–বলো।
–ও কি হার্টফেল করেছে?
–তোমার স্ত্রীর কি কোন অসুখ ছিল?
–বাতে ভুগত মাঝে মাঝে।
–তার জন্য কি কোন ওষুধ খেতো?
–তেমন না। অনেক দিন কিছু খায়নি, কেবল
–কেবল কি?
–কেবল গতকাল রাতে আপনি যে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলেন, সেটা খেয়েছিল।
প্রাতঃরাশের ঘন্টা তখনো বাজেনি। ডগলাস এবং ওয়ারগ্রেভ বারান্দায় পায়চারি করছেন। দেশের রাজনীতির পরিস্থিতি নিয়ে তারা গভীর আলোচনা করছেন।
এই বাড়ির পেছনেই একটা উঁচু টিলা। দ্বীপের মধ্যে সেটাই সবচেয়ে উঁচু জায়গা। সকালে ঘুম থেকে উঠে সেখানে বেড়াতে গিয়েছিল ভেরা আর লমবার্ড। সেখানে তারা দেখতে পায় ব্লোর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের দেখতে পেয়ে ব্লোর বলে, মোটরবোটের কোনো চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি না।
ভেরা বলে, একটু বেলা হলে হয়তো আসবে।
এমন সময় প্রাতঃরাশের ঘন্টা বেজে ওঠে। এরা সকলে ফেরার পথ ধরল।
চলতে চলতে ব্লোর বলল, কাল মার্সটন কেন আত্মহত্যা করল, কিছু বোঝা গেল না।
ভেরা বলল, আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে আপনার?
–এছাড়া আর কি? খুন হলে তার প্রমাণ কোথায়? মোটিভটা কি?
ওরা বাড়ির কাছে পৌঁছলে দেখতে পেল, এমিলি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছেন। ওদের দেখতে পেয়ে জানতে চাইলেন, বোট আসছে?
ভেরা বলে, কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
সকলে তখন খাওয়ার ঘরে উপস্থিত। রজার্স খাবার আনতে গেছে। ভেরা বলল, রজার্সকে যেন কেমন বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। কাল তো বেশ হাসিখুশি ছিল।
ডাক্তার জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এগিয়ে এসে সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আজ রজার্সের ত্রুটি মার্জনা করবেন। ওকে নিজের হাতেই সব করতে হচ্ছে আজ।
এমিলি জানতে চায়, কেন, কি হয়েছে তার?
ডাক্তার বললেন, আসুন, আগে খাওয়াটা সেরে নেওয়া যাক। তারপর সকলে মিলে একটু আলোচনায় বসব।
.
প্রাতঃরাশের পাট চুকলে ডাক্তার রজার্সের স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদটা সকলকে জানালেন।
–আর্তনাদ শোনা গেল অনেকের কণ্ঠেই।
–চট করে বলা যাচ্ছে না।
–গতকাল সন্ধ্যাবেলা খুব মানসিক আঘাত পেয়েছিল। তাছাড়া শরীরও ছিল দুর্বল। হয়তো সহ্য করতে পারেনি। ভেরা বলল।
ডাক্তার বললেন, হার্টফেল কিনা, তা-ও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ওর স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনো কথাই আমার জানা নেই।
এমিলি কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন, তাহলে বিবেকের আঘাতই হবে। গতকাল সন্ধ্যায় ওর স্বামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তো সকলেই শুনেছেন।
ডাক্তার তার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বললেন, সেই অভিযোগ শুনে কি–
–হ্যাঁ, পাপের ভয় ঢুকেছিল মনে। দেখেননি কেমন করে কাঁদছিল। ভয় না পেলে অজ্ঞান হবে কেন?
–ভয় পেয়েছিল, এটা সত্যি। তবে সেদিক থেকে চিন্তাটা একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে না কি?
–মোটেই না। ভগবানের অভিশাপ ঠেকানোর সাধ্য কারুর নেই। আমি অন্তত বিশ্বাস করি।
পাপীকে ঈশ্বর শাস্তি দেন না। পাপকে তিনি ঘৃণা করেন, ব্যঙ্গের সুরে বলেন ওয়ারগ্রেভ, পাপীকে শাস্তি দেয় সাধারণ মানুষ। তবে খুব সহজে তা সম্ভব হয় না।
ব্লোর প্রশ্ন করে, আচ্ছা, গতকাল রাতে শুতে যাবার আগে রজার্সের স্ত্রী কি কিছু খেয়েছিল? ডাক্তার বললেন, কিছু না।–যেমন ধরুন চা, জল বা ওই ধরণের কিছু?
–রজার্স আমাকে বলেছে, ওসব কিছুই তার স্ত্রী খায়নি।
–ওকথা বলা রজার্সের পক্ষে অসম্ভব নয়।
ঈঙ্গিতটা বুঝতে পেরে ডাক্তার ক্লোরের চোখের দিকে তাকান। ব্লোর পুনরায় বলে, কাল রাতের অভিযোগটা পাগলামো কি না এখনো প্রমাণ হয়নি। যদি সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে সেই বৃদ্ধা মহিলাটিকে স্বর্গে পাঠাবার ব্যবস্থা করে এতদিন বেশ নিশ্চিন্তেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ কাল–
ভেরা বেশ জোর দিয়ে বলে, ওসব শোনার পর রজার্সের বউ কিন্তু মোটেও অস্বস্তি বোধ করেনি, আমি লক্ষ্য করেছি।
ব্লোর ভেরার দিকে তাকিয়ে বলল, গতকাল রাতে ওসব কথা শোনার পর রজার্সের স্ত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। রজার্সও দারুণ অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। তার আশঙ্কা ছিল পাছে না অজ্ঞান অবস্থায় তার স্ত্রী সত্যি কথাটা বলে বসে।
ব্লোর এক পলক সকলের মুখের দিকে তাকায়।–পরে এই পরিস্থিতিতে একেবারে নিষ্কন্টক হওয়ার জন্য স্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সেই কাজটাই সেরে নিয়েছে রজার্স।
ডাক্তার বললেন, কিন্তু ওর বিছানার পাশে তো কাপ-টাপ কিছু চোখে পড়ল না। তাছাড়া স্ত্রীকে কি এভাবে মেরে ফেলা সম্ভব?
–আপনি কি এর আগে শোনেননি স্বামী স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেছে, অথবা অন্য উপায়ে চিরদিনের মতো সরিয়ে দিয়েছে?
সকলেই চুপ করে এদের দুজনের কথা শুনছে। সকলের মনেই বিচিত্র একটা ভাব খেলা করছে।
এই সময়ে দরজা ঠেলে রজার্স ঘরে ঢুকল। ডাক্তার তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, মোটরবোট এসেছে?
ঘরের দেয়ালের ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দে দশটা বাজল। রজার্স বলল, না স্যার। এত দেরি তো তার হয় না। অন্যদিন আটটার মধ্যেই চলে আসে।
ব্লোর আর লমবার্ড বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
লমবার্ড বলল, সকলেই আমরা মোটর বোটের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছি। অথচ–
–রজার্সের কথা মত সেটা আসবার সময় দুঘন্টা পার হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ব্যাপারটা পূর্বপরিকল্পিত। মোটরবোট আসবে না।
লমবার্ড কি বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় পেছন থেকে কে হঠাৎ বলে উঠল, কোনোদিনই আর আসবে না।