নালাটা এত তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাচ্ছিল যে আমি নৌকাটাকে একটানে নিয়ে আসতে পারলাম। তারপর এক মিনিট পরে লিডা যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। অস্ত্রাগার থেকে তিনটে নতুন মেশিনগান নিয়ে সেগুলোকে ডেকের কাছে রাখলাম। তারপর প্রায় একঘন্টা ধরে বৃষ্টি আরম্ভ হল। বৃষ্টি থেমে সূর্য উঠল। আমি ইঞ্জিনটা নিয়ে চারদিকে একটু ঘুরলাম। তারপর আবার বাজনা বাজতে শুরু করল। পরে একটা থামলো আবার একটা বন্ধ হয়ে গেল এইভাবে হঠাৎ সবগুলোই থেমে গেল।
পরে একটা বেশ লম্বা সাপ গায়ে সবুজ দাগ আমার দিকে এগিয়ে এল। আবার বৃষ্টি আরম্ভ হলো, চলল প্রায় তিনটে পর্যন্ত। প্রায় দশটার সময় আমি পিস্তলের গুলির আওয়াজ শুনলাম। মেশিনগানটা মট করে ভেঙে আমি ছুটলাম ডেকহাউসের দিকে, গুঁড়ি-সঁড়ি মেরে বসে বন্দুকটা বন্দরের ধারে রেখে অপেক্ষা করতে থাকলাম। মেয়েটা একটা বাঁশী বাজাল। প্রথমে দুটো আস্তে, দুটো জোরে তারপর আবার দুটো আস্তে বাজাল। আমিও বাঁশী বাজিয়ে দিলাম, লিডা একটা ছুরি নিয়ে এগিয়ে এসে বলল, সে তাকে মেরে ফেলেছে। কাকে সে মেরেছে জিজ্ঞেস করতে ঘামতে ঘামতে লিডা বলল, তারই একটি লোককে। কারণ প্রথমে সে তার আদেশ অমান্য করেছিল। লিডা বলল, যখন সে ফিরে আসতে লাগল তখন লোকটা পেছনে আসতে আসতে ফাঁদের মধ্যে এসে পড়ল, তখন লিডা তাকে গুলি করে মেরেছে। তার নাম টোমাসো। লিডা বলল, নোকটা প্রথমে খুব জোরে কেঁপে উঠেছিল তারপর ডেকের ওপর হঠাৎ বসে পড়েছিল। সে কিছুই করতে পারেনি। কারণ লোকটি জানতে পেরেছিল আমার সঙ্গে অনেক লোক আছে। সুতরাং সে নিশ্চিত যে টোমাসো মৃত। আমি বললাম, হয়তো সে পাপাডকের হয়ে কাজ করছিল। সে ঠিকই করেছে। এরপর লিডা আমার কাছ থেকে একটা সিগারেট আর একটু মদ নিল। তারপর সে পেনসিল নিয়ে ম্যাপটা একবার পড়ে নিল। আবার নদীর ধারে যাব বলে ঠিক করলাম। সেখানে কোন একজনের আমাদের জন্য অপেক্ষা করার কথা ছিল, সামনে বেশ কয়েকটা গ্রাম। পশ্চিমে লিম্বে নামে আর স্যান্স সুসীর পূর্বদিকে মিলোট নামে একটি শহর আছে। সেখানে পাপাডকের প্রচুর সৈন্য ছিল। লিডা বলল, তার লোকেরা বলেছে মিলোট শহরের আগে বড় রাস্তায় খুব পাহারা রয়েছে। সৈন্যরা আর টনটন ম্যাকিউট সেখানেই আছে। বললাম, লোকগুলো খুব বাজে ধরনের। লিডাকে তারা ভয় দেখালেও লিডা যেন তাদের ভয় না পায়। লিডা বলল, ছোটোবেলায় তাদের প্রচুর জমিজমা ছিল, তারা বেশ সুখে বাস করত। কিন্তু ম্যাকিউট একদিন রাত্রে এসে বাবাকে মারে এবং এক সপ্তাহ পর তিনি মারা যান। তারপর লিডাকে তারা ধরে নিয়ে যায়। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে লিডা পালিয়ে যায় হাইতি ত্যাগ করে। তার আমেরিকান বন্ধুরা এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিল। লিডার মা বেলেভিউতে মারা যান। লিডার সমস্ত কথা আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হল। লিডা বলে চলল যে হাইতিতে তখন মাত্র কয়েকজন লোক ছিল তারা সব পাপাডকের কাছে যায়। বেশীরভাব লোকই ছিল গরীব। লিডা গরীব হলেও একটা বারের পরিচারিকা ছিল। একদিন রাতে ড. ভ্যালডেজ কয়েকজন বন্ধু নিয়ে বারে এল। অন্য একজনের সঙ্গে কথা বলতে শুনে ড. বুঝল লিডা হাইতির মেয়ে। বেশ কয়েকদিন পর ড. ভ্যালডেজ একলা বারে এল এবং লিডা ও ড. বন্ধু হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম লিডাকে, সে কি জানে যে ভ্যালডেজ একজন কমুনিস্ট। লিডা বলল, ভ্যালডেজ একজন বোকা, সরল প্রকৃতির মানুষ ছিল। লিডাকে সে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ভ্যালডেজ তখন তার জন্য পাগল। লিডা তিন বছর ওর সঙ্গে ছিল। ভ্যালডেজের বাবা, ভাই ও ক্যাথলিক স্ত্রীও ছিল।
রোমেরা লিডার জন্য একটা ঘর তৈরী করেছিল। লিডা প্যারিস ও সুইজারল্যাণ্ডের স্কুলে যেত, টনটন ম্যাকিউট লিডাকে বলেছিল ভ্যালডেজ খুব শিক্ষিত। লিডা মদের বোতল হাতে নিয়ে বলল, তার একটা মাত্র ছাগলছানা ছিল। কিন্তু সেটা ছিল খুব রহস্যজনক এবং তার হাতভর্তি বই ছিল। সে তখন আগের দিন রাত্রে কি করেছিল সেই গল্পের অছিলায় হাসিতে মত্ত হল। সে রাত্রিটা তার স্নাতক বিভাগে পাশ করার ঠিক আগের সপ্তাহের ঘটনা।
লিডা বলল, সে এক সপ্তাহের মতো সে রোমেরাকে দেখেনি। অফিসে বা ঘরে যখন সে রোমেরাকে দেখল না তখন সে খুব কষ্ট পেয়েছিল। একদিন বিকেলে, রোমেরাকে দেখতে পেয়ে লিডা রোমেরাকে ডাকে কিন্তু রোমেরা তাকে দেখেও না থেমে খুব জোরে জোরে হাঁটতে থাকে। লিডার সেদিনই মনে হয়েছিল পৃথিবী বোধহয় আজই শেষ হয়ে যাবে। কারণ রোমেরাকেই সে একমাত্র ভালোবাসত। লিডা তারপর দুদিন কিছু খায়নি। তৃতীয় দিনে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রোমেরার অফিসে গিয়ে তাকে ভয় দেখায় যে, সে তাদের সম্পর্কের কথা ক্যামগানকে বলে দেবে। এই কথা শুনে সন্ধ্যেবেলা রোমের কাছে এসে বলল যে, সে ভাইরাস আক্রান্ত। রোমেরা কথা দিয়েছিল রাতে এসে লিডাকে সমস্ত বলবে। রোমেরা জানায় লিডা ছাড়াও যে যেন অন্য একজনের মুখ দেখতে পাচ্ছে। রোমেরা তারপর আর ফিরে আসেনি। কারণ সেই রাত্রেই তাকে তারা নিয়ে পালিয়ে গেল। লিডা তখন বুঝতে পারল রোমেরা কি কারণে ভয়ে পেয়েছিল। রোমেরা পাপাডকের বিরুদ্ধে অনেক ঘটনা লিখেছিল। কিন্তু সে লিডারের বিরুদ্ধে কিছু খারাপ করতে চায়নি। আশঙ্কা ছিল যে টনটন ম্যাকিউট তাকে নিয়ে পালাবে। তাকে মেরে ফেলতেও পারে কিন্তু তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে না রেখে তাকে হাইতিতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। লিডা বলল যে, সে অপেক্ষা করছিল কিন্তু আসেনি। কিন্তু রোমেরা কিছুই করেনি। সে খুব সহজ মানুষ সে জানতো না কেমন করে নিজেকে রক্ষা করা যায়। শেষটা আমি জেনেছিলাম এক্সই এবং সি-আই-এর থেকে। এরপর আমি দুটো মেশিনগান ঠিক করে দুদল সৈন্য, দুটো ক্যাম্প, দুটো পিস্তল রাখার বেল্ট নিয়ে একটা মোরায় রাখলাম।