তার ঠিক দশদিন পরে জাদা বিজয়িনীর মতো প্লাস্টারের তৈরি একটা ছোট মূর্তি জনকে দেখাল, মূর্তি, মূর্তিটা হেনরিয়েটার আর দশটা মূর্তির মতোই বেশ সুন্দর। দক্ষ শিল্পীর হাতের স্পর্শ লাগলে যেমন সুন্দর এবং নিখুঁত হয়; তেমনি ভাবে অতুলনীয় হয়ে উঠেছে মূর্তিটি। জার্দাকে দেখেই তার অনুকরণে গড়া হয়েছে মূর্তিটি এবং আনন্দে আত্মহারা এখন জাদা, মূর্তির মধ্যে জাদা স্বয়ং যেন অমরত্ব লাভ করেছে–হাবভাব দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে।
জার্দা–আমার মনে হয়, জন মূর্তিটা সত্যি খুব সুন্দর হয়েছে।
জন–এটা কি হেনরিয়েটার হাতের কাজ। কিন্তু তার কাজ তো এর চাইতে অনেক ভালো হতে পারতো। আমার তো দেখে মনেই হয় না এটা হেনরিয়েটার কাজ!
জার্দা–এটা যদিও একটু পৃথক ধরনের, কিন্তু আমার তো বেশ ভালোই লেগেছে। কাজের প্রশংসা না করে পারছি না, তুমি কী বল জন?
জন আর কিন্তু কিছু বলে না, জার্দার আনন্দে সে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে চায় না। কিন্তু প্রথম সুযোগটাই সে সদ্ব্যবহার করল, হেনরিয়েটাকে আক্রমণ করল।
জন–তুমি জাদাকে এমনভাবে বোকা প্রতিপন্ন করতে চাইছ কেন? ওটা কী বানানো হয়েছে? তোমার মূর্তি গড়ার হাত তো বেশ পাকা!
হেনরিয়েটা–আমার তত মনে হয়, এটা বেশ ভালোই হয়েছে। জার্দাও এর জন্য যথেষ্ট খুশী।
জন–জাদা তো এ ব্যাপারে খুশী হবেই, কারণ আর্টের বিষয়ে সে কিছুই বোঝে না।
হেনরিয়েটা–আর্টের দিক থেকে বিচার করলে বোধহয় খুব খারাপ হয়নি জন। প্রতিকৃতি থেকেই যে মূর্তি বানানো হয়েছে সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং সারল্যমিশ্রিত। বিন্দুমাত্র মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়নি।
জন–তুমি এমন সব নিম্নমানের কাজে সময় নষ্ট কোরো না…
জন পাঁচফুট উঁচু একটা কাঠের মূর্তির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ওহে, এটা কি?
এটা বানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক গ্রুপের জন্য। পিয়ারউড। পূজারিনী।
হেনরিয়েটা তার দিকে পলক নয়নে চেয়ে আছে। তারও চোখের পলক পড়ছে না–তার ঘাড় হঠাৎ ফুলে উঠলো, এবং তার দৃষ্টির তখন রঙ পাল্টে গেছে, দৃষ্টি থেকে ঝরে পড়ছিল কুদ্ধ ভাব।
তার মানে তোমার চোখে জার্দা এখন? তোমাকে কে এই সাহস প্রদান করল?
–আমি এই দেখে অবাক হচ্ছি যে তুমি বেশ এইসব বকে যাচ্ছ? তুমি যদি তা একবার চোখের দেখা দেখতে…সে একটা আঙুল রাখল তার বলিষ্ঠ চওড়া ঘাড়ের মাংসপেশীর ওপর।
হেনরিয়েটা মাথা নাড়ে, হা, এটা ঘাড় এবং কাঁধ–আমি এটাই করতে চেয়েছি–সেই ভারী সম্মুখে ঝোঁক–আত্মনিবেদন-নুয়ে পড়ার এক চিত্র। অত্যাশ্চর্য!
–অত্যাশ্চার্য? এদিকে একবার তাকিয়ে দেখ হেনরিয়েটা, জার্দার কি হাল করেছ তুমি!
জার্দা নিশ্চয়ই জানবে না, কেউ জানবে না। তুমি জান যে, জাদা মূর্তি দেখে কোনোদিনই নিজেকে চিনতে পারবে না, কেউ পারবে না। এটা জার্দা নয়, অন্য কেউও নয়।
জন–আমি কিন্তু ঠিক চিনতে পেরেছি, পারিনি?
হেনরিয়েটা–তুমি যা জেনেছ তা একটু অন্যরকম। তুমি দেখতে জান।
জন–চুলোয় যাক ঘাড়! কিন্তু হেনরিয়েটা তোমার এমন করার কোনো যুক্তি আমার চোখে পড়ছে না। তুমি অন্যায় করেছ।
হেনরিয়েটা–তাই কি?
জন–তুমি কি এখনও বুঝতে পারছ না? তোমার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি কি এখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে?
হেনরিয়েটা–তোমার বোঝার ক্ষমতা নেই জন। আমার মনে হয় না, আমি তোমাকে কোনোদিন বোঝাতে পারব…তুমি বুঝতে পার না…কি করা হয়নি?…দিনের পর দিন দেখে দেখে সেই ঘাড়ের লাইনের পুনরাবৃত্তি এ মাংসপেশী-মস্তকের সামনের দিককার কোণ–পুরু ঠোঁট। আমি অনেক দেখেশুনে করেছি এবং আমি এই রূপটাই করতে চেয়েছি–প্রতিবার আমি জাদাকে প্রত্যক্ষ করেছি এবং দেখে দেখে ঐ রূপেই দাঁড় করাতে হয়েছে…দোষের মতো কিছু হয়েছে কি।
জন-বিবেকশূন্য!
হেনরিয়েটা-হা, ঠিক তাই। তোমার মনের বাসনা থাকে যদি এরকমটা পাওয়ার, তোমাকে তাই গ্রহণ করতে হবে।
জন–তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে, তুমি কিছু গ্রাহ্য করো না, জাদাকেও তুমি গ্রাহ্য করো না…
হেনরিয়েটা–বোকার মতো কথা বলল না জন। জার্দাকে খুশী করার কথা ভেবেই আমি মূর্তিটা বানিয়েছি, আমি আর যাই হই, অমানুষ নই।
জন–নিঃসন্দেহে তুমি অমানুষ!
হেনরিয়েটা–তুমি সত্যি করে বলো তো জন, জার্দা কি নিজেকে তার মধ্যে খুঁজে পাবার আশা রাখে?
অনিচ্ছাসত্ত্বেও জন পূজারিনীর মূর্তির দিকে তাকাল-পূজারিনী নাম না দেবতার কাছে মাথা খুঁড়ছে–প্রার্থনা করে চলেছে–মুখ উত্তোলিত–অন্ধ, বোবা, ভক্তিমতী-শক্তিশালিনী ধর্মোন্মত্তা।
জন হেনরিয়েটার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, তুমি যে জিনিষটা তৈরি করেছ হেনরিয়েটা, সেটা দেখলে মনে এক ভীতি জাগে।
ঈষৎ কেঁপে ওঠে হেনরিয়েটা। সে বলে ওঠে, হ্যাঁ, আমি ভেবেছিলাম যে…
জন তাড়াতাড়ি করে তাকে বলে ওঠে, সে কার সন্ধান করছে? পূজারিনীর সামনে কে আছে?
হেনরিয়েটা কিছুক্ষণ ইতস্তত করে, সে বলে ওঠে, আমি জানি না, তবে আমার মনে হয় সে তোমার সন্ধানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
হেনরিয়েটার কণ্ঠস্বর কেমন অদ্ভুত শোনাল।
.
০৫.
খাবার ঘরে শিশু টেরি আরও একটা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করল।
সীসা লবণ গরম জলের চাইতে ঠান্ডা জলে অনেক বেশি দ্রবণশীল। যদি পটাসিয়াম আয়োডাইড যোগ করা হয় তবে সীসা–আয়োডাইডের হলদে তলানি তুমি পাবে।