বলল, তারা আমাকে সহজেই গুলি করতে পারত। কিন্তু যখন তারা তীরের কাছে গেল তাদের কেউ রক্ষা করতে পারল না। লিডাকে বললাম সে যদি সাধারণ পথেই খেলতে আরম্ভ করে তবে তার প্রতি আমার কোন যত্ন থাকবে না। কিন্তু এখন তাদের অনেক কাজ।
বগিম্যান সী উইচটিক তখনও লক্ষ্য করেনি। বলল, আমি জানি আমি খুব তাড়াতাড়ি মরে যাবে। তাকে খুব তাড়াতাড়ি নদীর ধারে নিয়ে যাওয়া উচিত মনে করে আমরা পোতের কাছে গেলাম। তখন তাদের খুব বিপদ মেনেও আমি কোনরকম আভাস তাকে দিলাম না। ডেকহাউসে গিয়ে রেডিওটা খুলে ট্রানসলিভারের চাবিটা খুললাম। লিডাকে জিজ্ঞেস করলাম তার কাছে কোন চাবি আছে কিনা। বললাম, শুধু আবহাওয়া খবরটা জানতে চাই আমি। একটা সবুজ আলো দেখে আমি চাবিটা টিপতেই সেই থেকে একটা জোরে শব্দ হল। চাবিটা খুলে দিয়ে ডায়াল করলাম। দুটো তার একসঙ্গে কাজ করছে শুনতে পেলাম। আমি খুব দূরে সাউথ ক্যারোলিনা সমুদ্রের ধারে এক্স স্টেশনে সি কিউ পাঠালাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আভাস পেলাম সঙ্কেত আসছে আরো এগিয়ে যাও, এনগ্রি এগিয়ে যাও, ওকে
আমি চাবি ঘোরালাম-কে-টেসটিং, কে-টেসটিং এ-আর…। উত্তর এল। তারপর সব চুপচাপ আমি ইঞ্জিনটা চালাতে গেলাম। সমুদ্রের জলের ওপর সূর্যাস্তের সোনালী রূপালী রঙের আভা পড়ল। জাহাজে আহত ব্যক্তিদের থাকার স্থান থেকে লিডাকে টেনে আনলাম। অবাক হলাম যে কিভাবে টাকাগুলো হারালো লিড়া। এখন যে কোন প্রকারেই হোক আমাকে সমুদ্রে যেতে হবে। আমার খুব অবাক লাগল যে কিভাবে লিডা আমাকে মিথ্যে কথাগুলি বলছে। যদিও আমিও তাকে মিথ্যে বলেছি তবু বেশী নয়। লিডা ডেক হাউসে ছিল। আমি বোটের কাছে ছুটে গেলাম। পাঁচ মিনিট পর আমি ডেক হাউস থেকে একটা জোরে শব্দ আসতে শুনলাম। সরু হ্রদের তলা দিয়ে জাহাজটা চলতে লাগল। লিডাকে বেশ কালো লাগছিল। সে বলল, সে অসুস্থ। বলালম, ওষুধ খেয়ে না কমলে অন্য ব্যবস্থা করা হবে। মেয়েটা তার হাতটা তার মুখে রেখে বলল–বাস্টার্ড! বেজম্মা! একজন কোষ্ট গার্ড এ্যামব্রোস লাইটের তলায় আমাকে তুলে ধরল। তার নাম এক্সক্যালিবার। দেখলম যে একজন অফিসার কাঁচের মধ্যে দিয়ে লক্ষ্য করছে। তারপর এক্সক্যালিবার আমাকে ছেড়ে পূর্বদিকে ছুটতে লাগল। তারপর দক্ষিণে তখন হক ঘটনার জালে আবদ্ধ।
.
০৬.
সমুদ্রের সম্ভাবনাগুলো আর একবার মিলে গেল, আমি ভার্জিনিয়া বীচের দিকে চলেছি। আমার লক্ষ্য পশ্চিম প্রান্ত। জাহাজের সঙ্গে দেখানো সি. ডবলিউ ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সাধারণ সংকেত কথা চলছে। আমার সঙ্গী আমাকে কিউবার পশ্চিমপ্রান্তে নিয়ে যাবে। সেখানেই বিদায় নেবে সে। কিউবা থেকে গুয়ানটাগোমা পার হয়ে আমি হাইতির উত্তর উপকূলে একা পৌঁছব। গত দুদিন ধরে লিডার মধ্যে বেশ পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আমি তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি। এমনকি তাকে কাজে রেখে আমি নিশ্চিন্ত বারো ঘণ্টা ঘুমতে পারি। ওয়েবলি বন্দুকটা অপটু হাতে ঝাঁকানি দিলে আমার মৃত্যু হতে পারে। বললাম, কুসিয়ারটা যেন একলা চালাবার চেষ্টা করো না। উপকূলের রক্ষীদের চোখে পড়ে যাবে। রিভলবারটা নামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে লিডা বলল, পৃথিবীতে আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো টাকা রোজগার করা। তার হাত থেকে ৩০০ পাউণ্ড ওজনের ওয়েবলিটা পড়ে গেল। তবু তাকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম-তুমি কি ছোট মেয়ের মতো বন্দুক নিয়ে খেলা করতে চাও। আমাদের অভিযানে এরাই আসল বন্ধু। এরা না থাকলে আমরা অসহায়। লিডা প্রশ্ন করে, এতবড় বন্দুক দিয়ে কি সত্যিই মানুষ মারা যায়? তারপর সে হঠাৎ দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল। আমি জানি লিডা কোন সহানুভূতি চায় না। বললাম, আমাদের দুজনের স্বার্থে যত পার কেঁদে নাও। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে বা দিকে বিন্দু বিন্দু আলো দেখতে পেলাম। হক আমাকে আরও পশ্চিমে যেতে বলেছেন। ক্যারিবিয়ান পার হয়ে ফ্লোরিডাকে বিদায় জানিয়ে আমরা নির্দিষ্ট বিন্দুতে পৌঁছব। জায়গাটা এখান থেকে কত দূর ঠিক বুঝতে পারছি না। হয়তো নির্দিষ্ট বিন্দুর কাছাকছি এসে গেছি। অথবা এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। ওয়াশিংটন থেকে পাওয়া নির্দেশমতো কাজ করতে হচ্ছে। হেডকোয়ার্টার তো জানে না যে, ওই কাজের মধ্যে কত বিপদ মিশে আছে।
গালফ যেন শান্ত এক দিঘী। পরিবেশ এপ্রিলের পক্ষে আশ্চর্য মনোরম। আমি লুগার আর স্টিলেটো পরীক্ষা করলাম। লিডা আজ স্ফূর্তিতে রয়েছে। গুন গুন করে গান গাইছে। আমরা অকারণে ডেক হাউসের কাঠের পাটতনের উপর গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম। লিডা আমার শরীরের এখানে ওখানে দংশনের মৃদু আঘাত দিল। উত্তেজনার অবসানে লিডা আবার শান্ত ও ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তার আবেগ আপাতত নিরুদ্দেশ, সে এখন কাজের মধ্যে ফিরে এসেছে। ডুলি স্ট্রীটের কাছাকাছি পৌঁছল সী-উইচ। এই মুহূর্তে লিডার মুখে বিচিত্র হাসির ছটা, পরিচ্ছন্ন অথচ তিক্ত। আমরা পরস্পরকে এখন বিশ্বাস করতে পারি। বললাম–তোমার ওপর আমার অগাধ আস্থা। আমি ডিঙি নৌকাটা কোথায় জানি। ভক্তি সহকারে বললাম, আড়ালে থাকতে চেষ্টা কর। কে জানে তারা শশব্দ কিনা। আমি চাই না যে, ওরা তোমায় দেখুক। হাত নেড়ে লিড়া ডেক হাউসের দিকে ছুটতে লাগল। মনের মধ্যে মৃদু আশা যে, তীরে পৌঁছেই এক্স এজেন্টের দেখা পাব।