- বইয়ের নামঃ টুওয়ার্ডস জিরো
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ আদী প্রকাশন
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
টুওয়ার্ডস জিরো
১-৩. ক্লাবের এক কোণে
০১.
ক্লাবের এক কোণে যারা সেদিন আসর জমিয়ে বসেছিলেন, মামলা মোকদ্দমার ব্যাপারে, তাদের প্রত্যেকেই বেশ ঝানু লোক। বসেছিল মিঃ মার্টিনবেল, মিঃ রুকাস নও লিউয়িস। এদের মধ্যে কেউ অ্যাটর্নি, কেউ বা ব্যারিস্টার আর বসে ছিলেন সলিসিটার মিঃ ট্রিভস। তিনি অনেক দেখেছেন, অনেক শিখেছেন কিন্তু আর কাউকে তিনি মামলা করতে বলেন না। নথিপত্তরের ওপর চোখ বুলিয়ে বলেন, মামলা করে লাভ কি, মামলা চালাবার ঝক্কি কম নয়, খরচও বিস্তর। তার চাইতে চেষ্টা করো আপসে মামলা মিটিয়ে নেবার।
মিঃ ট্রিভস অপরাধ বিজ্ঞানে একজন পণ্ডিত। একটা মামলা নিয়ে আলোচনা চলছিল। ওল্ড বেলিতে যে খুনের মামলা চলছিলো তাই নিয়ে একটা তর্ক বেধে উঠেছিল। খুনের মামলা জোরালো কিনা তা প্রমাণ দাখিল করা যায়নি, মামলা ওল্ড কোর্সে গিয়েছে।
মিঃ মার্টিনবেল বললো যে গোড়াতেই ভুল হয়েছিল। সবছেড়ে মিঃ ডিক্রিচি কেন যে একটা উকিলের কথায় কেস দাঁড়া করাতে গেল কে জানে। আসামী পক্ষের কৌসুলী কিভাবে তাকে নাস্তানাবুদ করল দেখলে তো। এরপর আর মামলা টেকে।
লিউয়িসের মতে ওই ব্যাপারে জুরি বেঁকে বসল। জনিয়েল মনে করেন যে উকিলের সাক্ষ্যের উপর নির্ভর না করে উপায় ছিলো না। তাছাড়া সে সাক্ষ্য ভালই দিচ্ছিল। হঠাৎ সে অমন বেফাঁস কথা বলবে তা কেউ ভাবেনি।
মিঃ ক্লিভাব বললেন, তা ভাবুক সেটা কোন কথা নয়। কিন্তু মেডিক্যাল এভিডেণ্ডের উপর কেসটাকে দাঁড় করিয়ে যেত। ট্রিভস তখনো কোন কথা বলেনি।
মিঃ ট্রিভস বললো, তিনি অনেক বইপত্তর ঘাটলেন, তিনি বুঝতে পারলেন না হত্যাকে কেন আমরা আমাদের চিন্তা কিংবা আলোচনার একটা প্রাথমিক ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করি। হত্যা হল সমাপ্তি, অনেক দিন আগে থেকেই হত্যাকারীর মধ্যে যার সূচনা হতে থাকে। হত্যা রহস্য যদি বুঝতে হয় তাহলেই সূচনা পর্ব বুঝতে হবে। প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য যেটা ধীরে ধীরে পঞ্চম অঙ্কে দৃশ্যে এগিয়ে যেতে হবে। পঞ্চম অঙ্কের শেষ দৃশ্য হল হত্যার দৃশ্য। তা তোমরা শেষ দৃশ্যটাকে গোড়ায় বসাতে চাও। ওই করে মামলায় জেতা যায় কিন্তু হত্যা রহস্য বোঝা যায় না। ট্রিভস বলত লাগলো রহস্য কাহিনী এমন হবে সূচনা থেকে শুরু হবে সমাপ্তি হবে হত্যায়। ট্রিভসের সঙ্গীরা তাকে বুড়ো বলতে লাগলো এবং তাকে অবসর নিতে বললো।
ট্রিভস নানারকমের হত্যার রহস্য কাহিনীর কথা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকলেন। ঢুকেই তিনি টেবিলের ওপর একটা চিঠি দেখতে পেলেন। সেটা পড়তে পড়তে তার মুখের চেহারা পালটে গেল। তিনি বলতে লাগলেন এতদিন পরে কী আশ্চর্য। তাকে হুশিয়ার থাকতে হবে। তখন তাকে যদি কেউ দেখত তাহলে হয়তো বলতো, তিনি তাঁর জীবনের একটা মৌলিক সমস্যার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।
.
০২.
১১ই জানুয়ারী
হাসপাতালের বিছানায় সে শুয়েছিল। তার কোকানির আওয়াজে নার্স এসে তার মাথায় হাত দিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলো, তার খুব কষ্ট হচ্ছে কিনা।
মার্ক হোয়াটারের সত্যই কষ্ট হচ্ছিল। যদিও নার্সের স্বরে সহানুভূতি ছিল তবুও তার ভালো লাগছিলো না। সে আত্মহত্যা করতে গিয়েও পারেনি। পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েও গাছের মাথায় আটকে গিয়েছিল। অন্যেরা তাকে উদ্ধার করে। তার চাকরী নেই, তাঁর স্ত্রী তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে। বেঁচে উঠে সেকি স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে? সবাই তাকে কৃপা করবে। অন্যেরা তাকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলবে এই লোকটা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার। তাহলে সে কেন বেঁচে উঠলো।
তাকে নার্স ঘুমের ওষুধ দিতে চাইলে তিনি ওষুধ খেতে রাজি হলেন না। তাকে কেন বাঁচানো হল এই কথা জিজ্ঞাসা করতে নার্স বললেন, আত্মহত্যা করা মহাপাপ।
মার্কহোয়াটারের ক্ষেত্রে পাপ নয়। সে বলল যে, সে মালিকের গাড়িতে করে কারখানায় যাচ্ছিল। মালিক এ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে বসলো। তাকে বলা হলো ঘণ্টায় ৫০ কিমি চালাচ্ছিলেন কেন, কেন তিনি ৩০ কি.মি. চালাচ্ছিলেন না? উত্তরে তিনি বললেন, তাহলে নাকি ইনসুরেন্সের টাকা পাওয়া যাবে না। তিনি মিথ্যে সাক্ষ্য দেননি, উকিলের কাছে তিনি সত্য কথা বললেন, তার জন্য তার চাকরী চলে যায়। তার জন্য তার বন্ধুরা তাকে ত্যাগ করে এবং তাদেরই একজনের সঙ্গে ভাব হলে তার স্ত্রীও তাকে ত্যাগ করে। সেই দুঃখে সে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দেয়। সে বাঁচতে চায় না তবে কেন তাকে বাঁচানো হলো।
নার্স বললো, বাঁচা মরা সবই ঈশ্বরের হাতে। তিনিই বাঁচা মরার মালিক।
.
১৪ই ফেব্রুয়ারী
একলা ঘরে একটা কাগজের উপর সে সব প্ল্যান অনুযায়ী লিখে যাচ্ছিল। টেবিলের আলোয় সে মুখটি দেখা গেল না। সে মুখটি বড়ই নিষ্ঠুর সে শুধু প্রতিশোধ চায়। কাগজের উপর সে হত্যার প্ল্যান লিখে যাচ্ছিল। সেপ্টেম্বর মাসের একটা তারিখে সে হত্যা করবে। সে ফায়ার প্লেসের কাছে এগিয়ে গেল। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালাচ্ছিল। সেই আগুনের মধ্যে কাগজখানা সে নিক্ষেপ করল। আগুনের দিকে তাকিয়ে সে বললো, যাক সমস্ত প্রমাণ পুড়ে যাওয়াই ভলো। তার মাথার প্ল্যান কখনও পুড়ে ছাই হবে না।