এটা সেই মেয়েটাকে আবার দাও, শিগগীর। যাও? যদি তুমি কথা বলতে পার, আরো হাজার ডলার পাবে।
.
১০.
আমি অন্ধকার ঘরটায় নিঃশব্দে উঠলাম আর আমার পেছন থেকে এটা বন্ধ হয়ে গেল। ঝুলবারান্দা দিয়ে আসার সময় ট্রেভলিগের গম্ভীর গলা শুনলাম যাও হে! তোমাকে আরও এক হাজার ডলার দেওয়া হবে যদি কাজটা সেরে ফেলতে পার। তাকে একটু ভোলাও গে যাও। একটা স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্বর শুনলাম। পি. পি. সত্যিই প্রশংসনীয়। সে ফ্যাসিষ্ট হতে পারে কিন্তু উৎসাহ আছে। একটা ছোটখাট যুদ্ধ হচ্ছে বাইরে, সে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা না করে ক্যামেরা চালিয়ে ঐ মেয়েটার সঙ্গে…। আমি ঘরের দিকে এগোলাম টমি বন্দুকটা নিয়ে। আমি বললাম, ভয়ের কোন কারণ নেই, কোন কারণে হঠাৎ নড়াচড়া করাটা ঠিক নয়। শান্ত থাকবে তাহলেই হবে। মেয়েটার বিস্ফারিত মুখের সামনে আমি বন্ধুকটা ঘোরালাম। বললাম, একটা শব্দ হবে। ব্যস তুমি শেষ। পি.পি. আমার দিকে রাগত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে কোত্থেকে উঠে এলে বাপ? কি চাই তোমার?
হঠাৎ মুখে একটা মৃত মানুষের নাম চলে এল। বললাম, স্টেডি বেনেট। সি. আই. এ এজেন্ট আপনি তো পি.পি. গ্রেভলিন? পল পেথটন ট্রেভলিন? মেয়েটা বলল, উনি কি আগে এসেছিলেন? বোধহয় তুমি একটু বিপদে পড়ে গেছ? তাই না ছোকরা? পি.পি. আর আমি একসঙ্গে মেয়েটাকে ধমকে উঠলাম চুপ কর, পি.পি. বলল, আমার ধারণা তুমি বোধহয় ড. ভ্যালডেজের খোঁজে এসেছ?
নিজের মনে বললাম, ভ্যালডেজ তাহলে জীবিত। তোমাদের এখানে তোমাদের হয়ে কাজ করছে-তাহলে তো খুঁজে বার করতে হবে। ট্রিগারের উপর হাত রেখে বললাম।
তোমার সংবাদ ভুল। তুমি মাকড়সা আর তুমি আমার জালে এসে পড়লে। কি বলতে চাও তুমি? মিস্টার বেনেট তুমি একটা মরালোককে ভয় দেখাতে পার না। আমার গলায় ক্যান্সার হয়েছে। অপারেশন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। আমি মোটে দুমাস আর বাঁচব, ডাক্তার বলেছে। তারপর মেয়েটা বলল–তুমি যেখান থেকে এসেছে সেখানেই ফিরে যাও না কেন? আর আমার মিষ্টি বুড়ো পি. পি. তোমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমি মেয়েটার দিকে চেয়ে বিষণ্ণ হাসি হাসলাম। তুমি আমাকে নিরাশ করলে। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেব। তুমি আবার স্কুলে ফিরে যাবে, রবিবারগুলোতে দুধ আর খাবার স্কুলে স্কুলে পাঠাবে। সে জীবন কি তুমি চাও না? সে আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়াল। তারপর বলল–তুমি হলে গিয়ে একটা কুত্তার বাচ্চা, তুমি এখানে আমার জন্য এসে সবকিছু নষ্ট করছে। পি. পি. আমাকে ফিল্ম স্টার তৈরী করে দেবে বলেছে, বুঝেছ। আর ও যা বলে তা করে। এবার পি. পি. মেয়েটাকে বলল ও সুইটি, তোমার সি. আই.-এর সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই। সবকিছু ছুঁড়ে দিলাম ওর বুক লক্ষ্য করে। তোয়েটার বাঁ বুকে চেপে বসেছে ছুরিটা। সে অনেক চেষ্টা করল ছুরিটা তুলে ফেলতে কিন্তু পারল না। পি. পি.-কে বললাম আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি বললাম, এবারে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে আমাকে কালভেজের কাছে নিয়ে চলুন। কোন কথাবার্তা না বলে চুপচাপ উঠে পড়ুন।
সে বলল, নৃশংস, এত নৃশংস আর নীচ তোমরা। আমি বললাম, একটু তফাৎ আছে। নিজের মৃত্যু আর অপরকে মারার ব্যাপারটা তো সমান নয়। ঐ ছোরাটা তুলে নাও আর ওটা ঐ পি. পি-র ওপর চালিয়ে দেবে। কালো লোকটা ছুরি হাতে পি. পি.-র দিকে এগিয়ে চলল। ঠিক আছে, সে বলল, কাজটা করতে হবে।
পি.পি. ট্রেভেলিন একটা হাত তুলে বলল–না। তার আর প্রয়োজন হবে না। কখন আমি মরব তা জানি। আমি জানি তুমি আমাকে মারবে। আর তুমি ঠিক কাজই করছো, মিঃ বেনেট। আরও দুমাস হাঁটা দরকার। আমি তোমাকে ড. ভ্যালডেজের কাছে নিয়ে যাব। কাল লোকটাকে আমি ছোরাটা ছুঁড়ে ফেলতে বললাম।
.
১১.
বললাম–আমার আসল নাম কি কার্টার। পি. পি. বলল, আমার অনুমান করা উচিত ছিল। বললাম–কতক্ষণে আমরা দুর্গে পৌঁছব? আধ ঘণ্টার মধ্যে।
ভ্যালডেজ–সব সময় সিটাভেলে থাকে? সে আসে এখানে? আমি বেশ কয়েক সপ্তাহ ওকে দেখেনি। সে ঐ জায়গা ছেড়ে আসবে না। আমি তাকে ইতিমধ্যে দশ ডলার দিয়েছি। সে ওটা সুইজারল্যাণ্ডের ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দিয়েছে। যদি ঠিকমতো কাজ করতে পারে তাহলে আরো দশ লক্ষ দেব বলেছি।
ভ্যালডেজ আমার সঙ্গে আসবে অথবা আমাকে শেষ করতে না দিয়ে পি. পি. বলল, তুমি তাকে মেরে ফেলবে তাইত? অবশ্যই তাই।
গাড়িটা প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছল। একজন রক্ষী কালো ইউনিফর্ম পরে সামনে পেছনে যাওয়া আসা করছে, একটা রাইফেল তাঁর কাঁধে। বললাম টমাস, ব্যাগটা নিয়ে যাও। সাবধানে নিও, পড়ে গেলে ভেতরের জিনিস বিস্ফোরণ ঘটবে। পি. পি. অচেতন রক্ষীটাকে দেখে ব্যাপারটা বুঝে ফেলল–একে একেবারে মেরে ফেললেন না কেন, মিঃ কার্টার। আমি জানি কাকে মারতে আর কাকে বাঁচাতে হবে। কিন্তু ঐ মেয়েটা? হতভাগ্য বেটি? সত্যিই–ঐ হতভাগ্য বেটি কে. পি. পি.। ও যা করেছিল তা ওর ওপরে আদেশ ছিল করার।
বললাম–ভ্যালডেজ কোথায়? পি. পি. বলল, এই কে বলল চুপ করে দেখে যেতে। রোমেরা ভ্যালডেজকে দেখলাম। বললাম–আমি কে আর এখানে কেন এসেছি। কিছু না বলে শুধু শুনে যাচ্ছিলেন আর তার চোখদুটো আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করছিল। ভ্যালডেজ বললেন আপনাদের সঙ্গে যাবার আমার কোনো ইচ্ছা নেই, মিস্টার কার্টার। আপনি মিস বোনাভেনচার আর আপনাদের ওপরওয়ালারা একটা মোহের বশবর্তী হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমি এখানে মিস্টার ট্রেভেলিন আর ড. ভুগেলিয়ের অধীনে কাজ করে সন্তুষ্ট। আমার নুজারে এলিটা ভ্যালডেজের গলায় ঢুকে গেল। তারপর আর একটা। দেখলাম লোহার দরজার ডক থেকে দশফুট দুরে দেওয়ালে আটকানো। সেটা একটুখানি খুলে গেল ওটা ভ্যালডেজের একান্ত ব্যক্তিগত প্রবেশ পথ। প্রাণপণে দৌড়তে লাগলেন। দেখলাম এক-একটা গর্ত থেকে আলোর ঝলকানি আসছে। রেডিও ঘরে দেখলাম একটা লোকট্রান্সমিটারের সামনে বসে আছে। আমি অপারেটরের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নুজারে বাঁট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করতেই সে পড়ে গেল। আমি তার চেয়ারে বসলাম। ট্রান্সমিটারের খবরটা পাঠিয়ে দিলাম: সিটাডেল থেকে বলছি, ভ্যালডেজ আর ট্রেভালিনকে মেরে ফেলা হয়েছে–আমাদের দলের লোকেরা ঠিক আছে–পরিকল্পনা মতো আক্রমণ ঠিক সময়ে যেন হয়, এ্যাটাক! আমাদের স্বাধীনতা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে–বেনেট।