারছিল না। এমন কিছু সে উদ্ধার করতে পারল না। যার ভিত্তিতে সে একটা মামলা দাঁড় করাতে পারে। সরকারী উকিলের কাছে কোনো কেসের জন্য দ্বারস্থ হলেই কেসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনের যুক্তিতে সেগুলো আগে প্রমাণ করতে হবে। সে মনে মনে এই সত্যটা ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছিল যে জনের হত্যাকারী স্বয়ং জার্দা ক্রিস্টো। তার মনে সন্দেহ জেগেছিল এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কোনো উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে–ঈর্ষাই হয়তো এই হত্যার সেই মোটিভ, সে মনের দিক থেকে এই যুক্তি গ্রহণ করলেও এই পথে অগ্রসর হওয়ার মতো সাহায্যকারী কোনো প্রমাণ তার হাতে এসে ঠেকল না। সারজেন্ট কুম্বসের দায়িত্ব ছিল চাকরানীদের জেরা করার, কিন্তু তারাও সেই একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি করল। তারা সবাই একই কথা বলে গেল। মিসেস ক্রিস্টো সেই মাটিকে তার দেবতার আসনে বসে পুজো করে, যে মাটির ওপর দিয়ে তার স্বামী হেঁটে যায়।
গ্রাঞ্জের মনে হল, যা কিছু ঘটার সব হলোতেই ঘটে গেছে। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতিও হতাশাব্যঞ্জক। সেখান থেকেও কোনো সূত্রের সন্ধান করা যায়নি!
ডেস্কের ওপর রাখা টেলিফোনটা শব্দ করে বেজে ওঠে, মিস কলিন্স এগিয়ে এসে রিসিভার তোলে।
সে বলে ওঠে, টেলিফোনে আপনাকে ডাকছে, ইন্সপেক্টর।
–হ্যালো, গ্র্যাঞ্জ বলছি। কি?–বেরিল কৌতূহলের সঙ্গে গ্রাঞ্জের মুখের দিকে একদৃষ্টে অপলক নয়নে তাকিয়ে উভয়ের কথোপকথন নীরবে শুনে যাচ্ছিল। কাঠের তৈরি মুখের মতো এ্যাঞ্জের মুখও পূর্বের মতোই আবেগ-বহির্ভূত।