–সাহায্য-সংকেত কবে পাওয়া গিয়েছিল?
–১৩ তারিখেই পেয়ে ছিল। কিন্তু সমুদ্র অশান্ত থাকায় সেদিন যেতে পারেনি। পরদিন সকালে আবার সংকেত পাওয়া যায়। সাহায্যকারীরা বিকেলে সেখানে গিয়েছিল।
-এই দলটা এখানে পৌঁছনোর আগেই হত্যাকারী সাঁতরে ডেভনে পৌঁছে পালিয়ে গেছে কিনা খবর নেওয়া হয়েছিল?
-সাঁতরে পালানো অসম্ভব ছিল স্যার। কেননা সমুদ্র ছিল অশান্ত।
টমাসের মুখ ক্রমশই গম্ভীর হয়ে পড়ছিল। খানিকক্ষণ তিনি চুপ করে থেকে কি ভাবলেন। পরে বললেন, ওই গ্রামাফোনের ব্যাপারে কিছু জানা সম্ভব হয়েছে?
-হ্যাঁ স্যার।
–ওটা কিভাবে করা হয়েছিল?
করিয়েছিল মরিস। সিনেমা-থিয়েটারের কাজ করে এমন একটা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে।
-ওই রেকর্ডে যে অপরাধগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছিল?
–হ্যাঁ স্যার। রজার্স দম্পতি মিসেস ব্র্যাডি নামে এক ভদ্রমহিলার বাড়ি কাজ করতো। ওদের অবহেলাতেই নাকি তিনি মারা যান।
–এরপর আছে বিচারপতি ওয়ারগ্রেভের নাম।
-হ্যাঁ ওই নামটা আমি সেটন মামলায় শুনেছি। সে লোকটা দোষ করেছিল ঠিকই, তবে … যাক তারপর?
–ভেরা নামে একটি মেয়ে একবাড়িতে গভর্নেসের কাজ করতো। সেই বাড়ির ছোট্ট ছেলেটি সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যায়। তাতে ভেরার কোন হাত ছিল না। মেয়েটি নিজের জীবন বিপন্ন করে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটিকে ওই বাড়ির সকলেই ভালবাসতো।
-তারপর?
ডাঃ আরমস্ট্রং-এর কথা বলছি। তার চেম্বার ছিল হার্লে স্ট্রীটে। মাঝারি বয়েস। তবে পসার জমেছিল ভাল।
তারই চেম্বারে অপারেশন টেবিলে একটি মেয়ে মারা যায়। তাতে অবশ্য ডাক্তারের কোন হাত ছিল না। সার্জেনদের হাতে এমন দু-চারটে কেসতো ঘটেই।
এরপর স্যার মিস এমিলি ব্রেনটের কথা বলছি। তার বাড়িতে কাজ করত অবিবাহিতা একটি মেয়ে। বিয়াত্রিচে টেলর তার নাম।
বিয়ের আগেই মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হয়েছিল। একথা জানতে পেরে গৃহকর্ত্রী তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। পরে মেয়েটি আত্মহত্যা করে।
মেয়েটিকে এই অবস্থায় তাড়িয়ে দেওয়াটা অমানবিক কাজ হয়েছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আইনের চোখে মিস এমিলি কোন অপরাধ ওখানেই।
–যা দেখছি, তোমার ওই আওয়েন খুঁজে খুঁজে এমন কয়েকটি কেস বার করেছিল যারা আইনের চোখে অপরাধী হয়নি। মনে হচ্ছে, রহস্যের মূল সূত্রটা করেননি।
মেন আবার তার তালিকা থেকে বলতে শুরু করলেন, মাস্টান বলে যে ভদ্রলোক, তিনি জোরে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুটো বাচ্চাকে চাপা দিয়েছিলেন। সেজন্য অবশ্য তাকে অর্থদন্ড দিতে হয়েছিল।
এরপর হল জেনারেল ডগলাস। তার সার্ভিস রের্কড খুব ভাল। তার অধীনে কাজ করতে রিচমন্ড–সে একজন অফিসার। ফ্রান্সের যুদ্ধে সে মারা যায়। জেনারেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল খুব ভাল। যুদ্ধক্ষেত্রে তো কমান্ডিং অফিসারদের ভুলে অনেক প্রাণহানী ঘটে থাকে। রিচমন্ডের মৃত্যুও ছিল এমন একটা ঘটনা।
-হ্যাঁ, খুবই সম্ভব।
–এরপরে হল ব্লোর, সে এককালে পুলিসে কাজ করত।
–হ্যাঁ ওকে আমি চিনতাম, টমাস বলেন, খুব একটা কাজের ছিল না। তবে কায়দাকানুন করে কয়েকটা প্রমোশন বাগিয়েছিল। একটা রিপোর্টে খুব গোলমাল করে ফেলেছিল–ল্যান্ডুর কেস। তার ওপরেই তদারকির দায়িত্ব ছিল।
অনেকের ধারণা তদন্তে ফাঁক রেখেছিল ইচ্ছে করেই। যোগ্যতাও তো তেমন ছিল না। বেশ, তারপর বলে দাও।
মেন বলতে শুরু করল, পরের নামটি হল, ফিলিপ লমবার্ড। ডাকাবুকো ধরনের লোক ছিল। অনেক দেশ ঘুরেও ছিল। তবে কোন বেআইনী কাজের রিপোের্ট নেই।
-আচ্ছা, সেই মরিস লোকটা তো মারা গেছে বললে, তাই না?
–হ্যাঁ, স্যার। গত ৮ই আগস্ট। বেশি মাত্রায় ওষুধ খেয়েছিল।
–সেটা কি আত্মহত্যা?
–সেটা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
টমাস গভীর স্বরে বললেন,ব্যাপারটা তো খুব জটিল দেখতে পাচ্ছি। একজন দুজন নয়, দশ-দশটা লোক খুন হল, অথচ কে তাদের খুন করল, কেন করল, সেসব কিছুই জানা যাচ্ছে না-ভারী আশ্চর্য ব্যাপার।
–স্যার, একটা কথা বলতে চাই
–স্বচ্ছন্দে,
–কে এই হত্যাকান্ডের নায়ক তা জানা না গেলেও হত্যার কারণটা অনুমান করা যায়। গ্রামাফোন রেকর্ডের কথা, নিহত ব্যক্তিদের নামধাম ইত্যাদি পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে, কোন এক ব্যক্তির মাথায় ন্যায় বিচার সম্পর্কে বাতিক চেপেছিল। তার সঙ্গে মিশেছিল জিঘাংসা বৃত্তি। কিছু কিছু লোকের অপরাদের কথা সে জানত অথচ আইনের চোখে তারা অপরাধী প্রতিপন্ন হয়নি। সেই থেকেই সে ঠিক করে নিয়েছিল নিজেই ঈশ্বর সাজবে। এ একধরনের পাগলামোও বলা চলে।
খুঁজে খুঁজে এমনি দশজনের নাম সে সংগ্রহ করেছিল, আইন যাদের শাস্তি দিতে পারেননি তবে এই দশজন সত্যিকারের অপরাধী কিনা, তা বিচার সাপেক্ষ।
-এবার মনে হয় রহস্যের সূত্রটা পাওয়া যাচ্ছে । হুঁ, তারপর?
–আওয়েন স্থির করেছিল, এই দশজন লোককে প্রাণদন্ড দেবে। তারপর সুপরিকল্পিতভাবে ওদের পান্না দ্বীপে এনে একে একে হত্যা করে উধাও হয়ে যায়।
–কিন্তু আওয়েন পালালো কিভাবে?
–এই ক্ষেত্রে আমরা দুটো সিদ্ধান্তে আসতে পারি।
–যেমন–
–হয় আওয়েন আদৌ দ্বীপে অনুপস্থিত ছিল, নয়তো নিহত দশজনের মধ্যে সে নিজেও একজন।
ওই দ্বীপে কি হয়েছিল, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে অনেকেরই টুকটাক লেখা বা ডায়েরি পাওয়া গেছে। ভেরা, এমিলি ওয়ারগ্রেভ এবং ব্লোর এর বিভিন্ন লেখার মধ্যে কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।