–কে মিস আওয়েন? বলে ওঠেন মিস এমিলি, ওরকম কোনো নাম আমার মনেই পড়ছে না। অথচ–
এমন সময় রজার্স কফি নিয়ে ঘরে ঢুকল। আপাততঃ আওয়েন প্রসঙ্গ চাপা পড়ল। সকলে কফি নিয়ে বসলেন।
ঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত নটা ঘোষণা হল। সকলেই চুপচাপ। কফি পান করছেন নিঃশব্দে। ডাঃ আরমস্ট্রং বারবার তাকাচ্ছে পুতুলগুলোর দিকে।
সহসা বাতাসের দাপাদাপি থেমে যায়। কেমন থমথমে হয়ে ওঠে ঘরের পরিবেশ। যেন এখুনি ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে। যেন তারই প্রতীক্ষা করছে সকলে।
তা কিন্তু ঘটলও। সহসা নিস্তব্ধতা খানখান করে দিয়ে একটা অজানা গম্ভীর কণ্ঠস্বর শূন্যে ভেসে এল
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমোদয়গণ শুনুন। আপনাদের সকলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। একে একে বলে যাচ্ছি–
(১) এডওয়ার্ড জর্জ আরমস্ট্রং–আপনি ১৪ই মার্চ ১৯… লুইসা মেরি ক্লেসের মৃত্যু ঘটিয়েছেন।
(২)। এমিলি ক্যারোলাইন ব্রেনট–আপনি ৫ই নভেম্বর … বিয়াত্রিচে টেলর-এর মৃত্যুর জন্য দায়ী।
(৩) উইলিয়াম হেনরি ব্লোর–আপনি ১০ই অক্টোবর … জেমস স্টিফেন ল্যান্ডার-এর মৃত্যু ঘটিয়েছেন।
(৪) ভেরা এলিজাবেথ ক্লেথর্ন–আপনি ১১ই আগস্ট … সিসিল অগিলভি হ্যামিল্টনকে হত্যা করেছেন।
(৫) ফিলিপ লমবার্ড–আপনি … ফেব্রুয়ারি, আফ্রিকায় একুশজন লোকের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
(৬) জন গর্ডন ডগলাস–৪ঠা জানুয়ারি …, আপনি আপনার স্ত্রীর প্রণয়ী রিচমণ্ডকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন।
(৭) অ্যান্টনি জেমস মার্সটন–আপনি ১৩ই নভেম্বর … জন লুসি ও কোম্বের হত্যার জন্য দায়ী।
(৮) ও (৯) টমাস রজার্স ও এথেল রজার্স–তোমরা, ৬ই মে … জেনিফার ব্র্যাডির মৃত্যুর কারণ।
(১০) লরেন্স জন ওয়ারগ্রেভ–১০ই জুন, আপনি এডওয়ার্ড সেটনকে হত্যার অপরাধে অপরাধী।
অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ, আত্মপক্ষ সমর্থনে আপনাদের কোন বক্তব্য আছে কি?
.
যেমন আচমকা কথাগুলো শুরু হয়েছিল, তেমনি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে রজার্স কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ল। ঘরের বাইরে একটা আর্তনাদ আর কিছু পড়ে যাবার শব্দ শোনা গেল।
লমবার্ড দৌড়ে বাইরে এসে দেখল, রজার্সের স্ত্রী এথেল অচেতন হয়ে পড়ে আছে। লমবার্ড ও এমিলি দুজনে ধরাধরি করে তাকে সোফায় নিয়ে শুইয়ে দিল।
ডাঃ আরমস্ট্রং এগিয়ে এসে পরীক্ষা করলেন। বললেন, ভয় নেই, অজ্ঞান হয়ে গেছে, এখুনি ঠিক হয়ে যাবে।
লমবার্ড ব্র্যান্ডি আনতে ছুটল। ভেরা চিন্তিতভাবে বলল, এভাবে কে কথা বলল?
ডগলাস বলল, নিশ্চয়ই মশকরা করেছে। কিন্তু বড্ড বিশ্রী। স্বর কাঁপছে তার।
ব্লোর কপালে ঘাম জমে উঠেছিল। রুমাল দিয়ে তা মুছল। তবে সে বিচলিত হয়নি। ওয়ারগ্রেভ এবং এমিলির মধ্যেই কেবল কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।
লমবার্ড সাহসের সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বারান্দাটা খুঁজল, কিন্তু কাউকে কোথাও দেখতে পেল না।
একপাশে একটা ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। আর তখনই রহস্যটা ধরা পড়ে গেল।
–এই তো দেখছি। আনন্দে লাফিয়ে উঠে লমবার্ড ঘরে ঢুকে পড়ল। এমিলি ছাড়া সকলেই সেখানে ছুটে গেল।
ঘরে একটা টেবিল। তার ওপরে চোঙাওয়ালা একটা সেকেল গ্রামাফোন। তাতে একটা রেকর্ড চাপানো রয়েছে। চোঙার মুখ দেওয়ালের দিকে। তাই ঘরের দেওয়ালের ওপারেই বসার ঘর, বেশ কয়েকটা ফুটো রয়েছে দেওয়ালে।
পিনটা রেকর্ডের ওপর রেখে চালাতেই আবার আগের কথাগুলো বেজে উঠল।
–সর্বনাশ, বন্ধ করুন। ভেরা চেঁচিয়ে ওঠে।
লমবার্ড সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়। ডাক্তার হেসে বললেন, ঠাট্টা বটে তবে খুবই নিকৃষ্ট শ্ৰেণীর।
–কিন্তু চালালো কে?
সকলে আবার বসার ঘরে ফিরে গেল। রজার্স ইতিমধ্যে ব্র্যান্ডি নিয়ে এসেছে। তার স্ত্রীর সেবা করছেন এমিলি। সে এখন কথা বলতে পারছে। তার সারা মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
রজার্স বলে, এথেল, ভয় পাবার কিছু নেই। এটা খুবই বাজে একটা ব্যাপার।
–কিন্তু কী ভয়ঙ্কর সেই স্বর। কাঁপা গলায় বলে এমিলি।
ডাক্তার খানিকটা ব্র্যান্ডি এথেলের গলায় ঢেলে দেন। সে চাঙা হয়ে উঠতে থাকে।
–কী সাংঘাতিক সব মিথ্যা কথা। আমিও ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বলল রজার্স।
–কিন্তু রেকর্ডটা বাজাল কে?
রসার্জ কাঁপা কাঁপা স্বরে জানায়, মিঃ আওয়েনের নির্দেশেই এটা করা হয়েছে।
–কি নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি?
–বলেছেন, আপনারা সকলে যখন কফি পান করবেন, সেই সময় গ্রামাফোনে রেকর্ডটা চাপিয়ে চালিয়ে দিতে। কাজের ভার দিয়েছিলেন আমার স্ত্রীকে।
মিঃ ওয়ারগ্রেভ রেকর্ডটা তুলে তার গায়ের লেখাটা পড়ে বললেন, একটা গানের রেকর্ড দেখছি। বেলা শেষের গান।
সকলে একই সঙ্গে কথাটার পুনরাবৃত্তি করে উঠল।
.
ডগলাস বলে উঠলেন, লোকটা দেখছি মোটেই সুবিধের নয়। তাকে একটা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।
–কিন্তু আওয়েন লোকটা কে? এমিলি তিক্ত স্বরে জানতে চাইলেন।
–ঠিক বলেছেন, লোকটার খবরাখবর জানা দরকার। রজার্স তুমি তোমার স্ত্রীকে শুইয়ে দিয়ে এসো। তোমার সঙ্গে দরকারী কথা আছে। বললেন ওয়ারগ্রেভ।
ডাক্তার রজার্সকে সাহায্য করলেন। তাদের দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে এমিলি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ডাক্তার একটু পরেই ফিরে এসে জানালেন, এথেল ভাল আছে। তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে এলাম।
রজার্সও ঘরে ঢুকল প্রায় তার পেছন পেছন।
বয়স এবং পদমর্যাদায় মিঃ ওয়ারগ্রেভই ছিলেন প্রধান। আলোচনা সভার পরিচালনার দায়িত্ব তিনিই নিলেন।