সকলকে সম্বোধন করে বললেন, আওয়েন-রহস্যের একটা কিনারা হওয়া দরকার। আচ্ছা, রজার্স, এই লোকটি কে?
–পান্না দ্বীপের মালিক।
–তুমি নিশ্চই তাকে দেখেছ?
–না স্যার, মোটে এক সপ্তাহ হল আমি আর আমার স্ত্রী এসেছি। খবরের কাগজে বক্স নম্বর দেখে চাকরির দরখাস্ত করেছিলাম। একটা চিঠির মাধ্যমে আমাদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
সেই চিঠি অনুসারে আমরা এখানে এসে সব ঝেড়েঝুড়ে পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম।
তারপর আর একটা চিঠি এল, তাতে জানানো হল, অতিথিরা আসছেন, তাদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়।
গতকাল বিকেলে আর একটা চিঠিতে জানানো হল, ওঁরা আপাতত আসতে পারছেন না। আর ডিনার, কফি এবং রেকর্ড সম্পর্কেও তাতে নির্দেশ ছিল।
রজার্স পকেট থেকে একটা খাম বার করে মিঃ ওয়ারগ্রেভের দিকে বাড়িয়ে দিল।
একটা টাইপ করা চিঠি। তাতে ঠিকানা লেখা রয়েছে–বিৎস হোটেল।
আরও দু-একজন চিঠিটা দেখল। ওয়ারগ্রেভ বললেন, এখানে সকলেই আমরা আওয়েনের অতিথি। কিন্তু তিনি কে তা আমাদের ভালভাবে জানা দরকার। তাঁর সম্পর্কে কে কতটা জানেন তা জানা প্রয়োজন।
এমিলি বললেন, আমিই প্রথমে বলছি। গোড়া থেকেই ব্যাপারটা আমার খুব গোলমেলে ঠেকেছে। এক বান্ধবীর কাছ থেকে এখানে আসার আমন্ত্রণপত্র পাই। কিন্তু চিঠির তলায় নামটা ছিল অস্পষ্ট–ভালভাবে পড়া যাচ্ছিল না। তবে আওয়েন বলে কাউকে আমি চিনি না।
এরপর ভেরা জানাল, সে এখানে সেক্রেটারির নিয়োগপত্র পেয়ে এসেছে।
মার্সটন জানাল, বার্কলে বলে আমার এক বন্ধু থাকে নরওয়েতে। কিন্তু আশ্চর্য হল, তার চিঠিতে এখানকার চাকরির ব্যাপারটা জানতে পারি।
ডাক্তার বললেন, আওয়েন বলে কাউকে আমি চিনতাম না। তবে আমার পেশার ব্যাপারে কল পেয়েই এখানে এসেছি।
জেনারেল ডগলাস জানালেন, আওয়েনের একটা চিঠি আমি পাই। তাতে জানানো হয়েছিল, এখানে এলে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে।
লমবার্ড বললেন, এরকম একটা চিঠি আমিও পেয়েছিলাম। জানানো হয়েছিল, আমার পুরনো বন্ধুরা আসছেন, আপনিও এলে আনন্দ হবে।
বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ চুপ করে সকলের কথা শুনলেন। পরে ব্লোরের দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা অজ্ঞাত কণ্ঠস্বর আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শুনিয়েছে। সেসব সত্যি কি মিথ্যা তা অবশ্য যাচাইয়ের প্রশ্ন।
তবে, একটা বিচিত্র ব্যাপার হল যে একমাত্র উইলিয়াম হেনরি ব্লোরের নামেই কোন অভিযোগ নেই। এই নামে আমাদের মধ্যে কেউ নেই–একজন আছেন মিঃ ডেভিস বলে। তার নামও এই অপরাধের তালিকায় নেই।
ব্লোর একথার প্রতিবাদ জানিয়ে বলল, আমার নাম ডেভিস নয়—
তাহলে আপনি উইলিয়াম হেনির ব্লোর?—
হ্যাঁ।
লমবার্ড সঙ্গে সঙ্গে ব্লোরের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ম গলায় বলল, তুমি বলেছিলে, দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাটাল থেকে এসেছ। আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছি। আমার ধারণা, তুমি ন্যাটাল বা দক্ষিণ আফ্রিকায় জীবনে যাওনি।
সকলের দৃষ্টি ব্লোরের দিকে ঘুরল। ক্রুদ্ধ সে দৃষ্টি। মার্সটন তো ঘুসি বাগিয়েই এগিয়ে এল।
ব্লোর সকলের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে আপনারা শুনুন, আমার পরিচয়পত্র সঙ্গেই রয়েছে। আমি আগে পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগে ছিলাম। এখন আমি প্রাইভেট গোয়েন্দা। এখানে সেই কাজ নিয়েই এসেছি।
–আপনাকে কে আসতে বলেছে?
–মিঃ আওয়েন। মনিঅর্ডারে মোটা টাকার পারিশ্রমিক পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন, আপনাদের ওপর নজর রাখার জন্য।
–নজর রাখতে? কিন্তু কেন?
–যাতে মিসেস আওয়েনের মূল্যবান গয়নাগাঁটি খোয়া না যায়। এখন বুঝতে পারছি, সবই ভাঁওতা, ও নামে এখানে কেউ নেই।
ভেরা বলল, যদি থাকেও, বদ্ধ পাগল ছাড়া কিছু নয়।
মিঃ ওয়ারগ্রেভ বললেন, তবে তাকে ভয় করবার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই আমার মনে হচ্ছে।
.
০৪.
হঠাৎ করে সকলেই কেমন নীরব হয়ে যায়। যেন হতাশায় বিমর্ষ হয়ে পড়েছে।
নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করলেন বিচারপতি ওয়ারগ্রেভ। বললেন, আমি কেন এখানে এসেছি এবারে বলি।
বলে পকেট থেকে একটা খাম বার করে তিনি টেবিলে রাখলেন। তার ভেতরের চিঠিটা বার করে সকলকে দেখিয়ে বললেন, কয়েকদিন আগে এটা পেয়েছি, লিখেছেন লেডি কনস্টান্স কালমিংটন।
তিনি আমার বিশেষ পরিচিত হলেও বেশ কয়েক বছর কোন যোগাযোগ নেই। এই চিঠিটা ভুয়ো বলে প্রমাণিত হয়েছে। আপনারাও এরকম চিঠি একটা করে পেয়েছেন। যে বা যারা এই চিঠি পাঠানোর পেছনে রয়েছে, বোঝা যাচ্ছে তারা আমাদের ব্যাপারে অনেক খবরাখবর জোগাড় করেছে।
তাই অপরাধগুলো একে একে আমাদের সবার ঘাড়ে চাপিয়েছে।
জেনারেল ডগলাস সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, এসবই মিথ্যা কথা।
–একটা বদমাশ লোকের কারসাজি এসব। ভেরা চিৎকার করে বলে।
পরপর সকলেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। ওয়ারগ্রেভ হাত তুলে সকলকে থামতে অনুরোধ জানালেন। পরে বললেন, আমি আমার নিজের কথাই প্রথমে বলি শুনুন।
এই অজানা বন্ধুটি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে জনৈক এডওয়ার্ড সেটনের মৃত্যুর জন্য নাকি আমি দায়ী।
ঘটনাটা বললেই আপনারা বুঝতে পারবেন আমি দোষী কি নির্দোষ। ১৯… জুন মাসে আমার এজলাসে লোকটির বিচার হয়। বয়স্কা এক নারীকে হত্যা করেছিল সে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে সে জোরালো যুক্তি দিয়েছিল, জুরীরাও যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিলেন।