মিডগে-প্রিয় বোন লুসি।
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল-হেনরিয়েটার কিছু কাজ আমার খুব মনোরম বলেই মনে হয়। যেমন ধরো; উয়িপিং এ্যাশট্রি ফিগার। মিডগে, একটা কথা না বলে পারছি না যে, হেনরিয়েটার মধ্যে প্রতিভা আছে। তাছাড়া ব্যক্তিগত ভাবেও সে সকলের কাছে প্রিয়পাত্র।
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়েন, জানলার কাছটিতে এসে দাঁড়ান। অন্যমনস্ক ভাবে ছেঁড়া তারে সুর তোলার চেষ্টা করেন। আপন মনেই লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল বিড়বিড় করতে থাকেন, কেমন যেন বেসুরো লাগছে?
বেসুরো?
তাই তো ভাবি কেন এমন হচ্ছে। সদর দরজার দু’ধারে আনারস গাছের মতো বেমানান, বেসুরো কেন মনে হচ্ছে? ছেঁড়া তার বলে। একটা-না-একটা কারণ নিশ্চয়ই থাকবে।শূকরছানার মতো অনুসন্ধিৎসু হতে হবে, তবে যদি কারণ মেলে।
মিডগে-দেখো লুসি, একটা বিষয় শেষ হতে না হতেই অন্য প্রসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যেও না। সপ্তাহান্তের আলোচনার জন্যই তোমার এখানে আগমন, এবং যতদূর দেখছি। তোমার মনে বিন্দুমাত্র উদ্বেগের কোনো লক্ষণ চোখে পড়ছে না। তুমি যদি রাউন্ড গেম থেকে দুরে সরে থাক, জাদার সঙ্গে সহনশীলতার মাত্রা বজায় রেখে কথাবার্তা বলে চল এবং হেনরিয়েটাকে দিয়ে যদি তীক্ষ্ণবুদ্ধিসম্পন্ন ডেভিডকে পোষ মানাতে পার, তবে আর অসুবিধাটা রইল কোথায়
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল–আছে, আছে বোনটি, অমও একটা জিনিষ আছে, এডওয়ার্ড আসছে যেন!
মিডগে-ওঃ, এডওয়ার্ড! মিডগে নামটা উচ্চারণ করেই চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পরে ধীরে ধীরে মুখ খুলল, কোন্ লোভের বশবর্তী হয়ে এডওয়ার্ডকে নিমন্ত্রণ করে আনছ শুনি?
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল–আমি তাকে ডাকিনি, সে নিজেই উপযাজক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছে সে “এখানে উপস্থিত হতে পারে কি না।” যদি তাকে মুখের ওপর ‘না’ বলে দিই, সে আর কোনোদিন এ পথ মাড়াবে কিনা সন্দেহ, কারণ তার যা স্বভাব চরিত্র।
মিডগে ধীরে ধীরে শুধু মাথা নাড়ে। আর ভাবে, হ্যাঁ, কথাটা মিথ্যে নয় সত্যি তার যা স্বভাব। মুহূর্তের মধ্যে তার মনের মণিকোঠায় প্রিয় মুখখানি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কতকটা যেন লুসির অহেতুক মোহময় মুখশ্রীর ন্যায় শান্ত নির্ভীক বিদ্রুপাত্মক…।
মিডগের মনের সুরের প্রতিধ্বনি তুলে লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল বলে চলেন, প্রিয় এডওয়ার্ড… হেনরিয়েটা যদি একবার মনস্থির করে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারত, যদি সে তাকে বিবাহ করত…আমি জানি, এডওয়ার্ডকে সে মনে মনে খুবই পছন্দ করে…যদি একবার সাপ্তাহান্তের ছুটিতে ক্রিস্টো এসে হাজির না হতো তবে সব পূর্বের মতোই চলতো, সব ঠিক হয়ে যেত…কি এডওয়ার্ডের ওপর জনের খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। জনের প্রয়োজন যত বাড়ে, এডওয়ার্ডের উপস্থিতি তত বেশি অপ্রয়োজনীয় আর নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে।
বুঝতে পারছ আমি ঠিক কী বলতে চাইছি?
মিডগে শুধু নিঃশব্দে মাথা নাড়ে।
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল–এই সাপ্তাহান্তিক ছুটি উপভোগের ব্যবস্থা অনেক আগে থাকতেই ঠিক হয়ে আছে, তাই ক্রিস্টোফারকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একটা কথা ভেবেই আমার মন বারবার উতলা হয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছে একদিকে ডেভিড যেন দাঁতে রেখে নখ কাটবে, জাদাও বেসামাল হয়ে পড়বে। অপরদিকে জন অত্যন্ত ধনাত্মক এবং এডওয়ার্ড তেমনি ঋণাত্মক…কি যে পরিস্থিতি দাঁড়াবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছি না।
মিডগে–পুডিংয়ের উপাদানগুলো মোটেই উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
লুসি, মিডগের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। হাসিমুখেই বলে ওঠেন, এমন অনেক সময়ও গেছে যখন সমস্যাগুলোর সমাধান সহজভাবে হয়ে যায়। আগামী রবিবার আমরা একজন অপরাধশাখার লোককে আমাদের সঙ্গে লাঞ্চ করার নিমন্ত্রণ করেছি–তাতে করে হয়তো অবস্থার কিছু হেরফেরও হতে পারে। কি বলো হতে পারে না?
মিডগে-শেষ পর্যন্ত অপরাধশাখার লোক?
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল-হ্যাঁ, ভদ্রলোক আগে থাকতেন বাগদাদে, হেনির তখন হাইকমিশনার ছিলেন। অন্য জনাকয়েক সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে তাকেও নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। ভদ্রলোক হাঁসের রঙের মতো সাদা স্যুট পরে এসেছিলেন, বোম ঘরে ছিল গোলাপী রঙের ফুল এবং পায়ে কালো পেটেন্ট চামড়ার জুতো। তাঁর সম্বন্ধে আর বেশি কিছু আমার জানা নেই। কারণ, কে কাকে মারল এই সব আজেবাজে গল্প শুনতে আমার কোনোদিনই ভালো লাগে না। আমার বক্তব্য হল যে, লোকটা মরে গেলে আর তার বাকি কী রইল? মৃত্যুর পরে-কে মারল, কেন মারল, কখন মারল–এইসব নিয়ে হৈ-হুঁল্লোড় বোকামি ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে!
মিডগে-তোমাদের এখানে কি কোনো খুন-টুন হয়েছে নাকি, লুসি?
লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল-না, না বোন, আমাদের এখানে খুন হতে যাবে কেন? ঐ ভদ্রলোক নতুন ঐ বাড়ির লোক–ঐ যে নতুন বাড়ি করেছে। বাড়িতে বিশ্রী রকমের একটা বাগানও করেছে লন্ডনের লোকেদের যা রুচি, তারা বরাবরই এরকম কুৎসিত জিনিষের প্রতি আসক্ত। ঐ ভদ্রলোকের বাড়ির গায়েরই বাড়িটা এক অভিনেত্রীর। তারা আমাদের মতো বারোমাস বাড়িতে কাটায় না…। লেডি এ্যাঙ্গক্যাটেল ঘরময় পায়চারি করতে লাগলেন এবং সেই সঙ্গে এও বললেন, যাকগে, ও সব বাজে ব্যাপার। এসব ভেবে আর কী লাভ, তোমার সাহায্য পেয়ে আমি বড়ই উপকৃত হলাম, প্রিয় মিডগে।