লিডাকে বললাম, ড্রামটা দারুণ বিপজ্জনক না।
লিডা বলল, না, পি.পি.-র, পাহারাদারটা এত রাতে এখানে আসবে না। টমটম ম্যাকিউটও আসবে না যদিও তারা হাইতি। ওরা রুচিবেলাকে ভয় পায়। আমরা নিরাপদ। আমি সূর্য ওঠার আগেই পি.পি.-র দরজার বাইরে যেতে চাইলাম। কিন্তু লিডা বলল, নাচের পর কি হয় সে দেখবে। মেয়েটা প্রায় উদোম হয়ে কবরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগল। লিডা সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে বলল, আপনাদের এখানে এক মুহূর্তে নষ্ট করা উচিত নয়। এখান থেকে সরে পড়ুন।
.
০৮.
পাহাড়ের ধারে যখন এসে পৌঁছলাম তখন ভোর হতে ঘণ্টা তিনেক দেরী। ডুপি আমাদের সাপের মতো ঘোরানো একটা সঁড়ি পথ দিয়ে নিয়ে গেল। লিডা পেছনে আসছিল। যখন আমি মাঝেমাঝেই হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ডকে হাত দিয়ে ঠেলছিলাম। তার কাছে বন্দুকের জন্য নয় মিলিমিটারের কার্তুজ ভর্তি একটা ব্যাগ ছিল। ব্যাগটা ম্যারিক হেরাল্ড স্কোয়ার্ড থেকে নেওয়া হয়েছে। অন্ধকারের মধ্যে ককৰ্শ গলায় বললাম-উইলিয়ার্ড তুমি মরে যাবে।
প্রসঙ্গ পাল্টে সে বলতে লাগল কিভাবে বি-২৫বিমানটি শুধু সহকর্মীদের সাহায্য না পেয়ে প্রাসাদটা হারিয়ে ফেলে আয়রন মার্কেট আর গ্যারেন ভাম্প-এ বোমা ফেলল। বোধহয় আমরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিলাম না। খ্রীষ্টই কেবলমাত্র জানেন কোথায় সেগুলো কিনেছিল। আমি চেয়েছিলাম হ্যাঙ্ক উইলিয়ার্ডকে সুখী করার আর আমার প্রতি বাধ্য করার একটা স্টেনগান ৫৫০ রাউণ্ড গুলি ছুঁড়তে পারে এক মিনিট এবং যখন প্রয়োজন হবে তখন আমি ওটা ব্যবহার করব। আমি তার দুর্ভাগ্যের উৎসাহের ভাব দেখালাম। বিমানে বোমাগুলো নিয়ে যাবার আগে পরীক্ষা করে দেখেছ?
হ্যাঙ্ক যীশুর নামে দিব্যি কেটে বলল, আমি বোমা সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ। আমি শুধু একজন যোদ্ধা সৈনিক। আমাকে যখন নিযুক্ত করল আমি তাদের বলেছিলাম যে আমি আগে বোমা নিয়ে বিমান চালিয়েছিলাম তখন ওরা আমাকে নিযুক্ত করল কারণ আমি ভেঙে পড়েছিলাম আর চাকরির খুব দরকার ছিল আমার।
আমি স্বীকার করলাম যে, আমাদের খুব ছোট একটা সৈন্যদল ছিল। উইলিয়ার্ড, লিডার মতো অভিজাত স্বপ্ন-বিদেশিনী ও প্রতিশোধলিঙ্গু আর আমার মতো অসম্ভবকে সম্ভবকারী কারণ হকই এটা আমাকে করতে বলেছিল।
ডুপির অন্য ব্যাপার। সে ভালোভবেই জানে সে কি করছে। সে বলল–সূর্য ওঠার আগে লুকিয়ে পড়া যাক অথবা আমরা মারা পড়ব। আমরা আঙুর গাছ দিয়ে ঘেরা জঙ্গলে অপেক্ষা করলাম। ডুপি বলল এসে এখন ঠিক আছি আমরা ব্ল্যাঙ্ক। আমরা পাহাড়ের মধ্যে উপত্যকায় আছি। নীচে দেখ বেড়ার মধ্যে পি. পি.-র জমিজায়গা। দেখ ঐ তার বাড়ি। সাঁতার কাটার হ্রদ, জমবি কোয়ার্টার, পুরনো গাছ। বললাম–জমবিজ-এর দিকে ফেরা যাক, কি বল? ডুপির কি ব্যাপার? আমি অপেক্ষা করলাম সতর্কতার সঙ্গে। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল–কিছু বল ব্ল্যাঙ্ক, খুব বাজে লাগছে। কিছু-একটা ঘটে যাচ্ছে আমার। আমিও একদিন তোমার মতো একজন ভুদুকে বলেছিলাম এসব কিছু নয়। বলে সে আমার একটা গল্প বলল। সে বলল, ব্ল্যাঙ্ক, তুমি খুব শক্ত লোক। আলো আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পড়ে গিয়ে ঘাড় ভাঙার সম্ভাবনা আছে। তারপর আমি তার মৃদু নাক ডাকার শব্দ পেলাম। আমি এগিয়ে চললাম। ঘাড়ের কাছে যে শব্দ করলাম, এতে তাকে অনুসরণ করা সহজ হল। তারপর কোন শব্দ নেই। তারপর বদমাইশাটা গাছের ওপর চড়ে বসেছিল। আমি এমন একটা জায়গায় দাঁড়ালাম যেখান থেকে গাছটা সামনে দেখা যায়। আলোর ঝলকানিতে তাকে গাছ থেকে নামতে দেখলাম।
হকের কাছ থেকে প্রথম ফোন পাওয়া মাত্র আমি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো টেপ করেছিলাম। কিছু কিছু শিক্ষিত ব্যাপার স্যাপার আর কিছু কিছু পথ পাবার উপায় সম্বন্ধে চিন্তা করছিলাম। ডুপি বেশ ভালো খেলাই চালাচ্ছিল। লিডা এ সম্বন্ধে কিছু জানে না। হ্যাঙ্কও ব্যাপারগুলো তেমন গায়ে মাখে না।
ডুপি, ভিয়াজ ওরটেগা কে. জি. বি.-র লোক, টমি পি.পি. এবং পাপাডক ফ্যাসিস্ট। শেষকালে সেই পুরনো তামাসাটাই চলে আসে কে কার জন্যে কি করছে আর কে শোধ করছে? একটা জিনিষ আমি জানলাম, ডুপি নেতৃত্ব করছিল। সেটা এখন বন্ধ। আমাকে নেতৃত্ব নিতে হয়েছিল। তাকে একটু দেখতে হবে যে সে কোন ভুল না করে। ডুপি আর লিডার কোন পাত্তা নেই। উইলিয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা কোথায়, সে আমাকে গাছে উঠতে বলল। গাছে না উঠে আমি বাগানবাড়ির দিকে তাকালাম এবং প্রথমে কিছু দেখলাম না। আমি বাগানবাড়ির খোঁজে গেলাম। বাড়িটা পাম গাছে দুই-তৃতীয়াংশ ভরা। তার পিছনে আমি বিশ্রাম নিতে গেলাম। ভাবতে লাগলাম, আমাদের ধারণাটা বাস্তবে হয়তো ঘটবে না। যেকোন মুহূর্তে ফোন বেজে উঠতে পারে আর আমাকে উত্তর দিতে হবে। আমাকে পাঠানোর জন্য সত্যিই একটা উদ্দেশ্য আছে। আমি দেখলাম, স্যাম-রোমেরা ভ্যালডেজকে। ও জীপে বসে আছে আর পাহারাদাররা ওকে ঘিরে আছে। সে পূর্বদিকে আঙুল তুলে দেখাল, আমার মনে হয় তারা আমাকে সিটাডেল নিয়ে যাচ্ছে। সে অবশ্যই প্রত্যেক দিন রাত্রে সিটাডেল-এ কাজ করে আর এখানে আসে-পি.পি.-র কাছে। লিডাকে, তুমি নিশ্চয়ই জানো ও ভ্যালডেজ। লিডা বলল, আমি সত্যিই জানি না। মোটের ওপর পাঁচবছর আমি রোমেরাকে দেখিনি, কিন্তু মনে হচ্ছে তুমি আমার মনের কথা জেনে ফেলেছে। আমি ওর দৃষ্টি আমার দিকে ফিরিয়ে বললাম–তুমি নিশ্চিত নও যে লোকটাকে তুমি দেখলে সে বোমেরা ভ্যালডেজ? রাজহাঁসের মতো লম্বা গলাটার ওপর মাথা হেলিয়ে বলল ডুপি যে উনিই ভ্যালডেজ। ও অনেকদিন ধরেই এখানে গুপ্তচরবৃত্তি করছে। সে যে বলেছে পাঁচ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে ওর, অসুখের জন্যও হতে পারে অথবা ওর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে বোধহয়। মানে? আমি জানতাম যে, উনি ড. রোমেরা ভ্যালডেজ। কোন কারণের জন্যে ওরা প্রতারণা করেছে। তাকে দেখে অনেক বেশী বয়েস হয়েছে বলে মনে হল। তিনি জীপের ওপর শক্ত হয়ে বসেছিলেন। ওর মুখটা আমি ঠিক কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখেছিলাম।