আমাকে এরপর রোমেরা ভ্যালডেজকে মারার জন্য বেশ তৈরী হতে হচ্ছিল। লিডা দেখলাম এই আক্রমণের জন্য কিছু করছে না। আমি চিন্তা করলাম যে ডকের দরজা দিয়ে চুপি চুপি হামাগুড়ি দিয়ে যাব। আমি ট্র্যাপ দরজার দিকে গিয়ারটা ঠেলে দিলাম। সামনে অনেকগুলো ছায়া দেখলাম কিন্তু লিডা আর ডুপির নিশানা পেলাম না। সেই ছায়াগুলোর মধ্যে থেকে কে যেন আমায় বলল যে সোয়ান এবং ডুপি সমুদ্রের ধারে গেছে।হঠাৎ বৃষ্টি আরম্ভ হতে বাজনার আওয়াজ পেলাম। পাশ থেকে একজনকে বলতে শুনলাম যে ফাঁকা গর্তটার দিকে লক্ষ্য কর। হক খুব বুড়ো। আমি সেই সময়ে ওরটেগার চিন্তা-ভাবনাগুলোকে ঢাকা দেবার চেষ্টা করলাম। আমার পাশের লোকটা আস্তে আস্তে বলল যে, ব্ল্যাক সোয়ান আর আক্রমণের কথা বলছে না। কিন্তু আমরা আক্রমণ করার জন্য তৈরী হয়ে আছি। আমি বললাম, আমি সোয়ানের জন্য কাজ করেছিলাম, সেই রকমই আমি সাহায্য করতেও পারি তবে সোয়ান যদি বলে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলল, আমার মনে হচ্ছে তারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করবে। টনটন ম্যাকিউট তাদের চারদিকে ঘুরবে। তারা অনেক লোককে মারবে এবং অনেক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলবে। ব্ল্যাক, তুমি কি জান কেন তারা ঐরকম করছে?
বললাম, যদিও আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না তবুও আমি একটা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আলোচনা করতে পারি। আর পাপিডক যদি চারদিকের চারাগাছগুলো পরিষ্কার করে ফেলে তাহলে ঐ জায়গাগুলোর দাম অনেক হবে। তার মসৃণ মুখে রেখার ছাপ পড়তে দেখলাম। সে বলল, এই কুকুরের বাচ্চাটা! ওকে এর জন্য খেসারত দিতে হবে, দেখ! হেলিকপ্টারটা খুব জোরে উঁচুতে উঠে গেল। লিডাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে-কুকুরের বাচ্চাটা কে? পাপাডাক না পি পি? ও বললো দুজনেই। কে আমার পেছন দিকে গিয়ে যেন জোড়ে নিশ্বাস নিল। এবং তার চোখদুটো বন্ধ করে দিল। লিডা আবার বলল–দুজনই। বন্দুকের জোরালো আওয়াজ আমাদের কানে এসে পৌঁছল। বাড়ির ধারে কজন লোককে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে রিভলবারটা খালি করতে দেখলাম। আস্তে আস্তে সে কটা গুলি পুরল এবং বার করল। তারপর তার কালো পাগুলো হাঁটা চলা বন্ধ করে দিল। আমি বললাম, টনটন ম্যাকিউট কখনো বোকামির মতো কাজ করে না। লিডা বলল, ওদের মধ্যে সকলেই খুনী, ডাকাত, ওদের সময় ঘনিয়ে আসবে। লিডা সিগারেট চাইতে বললাম, মুখটা লুকিয়ে ফেল। হেলিকপ্টারটা এদিকেই আসছে। ডুলি পেটের উপর ভর দিয়ে মুখটাকে হাতের ওপর রেখে ঘুমচ্ছে। হেলিকপ্টার আমাদের মাথার উপরে বেশ আওয়াজ করে চলছিল। কিছুক্ষণ পরে চোখের একটু ফাঁক করে দেখলাম হেলিকপ্টারটা পূর্বদিকে নেমে আসছে। লিডা বলল, আমার মনে হয় এই সময় সিগারেট খাওয়াই নিরাপদ। ডুপি নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছিল। মনে হলো তার বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি। মনে হলো এই সময়ে তাকে বিরক্ত করা উচিত হবে না। ডুপিকে বললাম, আসলে কোনো সমস্যাই নয়। ভ্যালডেজকে ছাড়া আমি কোন কিছুর দায়িত্ব নিতে চাই না। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে, তারা নিশ্চয় ভ্যালডেজকে আক্রমণের সময় মেরে ফেলবে। কারণ তারা জানেন আমরা তাকে আমাদের প্রেসিডেন্ট করতে চাই বাঁদিকে বেশকিছুটা দূরে বিশপের ক্যাম্প এবং সিটাডেল ছিল দূরে পাহাড়ের ওপর আমি কতকগুলো কুঁড়েঘর দেখলাম এবং সেখানে আরো একটা সবুজ ঘাসে ঢাকা পর্বত ছিল। ঠিক সেই পর্বতের পাদদেশে বেড়া ছিল। লিডা আর ডুপি বলল যে, পাঁচহাজার একর জমি ঐ বেড়া দিয়ে ঘেরা। ঐ বেড়ার ভেতরই স্যান্স সুসীর রাজপ্রাসাদটা নষ্ট হয়ে গেছিল। সেখান পি. পি. ট্রেভেলিনের তৈরী আর-একটা বেশ আজকালকার রাজপ্রাসাদ ছিল। সেখানে দিয়ে একজন গার্ড, সঙ্গে একটা পুলিসের কুকুরকে যেতে দেখলাম। গাড়িটার কাছে একটা পিস্তল রাখার বেল্ট এবং রাইফেল ছিল। সে একটা কালো টুপি কালো জামাকাপড় আর একটা কালো বুটজুতো পরে ছিল। সন্দেহ হলো টুপিটা হয়ত চামড়া দিয়ে তৈরী। তবে তার কালো পোষাকটা আমাকে একটা কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। মিঃ পি. পি. ট্রেভেলিনের ওপরে বেশ ঘৃণা জন্মে গেল। নিজেকেও বেশ খারাপ লাগল। আমি পেশাদার, কিন্তু আমি জানি যদি আমাকে ট্রেভেলিনকে মেরে ফেলতেই হবে তবে ব্যাপারটা এমন কিছু হবে না, ডুপি আমার পাশে এসে বসল। বুঝলাম, ব্ল্যাকেরা তার নাম ঠিকই রেখেছিল। এই প্রকাণ্ড লোকটাই ডুপি যে কে.জি.বি.র–ভায়াজ ওরটেগা। আমি স্যাম ক্লেচারের সঙ্গে চরিত্র বদল করলাম। ডুপি বলল-এই যে ব্ল্যাঙ্ক। তারপর-পাহারাদার–কুকুর-জমবিজ।
জমবিজ?
হেসে সে বলল, হ্যাঁ ব্ল্যাঙ্ক, জমবিজ। আমাকে বুড়ো পি. পি. পেয়েছে না, সে তাদের সবরকমের কাজ করিয়ে নেয়। কোনো জমবিজদের বিশ্বাস করো না, ব্যাঙ্ক। এরপরে আমরা তিনজন ঐ উপত্যকায় গেলাম। এবং জঙ্গলের মধ্যে একটা হাউসকোট দেখলাম।
সে বলল, ব্ল্যাঙ্ক, তুমি সোয়ানোর সঙ্গে দেখা করছ।
তিনি তোমাকে কত দিচ্ছিলেন?
মাসে এক হাজার।
মাসে এক হাজার। অবশ্য আমি ভুলও করতে পারি, ব্ল্যাঙ্ক। বললাম, সেটা আপনার ব্যাপার। আমি টাকাপয়সার জন্য লড়তে পারি।
আমি ঝগড়া করতে চাই না ব্ল্যাঙ্ক।
পয়সা করতে গেলে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়, অনেক বিপজ্জনক কাজ করতে হয়, বুঝলে হে।
ডুপি ব্ল্যাঙ্ককে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কখনো হাইতিতে গেছ?